কোরআনুল কারিম হিফজ করার ফজিলত
কোরআনের হাফেজগণ দুনিয়াতে কোরআনুল কারিম সবচেয়ে বেশি তেলাওয়াত করে থাকেন। তাই তাদের মর্যাদাও ঈর্ষান্বিত। কোরআন হেফজকারী পবিত্র ফেরেশতাদের শ্রেণিভুক্ত। হাদিসে কোরআনের হেফাজতকারীদের অনেক মর্যাদা ও ফজিলতের কথা ওঠে এসেছে। তাহলো-
১. দ্বিগুণ সওয়াব
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোরআনের হাফেজ, যিনি সবসময় তেলাওয়াত করেন তার তুলনা, লেখার কাজে নিয়োজিত পবিত্র সম্মানিত ফেরেশতাদের মতো। আর অতিকষ্ট হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি বারবার কোরআন তেলাওয়াত করে, তার পুরস্কার দ্বিগুণ।’ (বুখারি)
২. শয়তান থেকে ঘর নিরাপদ থাকে
সাধারণত হাফেজ ও হিফজ-শাখার ছাত্ররা সবচেয়ে বেশী কোরআন তিলাওয়াত করেন, তাই তাদের ঘর শয়তান থেকে নিরাপদ থাকে। কারণ, নবিজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لاَ تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ مَقَابِرَ، إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ البَيْتِ الَّذِي تُقْرَأُ فِيهِ سُورَةُ البَقرَةِ
‘তোমাদের ঘরগুলোকে তোমরা কবরে পরিণত করো না, নিশ্চয় সে ঘর থেকে শয়তান পলায়ন করে, যেখানে সূরা বাকারাহ পাঠ করা হয়।’ (মুসলিম)
৩. হাফেজগণ আল্লাহর পরিবার ভুক্ত
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِنَّ لِلَّهِ أَهْلِينَ مِنَ النَّاسِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ هُمْ قَالَ " هُمْ أَهْلُ الْقُرْآنِ أَهْلُ اللَّهِ وَخَاصَّتُهُ
‘নিশ্চয়ই মানুষদের থেকে আল্লাহর কতক পরিবার (নিজস্ব লোক) রয়েছে, তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল তারা কারা? তিনি বললেন, তারা আহলে কোরআন, আল্লাহর পরিবার ও তার বিশেষ ব্যক্তিবর্গ।’ (ইবনে মাজাহ)
কোরআনুল কারিমের হাফেজ আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত, একজন মুসলিমের হিফজ হওয়ার জন্য এ প্রেরণাই যথেষ্ট, এটা তাদের প্রতি আল্লাহর মহান অনুগ্রহ।
৪. হাফেজগণ সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহারকারী
নবিজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: شَبَابَكَ قَبْلَ هِرَمِكَ، وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ، وَغِنَاءَكَ قَبْلَ فَقْرِكَ، وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ، وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ
‘পাঁচটি বস্তুকে পাঁচটি বস্তুর আগে গণিমত মনে কর: তোমার যৌবনকে তোমার বার্ধক্যের আগে; তোমার সুস্থতাকে তোমার অসুস্থতার আগে; তোমার সচ্ছলতাকে তোমার অভাবের আগে; তোমার অবসরতাকে তোমার ব্যস্ততার আগে এবং তোমার জীবনকে তোমার মৃত্যুর আগে।’
আহলে-কোরআন কখনো তেলাওয়াত করেন, কখনো হিফজ করেন, কখনো গবেষণা করেন, কখনো তার উপর আমল করেন। এভাবে তারা প্রতি মুহূর্তের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারেন।
৫. জান্নাতের সুসংবাদ ও সুপারিশ
যে হাফেজে কোরআন যাবিত জীবনে হালাল-হারাম মেনে চলে তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করবে ও একে হেফজ করবে এবং এর যাবতীয় হালাল বিষয়কে হালাল ও হারাম বিষয়কে হারাম মেনে চলবে, আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। শুধু তাই নয়, তার পরিবারের এমন ১০ ব্যক্তির ব্যাপারে তার সুপারিশ কবুল করবেন, যারা জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত হয়েছে।’ (তিরমিজি ২৯০৫, ইবনে মাজাহ)
৬. প্রতিটি আয়াতের সুউচ্চ মর্যাদা
কেয়ামতের দিন কোরআন মুখস্থকারীকে প্রতিটি আয়াতের বিপরীতে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতে কোরআন পাঠকারীকে বলা হবে কোরআন পাঠ করতে থাকো আর ওপরে চড়তে থাকো। তুমি দুনিয়াতে যেভাবে ধীরেসুস্থে পাঠ করতে, সেভাবে পাঠ করো। তোমার তেলাওয়াতের শেষ আয়াতেই (জান্নাতের উঁচুতে) তোমার বাসস্থান হবে’ (আবু দাউদ ১৪৬৪, তিরমিজি)।
কোরআনের হাফেজরা জান্নাতে বিশেষ স্থান লাভ করবে। যে হাফেজের অন্তরে কোরআন সংরক্ষিত, তার জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতে বিশেষ স্থান নির্ধারণ করে রেখেছেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নদীর ওপরে মারজান নামক একটি শহর রয়েছে, যা সত্তর হাজার সোনা-রুপা দ্বারা প্রস্তুত, যা একমাত্র কোরআনের হাফেজদের জন্য নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে।’ (কানযুল উম্মাল)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন হিফজ করার তাওফিক দান করুন। তারতিলের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত ও এর ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম