ইদ্দত কতদিন পালন করতে হয়?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৩৪ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২২

স্বামীর মৃত্যু কিংবা বিবাহ বিচ্ছেদে নারীকে কত দিন ইদ্দত পালন করতে হবে? ইদ্দত পালনকালে তাকে কি স্বামীর বাড়িতেই অবস্থান করতে হবে? এ সময়ে সে কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যেতে পারবে কি? ইদ্দত পালনকালে সে কি তার পরিহিত অলঙ্কার খুলে রাখবে?

ইদ্দত কী?

ইদ্দত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- গণনা করা। পরিভাষায় ইদ্দতের অর্থ হলো- নারীদের ওই সময় পর্যন্ত অন্যত্র বিয়ে করা থেকে বিরত থাকা, যা তার ইতোপূর্বের বিবাহের প্রভাব প্রকাশ করে। যেমন- সে অন্তসত্ত্বা কি না তা প্রকাশের সম্ভাবনা শেষ হওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইদ্দত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বললে, স্বামী যদি নারীকে তালাক দেয় বা খোলা করে, কিংবা ঈলা ইত্যাদি করে বা কোনোভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে অথবা স্বামী মারা যায়, তাহলে এসব সুরতে কিছুদিনের জন্য নিজেকে ঘরে আবদ্ধ রাখা। সেই সময়ের মধ্যে ওই ঘর থেকে জরুরি কোনো কারণ ছাড়া বের না হওয়া এবং অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়াকে ইদ্দত বলা হয়।

তালাক কিংবা স্বামীর মৃত্যু যে কারণেই নারীর বিবাহ বিচ্ছেদ হলেই নারীর ওপর ইদ্দত পালন করা আবশ্যক।

তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে নারীকে তিন হায়েজ পরিমাণ পালন করতে হবে। যদি হায়েজ (অপবিত্রতা ও পবিত্রার ধারা অব্যাহত) থাকে। আর যদি হায়েজ না থাকে, তাহলে তিন মাস পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ الۡمُطَلَّقٰتُ یَتَرَبَّصۡنَ بِاَنۡفُسِهِنَّ ثَلٰثَۃَ قُرُوۡٓءٍ ؕ وَ لَا یَحِلُّ لَهُنَّ اَنۡ یَّکۡتُمۡنَ مَا خَلَقَ اللّٰهُ فِیۡۤ اَرۡحَامِهِنَّ اِنۡ کُنَّ یُؤۡمِنَّ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ وَ بُعُوۡلَتُهُنَّ اَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ اِنۡ اَرَادُوۡۤا اِصۡلَاحًا ؕ وَ لَهُنَّ مِثۡلُ الَّذِیۡ عَلَیۡهِنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ۪ وَ لِلرِّجَالِ عَلَیۡهِنَّ دَرَجَۃٌ ؕ وَ اللّٰهُ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ

‘তালাকপ্রাপ্ত নারীরা তিন মাসিক পর্যন্ত প্রতীক্ষা করবে এবং তাদের পক্ষে জায়েজ নয় সে বস্তু গোপন করা যা তাদের পেটে আল্লাহ সৃজন করেছেন, যদি তারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে। তাদের স্বামীরা তাদের উক্ত সময়ের মধ্যে পুনঃগ্রহণে অধিক হকদার, যদি তারা আপস-নিষ্পত্তি করতে চায় এবং পুরুষদের ওপর নারীদেরও হাক্ব আছে, যেমন নিয়ম অনুযায়ী পুরুষদের নারীদের ওপরও হাক্ব আছে, অবশ্য নারীদের ওপর পুরুষদের বিশেষ মর্যাদা আছে এবং আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাশীল ‘ (সুরা বাকারা : আয়াত ২২৮)

আর কোনো নারীর স্বামী মারা গেলে ইদ্দতের সময়কাল চার মাস দশ দিন। তবে গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত। বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে বা স্বামী ইন্তেকালের পর থেকেই ইদ্দতের সময়কাল গণনা শুরু হয়। কোরআনে এসেছে-

وَ الَّذِیۡنَ یُتَوَفَّوۡنَ مِنۡکُمۡ وَ یَذَرُوۡنَ اَزۡوَاجًا یَّتَرَبَّصۡنَ بِاَنۡفُسِهِنَّ اَرۡبَعَۃَ اَشۡهُرٍ وَّ عَشۡرًا ۚ فَاِذَا بَلَغۡنَ اَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ فِیۡمَا فَعَلۡنَ فِیۡۤ اَنۡفُسِهِنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ

‘আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা মারা যাবে এবং স্ত্রীদের রেখে যাবে, তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন অপেক্ষায় থাকবে। অতঃপর যখন তারা ইদ্দতকাল পূর্ণ করবে, তখন তারা নিজেদের ব্যাপারে বিধি মোতাবেক যা করবে, সে ব্যাপারে তোমাদের কোনো পাপ নেই। আর তোমরা যা কর, সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক অবগত।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৩৪)

বিধবা নারীর ইদ্দতের সময় করণীয়

এ সময় বিধবা নারী স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করবে। একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবে না। অধিক সৌন্দর্য প্রকাশক কোনো পোশাক বা গহনা পরবে না। অলঙ্কার ব্যবহার করবে না। বিশেষ কারণ ছাড়া সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদিও ব্যবহার করবে না।

তবে স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীর নাকফুল খুলে রাখার রেওয়াজ অনেকটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ের হয়ে যায়। এটি তেমন কোনো সৌন্দর্য প্রকাশক অলঙ্কার নয়। বরং স্বাভাবিক সৌন্দর্যের মধ্যে পড়ে, যা গ্রহণীয়।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।