আল্লাহর দান বরকতময় ও স্থায়ী হয় যখন
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা শোকর আদায় করো- আমি তোমাদের আরও বাড়িয়ে দেব’ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন মহান আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতকে স্থায়ী ও বরকতময় করে দেওয়ার ঘোষণা এটি। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তার সাধারণ ও বিশেষ নেয়ামতগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আরও বলেন-
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ عَلَیۡکُمۡ ؕ هَلۡ مِنۡ خَالِقٍ غَیۡرُ اللّٰهِ یَرۡزُقُکُمۡ مِّنَ السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَاَنّٰی تُؤۡفَکُوۡنَ
‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর। তিনি ছাড়া কোনো সৃষ্টিকর্তা আছে কি যে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন থেকে রিজিক দান করে? তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তাহলে কীভাবে তোমরা বিপথগামী হচ্ছ?’ (সুরা ফাতির : আয়াত ৩)
তাহলে আল্লাহর দান ও নেয়ামতকে স্থায়ী ও বরকতময় করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহর সাহায্য ও তার শুকরিয়া আদায় করা। প্রতিটি কাজে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলই মহান আল্লাহ বান্দাকে তার দেওয়া নেয়ামত তথা দান বরকতময় ও স্থায়ী করবেন।
তাছাড়া আল্লাহ তাআলার ইবাদত ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ের দায়িত্ব পালন করতেই আল্লাহ তাআলা এসব নেয়ামত দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা আরও ঘোষণা করেন-
وَ مَا بِکُمۡ مِّنۡ نِّعۡمَۃٍ فَمِنَ اللّٰهِ ثُمَّ اِذَا مَسَّکُمُ الضُّرُّ فَاِلَیۡهِ تَجۡـَٔرُوۡنَ
‘আর তোমাদের কাছ যেসব নেয়ামত আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। এরপর দুঃখ-দুর্দশা যখন তোমাদের স্পর্শ করে তখন তোমরা শুধু তার কাছেই ফরিয়াদ করো।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৫৩)
আল্লাহ তাআলার দেওয়া কয়টি নেয়ামতের কথাই মানুষ জানে। মানুষের জীবনের অধিকাংশ নেয়ামতের কথাই তাদের জানা থাকে না। মানুষের অজান্ত মহান আল্লাহ মানুষকে অনেক নেয়ামত দিয়েছেন। এমনকি তিনি অসংখ্য বিপদ ও সংকট থেকে তাকে রক্ষা করেন। তার ডানে-বামে ও পেছনে আল্লাহর ফেরেশতারা নিয়োজিত। তারা তাকে আল্লাহর নির্দেশে রক্ষা করে। মানুষের কোনো ইচ্ছা ছাড়াই শরীরের অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার শরীর ও জীবনের উপকারার্থে কাজ করে যাচ্ছে। এ সবই মহান রবের পক্ষ থেকে নেয়ামত। তাইতো আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন-
وَ فِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ ؕ اَفَلَا تُبۡصِرُوۡنَ
‘আর তোমাদের নিজেদের অভ্যন্তরে (কি আছে) তোমরা কি চিন্তা করে দেখ না?’ (সুরা জারিয়াত : আয়াত ২১)
এ কারণেই মহান আল্লাহ মানুষের প্রতি আরও ঘোষণা দিয়েছেন-
وَ اٰتٰىکُمۡ مِّنۡ کُلِّ مَا سَاَلۡتُمُوۡهُ ؕ وَ اِنۡ تَعُدُّوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ لَا تُحۡصُوۡهَا ؕ اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَظَلُوۡمٌ کَفَّارٌ
‘তিনি তোমাদেরকে সে সব কিছুই দিয়েছেন যা তোমরা চেয়েছ (তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় সব কিছুই পেয়েছ) আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করতে চাইলে কখনো তার সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারবে না। মানুষ অবশ্যই বড়ই যালিম, বড়ই অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৪)
সুতরাং মানুষের জন্য আল্লাহর কাছে আত্মসমার্পন করার বিকল্প নেই। আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করাই মানুষের জন্য বড় কৃতজ্ঞতা। নেয়ামতকে বরকতময় ও স্থায়ী করতে সব সময় তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। তিনি কত মহান যে, সে কথাও তিনি কোরআনে তুলে ধরেছেন যাতে বান্দা ভুলে না যায়। মহান আল্লাহ কোরআনে বলেছেন-
وَ اللّٰهُ جَعَلَ لَکُمۡ مِّمَّا خَلَقَ ظِلٰلًا وَّ جَعَلَ لَکُمۡ مِّنَ الۡجِبَالِ اَکۡنَانًا وَّ جَعَلَ لَکُمۡ سَرَابِیۡلَ تَقِیۡکُمُ الۡحَرَّ وَ سَرَابِیۡلَ تَقِیۡکُمۡ بَاۡسَکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ یُتِمُّ نِعۡمَتَهٗ عَلَیۡکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تُسۡلِمُوۡنَ
‘আর আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, তা থেকে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং পাহাড় থেকে তোমাদের জন্য আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন, আর ব্যবস্থা করেছেন পোশাকের, যা তোমাদেরকে গরম থেকে রক্ষা করে এবং বর্মেরও ব্যবস্থা করেছেন যা তোমাদেরকে রক্ষা করে তোমাদের যুদ্ধে। এভাবেই তিনি তোমাদের উপর তার নেয়ামতকে পূর্ণ করবেন, যাতে তোমরা অনুগত হও।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৮১)
নেয়ামত মানুষকে যেন ধোঁকা না দেয়। তাকে অহংকারী করে না তোলো। এ নেয়ামত পেয়ে সে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ শয়তান তাকে যেন এ কুমন্ত্রণা না দেয়। তাইতো হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু হজরত মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লেখেন, ‘অনুগ্রহকারীর প্রতি অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তির সবচেয়ে ছোট দায়িত্ব হলো প্রাপ্ত নেয়ামতটিকে গোনাহের পথে কাজে না লাগানো। ’
নেয়ামতের শোকর আদায়ের মর্যাদার চেয়ে বিপদে ও সংকটে ধৈর্য ধরার মর্যাদা এবং মুসলিম ব্যক্তির ওপর পতিত নানা দুর্ভোগ ও কষ্টের অবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা করার মর্যাদা বেশি। এ স্তরের লোকদের সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশের জন্য ডাকা হবে। আল্লাহ তাআলঅ মানুষকে তার কৃতজ্ঞতা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন-
فَاذۡکُرُوۡنِیۡۤ اَذۡکُرۡکُمۡ وَ اشۡکُرُوۡا لِیۡ وَ لَا تَکۡفُرُوۡنِ
‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো। আমি তোমাদের স্মরণ করব। আর আমার শোকর আদায় করো। আমার অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫২)
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তোমরা আল্লাহর দেওয়া অসংখ্য নেয়ামতের জন্য তাকে ভালোবাসো। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের যেসব নেয়ামত দিয়েছেন সেজন্য তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস।’ (তিরমিজি)
মনে রাখতে হবে
আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান আনা সবচেয়ে বড় কৃতজ্ঞতা। এটাই হবে রেসালাতের শোকর, আল্লাহ যে কারণে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। এরপর অন্য সব নেয়ামতের শোকর আদায় করতে হবে। নেয়ামতের সবচেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা হলো- কোরআন ও সুন্নতের অস্বীকার করা। ইসলামকে অস্বীকার করে অন্য যে কোনো নেয়ামতের শোকর আদায় কোনো কাজে আসবে না।
আল্লহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার নেয়ামত স্থায়ী ও বরকতময় করতে নিয়মিত তার তাঁর শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম