কোমলতার কী উপদেশ দিয়েছেন নবিজি (সা.)?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:২৭ পিএম, ০২ নভেম্বর ২০২২

কোমলতা মানুষের অন্যতম চারিত্রিক গুণ। এ গুণের কারণে মানুষ সব সময় অন্যের কাছে প্রশংসনীয়। শুধু মানুষই কোমলতার প্রশংসা করেনি, পবিত্র ধর্ম ইসলামে ওঠে এসেছে কোমলতার সৌন্দর্য, গুরুত্ব ও মর্যাদা। হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমলতার চমৎকার উপদেশ দিয়েছেন। কী উপদেশ দিয়েছেন নবিজি (সা.)?

কোমলতা মানুষের একটি বিশেষ গুণ। এটি নবুয়তি গুণও বটে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও কোমল ছিলেন। তিনি সব সময় ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী, মুসলিম-অমুসলিম, দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের সঙ্গে কোমল আচরণ করতেন। হাসিমুখে কথা বলতেন। তাঁর এমন আচরণের কথা ওঠে এসেছে কোরআনে বর্ণনায়-

فَبِمَا رَحۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ لِنۡتَ لَهُمۡ ۚ وَ لَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ ۪ فَاعۡفُ عَنۡهُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ وَ شَاوِرۡهُمۡ فِی الۡاَمۡرِ ۚ فَاِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُتَوَکِّلِیۡنَ

‘আল্লাহর রহমতে তুমি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলে; যদি তুমি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়তো। সুতরাং তুমি তাদের ক্ষমা করো এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং কাজকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো।’ (সুরা আলে ইমরান : আয়াত ১৫৯)

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ وَيُعْطِي عَلَى الرِّفْقِ مَا لَا يُعْطِي عَلَى الْعُنْفِ وَمَا لَا يُعْطِي عَلَى مَا سِوَاهُ

‘ আল্লাহ তাআলা নিজে কোমল, তিনি কোমলতাকে ভালোবাসেন। আর তিনি কোমলতার প্রতি যত অনুগ্রহ করেন, কঠোরতা এবং অন্য কোনো আচরণের প্রতি তত অনুগ্রহ করেন না।’ (মুসলিম ২৫৯৩, আবু দাউদ ৪৮০৭, ইবনে মাজাহ ৩৬৮৮

হাদিস গ্রন্থ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় এসেছে, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন-

عَلَيْكِ بِالرِّفْقِ وَإِيَّاكِ وَالْعُنْفَ وَالْفُحْشَ إِنَّ الرِّفْقَ لَا يَكُونُ فِي شَيْءٍ إِلَّا زَانَهُ وَلَا يُنْزَعُ مِنْ شَيْء إِلَّا شانه

‘কোমলতাকে নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও এবং কঠোরতা ও নির্লজ্জতা থেকে নিজেকে রক্ষা করো। কেননা যে জিনিসের মধ্যে নম্রতা ও কোমলতা থাকে সে নম্রতা ও কোমলতাই তার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কারণ হয়। আর যে জিনিসে কোমলতা থাকে না তা দোষণীয় হয়ে পড়ে।(মিশকাত ৫০৬৮)

কোমলতা ও নম্রতাকে মুমিনের অপরিহার্য গুণ বিবেচনা করে ইসলাম। কারণ একজন মানুষের মধ্যে যতক্ষণ পর্যন্ত বিনয়, নম্রতা ও কোমলতা না থাকবে, ততক্ষণ সে আল্লাহর গোলামি করতে পারবে না। আল্লাহর একনিষ্ঠ গোলামির জন্য বিনয়, নম্রতা ও কোমলতা অপরিহার্য শর্ত। এ কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন-

وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ هَوۡنًا وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الۡجٰهِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا

‘আর রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে কোমল-নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদেরকে সম্বোধন করে তখন তারা বলে ‘সালাম’।’ (সুরা ফোরকান : আয়াত ৬৩

নবি-রাসুলদের কোমলতার নমুনা

কোমলতা ও বিনয় নবিদের গুণ। পক্ষান্তরে অহঙ্কার ও কঠোরতা হলো শয়তানের বৈশিষ্ট্য। নবি-রাসুলগণ তাদের জীবনে কোমলতা ও বিনয়ের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।

