জোহর-আসর নামাজের কেরাত আস্তে পড়তে হয় কেন?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:০৬ এএম, ২০ অক্টোবর ২০২২

দিনের নামাজের কেরাত তথা জোহর ও আসর নামাজের কেরাত আস্তে আস্তে পড়তে হয়। আর রাতের নামাজ তথা মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজে কেরাত জোরে বা উচ্চস্বরে পড়তে হয। এটিই ইসলামি শরিয়তের বিধান। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল।

জোহর-আসর নামাজের কেরাত আস্তে পড়ার দলিল

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে (উচ্চস্বরে) কেরাত পড়ার জন্য নির্দেশ পেয়েছেন, সেখানে (উচ্চস্বরে) পড়েছেন। আর যেখানে চুপ করে থাকতে (নিম্নস্বরে পড়তে) নির্দেশ পেয়েছেন সেখানে চুপ করে থেকেছেন। নবিজির অনুসরণ ও অনুকরণে আল্লাহর নির্দেশও এমনই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের জন্য রাসুল (স.)-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (বুখারি ৭৩৮)

হরজত আবু মামার রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সাহাবি হজরত খাব্বার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জোহর ও আসরে কেরাত পড়তেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ পড়তেন। আবু মামার পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কীভাবে বোঝা যেত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাড়ি নড়াচড়া দেখে বোঝা যেত।’ (বুখারি ৭৬০)

ইমাম নববি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘সুন্নত হচ্ছে— ফজর, মাগরিব ও এশার দুই রাকাতে এবং জুমার নামাজের কেরাত উচ্চস্বরে পড়া। আর জোহর ও আসরের নামাজে এবং মাগরিবের তৃতীয় রাকাতে এবং এশার তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে চুপেচুপে তেলাওয়াত করা। সুস্পষ্ট সহিহ হাদিসের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্যের ভিত্তিতে এসব বিধান সাব্যস্ত।’ (আল-মাজমু, খণ্ড: ০৩, পৃষ্ঠা-৩৮৯)

হজরত ইবনে কুদামা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, জোহর ও আসরের নামাজে চুপেচুপে তেলাওয়াত করবে। মাগরিব ও ইশার নামাজের প্রথম দুই রাকাতে এবং ফজরের নামাজের সব রাকাতে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করবে...।

এর দলিল হচ্ছে, এটি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল। এটি পূর্ববর্তীদের কাছ থেকে পরবর্তীদের কাছে প্রচারের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে। অতএব, কেউ যদি চুপেচুপে পড়ার নামাজে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করে কিংবা উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করার নামাজে চুপেচুপে পড়ে— তাহলে সে সুন্নতের বিপরীত কাজ করলো। তবে (কেউ) এমন করলেও তার নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে।’ (আল-মুগনি, খণ্ড: ০২, পৃষ্ঠা-২৭০)

জোহর-আসরের নামাজে কেরাত আস্তে পড়ার কারণ কী?

সুস্পষ্টভাবে এর প্রকৃত কোনো কারণ জানা না থাকলেও একটি হিকমত ছিল এই যে-

দিনের বেলা জোরে কেরাত পড়লে আরবের মুশরিকরা কেরাতকে ঠাট্টা করে জোরে জোরে আওয়াজ করে বিরক্ত করতো। যেটা রাতের বেলায় করা হতো না। তাই দিনে আস্তে কেরাতের বিধান এসেছে, আর রাতে উচ্চস্বরের বিধান এসেছে।

মূল কথা হলো, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ নির্দেশের ওপর আমল করা। তাহলো-

‘তোমরা সেভাবে নামাজ পড়ো; যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখেছো।’

যেহেতু নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের নামাজ উচ্চস্বরে পড়েছেন আর দিনের নামাজ জোহর ও আসর নিম্নস্বরে পড়েছেন; সেহেতু নবিজির অনুসরণ ও অনুকরণ করাই সর্বোত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।