প্রথম পর্ব শুরু ১৩ জানুয়ারি
বিশ্ব ইজতেমার ৯৫ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন
করোনা মহামারির কারণে দু-বছর বন্ধ থাকার পর এবারও জানুয়ারিতে তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামী ১৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্ব। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে টঙ্গীর তুরাগ তীরে চলছে জোর প্রস্তুতি। এরই মধ্যে ইজতেমা ময়দানের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে আয়োজক সূত্র।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তীব্র শীতে উপেক্ষা করে স্বেচ্ছায় কাজ করেছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মুসল্লিরা।ইজতেমায় আগত বিদেশি মেহমানদের জন্য টিন দিয়ে তৈরি তাঁবু নির্মাণ করা হচ্ছে। মুসল্লিদের সুবিধার্থে ময়দানের চারপাশে কাঁচা-পাকা টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ময়দানে এসে ইজতেমার প্রস্তুতিমূলক পর্যালোচনা সভায় যোগ দেন। সেখানে তিনি আইনশৃঙ্খলাসহ ইজতেমা সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় প্রস্তুতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন>> বিশ্ব ইজতেমা শুরু ১৩ জানুয়ারি, হবে দুই পর্বে
তিনি বলেন, ইজতেমার প্রথম পর্ব পরিচালনা করবেন জোবায়ের গ্রুপ আর দ্বিতীয় পর্ব সাদ গ্রুপ। দুই গ্রুপের মধ্যে নতুন করে কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার কিছু নেই।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইজতেমা ময়দানের বিভিন্ন দিক নিয়ে দফায় দফায় পর্যালোচনা করেছেন। মুসল্লিদের নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য নানা পরিকল্পনা করছেন। বিশেষ করে টঙ্গী ব্রিজ থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে সবধরনের যানবাহনকে দ্রুত পার করে দেওয়াটাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন।
ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুরের টঙ্গীতে ১৬০ একরের বিস্তৃত ময়দানে বিশাল শামিয়ানা টানানোর কাজ প্রায় শেষ। তুরাগ নদে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তৈরি করছে পল্টুন। যা দিয়ে সাময়িকভাবে মুসল্লিরা এপার থেকে ওপার যাতায়াত করতে পারবেন। বিশাল ময়দানে খিত্তাভিত্তিক চলছে মাইক বাঁধা এবং বৈদ্যুতিক তার ও বাতি টানানোর কাজ।
ময়দানে আগত মুসল্লিদের তুরাগ নদ পারাপারের জন্য ময়দানের পশ্চিম পাশে নদের ওপর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হচ্ছে ভাসমান সেতু (পন্টুন)। এ ছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১২টি নলকূপের মাধ্যমে ১২ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। অজু-গোসলের হাউস নির্মাণসহ পাকা দালানে প্রায় সাড়ে আট হাজার অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। ময়দানের চাহিদা মোতাবেক ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ ও ২৫টি ফগার মেশিনে মশকনিধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গাজীপুরের বাসন সড়ক থেকে আসা মুসল্লিা সাইফুল ইসলাম বলেন, আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য মেহনত করতে ময়দানে এসেছি এবং স্বেচ্ছায় কাজ করছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে আবার বাড়িতে ফিরে যাবেন।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার মুসল্লি আরাফাত রহমান বলেন, তারা ১০ জনের একটি টিম ইজতেমা ময়দানে কাজ করতে এসেছেন। দুপুরে ময়দানেই রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করেন।
ইজতেমা ময়দানের মুরব্বি মাহফুজুর রহমান বলেন, বিশ্ব ইজতেমার সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। আগামী ১৩ জানুয়ারি ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা জেলাওয়ারি খিত্তায় অবস্থান করবেন। প্রতিবছরের মতো এবারও উর্দু ভাষায় বয়ান করা হবে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বয়ানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ও আরবি ভাষায় তরজমা করা হবে।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ঢাকা থেকে এ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করবে। রোগী পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত পানি ছিটানো, মশার ওষুধ দেওয়া, পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া মুসল্লিদের যেকোনো সমস্যার সমাধানে সার্বক্ষণিক একাধিক টিম কাজ করবে।
জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় সাড়ে সাত হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া বিশেষায়িত টিমসহ প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রতি খিত্তায় এবার দুটি করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা হবে। তুরাগে নৌ টহলে থাকবে।
মো. আমিনুল ইসলাম/এমএএইচ/