হজরত আদম আলাইহিস সালাম

তিনি পৃথিবীর প্রথম মানব। আল্লাহর নির্দেশ ভঙ্গ করার পর আল্লাহর প্রশ্নের মুখে তিনি অহঙ্কার না করে বরং পুরোপুরি বিনয় ও কোমলভাবে আল্লাহর কাছে নিজের দোষ স্বীকার করে বলেছেন-

رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ اَنۡفُسَنَا وَ اِنۡ لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَ تَرۡحَمۡنَا لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা জালামনা আংফুসানা ওয়া ইল লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’

হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি, আপনি ক্ষমা ও দয়া না করলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)

হজরত নুহ আলাইহি সালাম

তিনি আল্লাহর রাসুল ছিলেন। নিজের কাফের ছেলের পক্ষে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে চাইলে আল্লাহ তাআলা তাকে সাবধান করে দেন। তখন নুহ আলাইহিস সালাম বিনয় ও কোমলতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন এভাবে-

رَبِّ اِنِّیۡۤ اَعُوۡذُ بِکَ اَنۡ اَسۡـَٔلَکَ مَا لَـیۡسَ لِیۡ بِهٖ عِلۡمٌ ؕ وَ اِلَّا تَغۡفِرۡ لِیۡ وَ تَرۡحَمۡنِیۡۤ اَکُنۡ مِّنَ الۡخٰسِرِیۡنَ

উচ্চারণ: রাব্বি ইন্নি আউজুবিকা আন্ আস্আলাকা মা-লাইসা লি বিহি ইলমুন; ওয়া ইল্লা তাগফিরলি ওয়া তারহামনি আকুম মিনাল খাসিরিন।

অর্থ : হে প্রভু! যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই; সে বিষয়ে চাওয়া থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না করো, দয়া না করো; তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তরর্ভূক্ত হয়ে যাবো। (সুরা হুদ : আয়াত ৪৭)

ইজরত ইউনুস আলাইহিস সালাম

হজরত ইউনুস আলাইহিস সালামের ঘটনাও সবাই জানে। নিজের অপরাধের জন্য  তাঁকে মাছের পেটে যেতে হয়েছে, সেখান থেকেই তিনি আল্লাহর কাছে বিনয় ও কোমলতার সঙ্গে বলেছেন-

فَنَادٰی فِی الظُّلُمٰتِ اَنۡ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنۡتَ سُبۡحٰنَکَ ٭ۖ اِنِّیۡ کُنۡتُ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ

উচ্চারণ : ... ‘লা ইলাহা ইল্লাহ আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।’

অর্থ :  তারপর সে অন্ধকার থেকে ডেকে বলেছিল, ‘আপনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয়ই আমি ছিলাম জালিম।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৭)

হজরত মুসা আলাইহিস সালামের কোমল ডাক

মুসা আলাইহিস সালাম যখন অনিচ্ছাকৃতভাবে একজন লোককে হত্যা করে, তখন নিজের সবটুকু বিনয় ও কোমলতা নিয়ে আল্লাহকে বলেছেন-

رَبِّ اِنِّیۡ ظَلَمۡتُ نَفۡسِیۡ فَاغۡفِرۡ لِیۡ

উচ্চারণ : ‘রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি’

অর্থ : ‘হে আমার রব! নিশ্চয়ই আমি আমার নফসের প্রতি জুলুম করেছি, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।’

হজরত মুসা আলাইহিস সালামের এ ক্ষমা প্রার্থনার পর মহান আল্লাহ ঘোষণা দেন-

فَغَفَرَ لَهٗ ؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ

‘এরপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)

এভাবেই নবীগণ যখনই ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সামান্য ভুল করে ফেলেছেন, সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে বিনয় ও কোমলতার সঙ্গে ক্ষমা চেয়েছেন; নিজেদের ভুলের পক্ষে কোনো যুক্তি প্রদর্শন করেননি; যেমনটি করেছিল শয়তান।

সুতরাং মানুষের উচিত, কোমল হওয়া। কোমলতার গুণে নিজেদের গড়া। কেননা মহান আল্লাহর কোমল। তিনি কোমলতাকে ভালোবাসেন। আর সব নবি-রাসুল ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণও ছিলেন কোমল।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নাহর ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। নিজেদের কোমল হিসেবে তৈরি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।