নবিজি (সা.) যেভাবে রসিকতা করতেন
নবিজি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম পারস্পরিক প্রশান্তির জন্য রসিকতা করতেন। তিনি স্বীয় উম্মত, সৈন্যবাহিনী, সৈন্য পরিচালনা ও পরিবারের চিন্তায় যেমন নিয়োজিত থাকতেন। আবার কখনো অহি, ইবাদাত ও অন্যান্য চিন্তাও তার থাকতো। সাধারণত বড় বড় ব্যস্ততার মাঝে মানুষ জীবনের চাওয়া পাওয়া ও আত্মিক প্রশান্তির জন্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ভুলে যায়। কিন্তু নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি শত ব্যস্ততায়ও প্রত্যেক হকদারের হক সঠিক ভাবে আদায় করেছেন, কারও অধিকারে তিনি ক্ষুন্ন করেননি।
শত ব্যস্ততার মাঝেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হৃদয়ে বাচ্চাদেরও স্থান ছিল অ¤øান। তিনি বাচ্চাদের সাথে রসিকতা করতেন। তাদের অন্তরে আনন্দের বন্যা বইয়ে দিয়ে শিশুদের মন জয় করে নিতেন। তিনি অনেক সময় বড়দের সঙ্গেও রসিকতা করতেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল!-
إِنَّكَ تُدَاعِبُنَا قَالَ إِنِّي لاَ أَقُولُ إِلاَّ حَقًّا
আপনিও কি আমাদের সাথে রসিকতা করেন? তিনি উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ’, তবে আমি শুধু সত্য দ্বারাই রসিকতা করে থাকি।’ (তিরমিজি ১৯৯০, মুসনাদে আহমাদ)
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, উম্মে সুলাইমের এক ছেলেকে আবু ওমাইর বলে ডাকা হতো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসলে অনেক সময় রসিকতা করতেন। একদা রসিকতা করার জন্য তাদের বাড়ীতে প্রবেশ করে দেখলেন যে, সে চিন্তিত, তিনি বললেন, কি হয়েছে আবু ওমাইরকে চিন্তা মগ্ন দেখছি? উপস্থিত ব্যক্তিরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! তার নুগাইর নামে পাখীটি মরে গেছে, যাকে নিয়ে সে খেলতো। এরপর থেকেই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ বলে সম্বোধন করতেন : يا أبا عمير، ما فعل النغير؟ হে দুই কান ওয়ালা! তোমার নুগাইর পাখীর কি খবর?’ (আবু দাউদ ৪৯৬৯, বুখারি ও মুসলিম)
বড়দের সঙ্গেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রসিকতা করার ঘটনা রয়েছে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এরকম একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গ্রাম্য এক ব্যক্তি ছিল, যার নাম ছিল যাহের বিন হারাম। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে খুব ভালবাসতেন। তার গায়ের রং ছিল কালো বর্ণের। একদা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছে গেলেন সে তখন তার মালামাল বিক্রির কাজে ব্যস্ত ছিল। এরপর তিনি তার অজান্তে পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। সে তখন বলতে লাগলো, কে তুমি? আমাকে ছেড়ে দাও। পেছনের দিকে ফিরে জানতে পারল যে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চেনার পর তার পিঠকে রাসুলের সিনার সঙ্গে ঘসতে কোনো প্রকার কসুর করেনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছিলেন, এ দাসকে কে ক্রয় করবে? সে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি আমাকে এত সস্তা মনে করলেন? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘না’, তুমি আল্লাহর কাছে অনেক মূল্যবান।’ (মুসনাদে আহমাদ)
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন উত্তম চরিত্র, মহান বৈশিষ্ট্য ও ভদ্র ব্যবহারের অধিকারী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পরিবার ও সাহাবিদের সঙ্গে এমন উদার ও খোলা মেজাজের হওয়া সত্তে¡ও তার হাসির একটা সীমা ছিল। তিনি অট্ট হাসি হাসতেন না, বরং তিনি মুচকি হাসি দিতেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কখনো অট্টহাসি দিতে দেখিনি যার ফলে মুখের ভেতরের তালু প্রকাশ পায়, বরং তিনি মুচকি হাসি দিতেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
রসিকতার মাঝেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ রকম হাস্যোজ্জল চেহারা ও সুন্দর আচরণ হওয়া সত্তে¡ও তার সামনে কেউ ইসলামি শরিয়ত বিরোধী কার্যকলাপ করলে তার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যেতো। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো সফর থেকে ফিরে আসলেন, আর আমি আমার ঘরে ছবি যুক্ত কাপড় দ্বারা পর্দা লটকিয়ে ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা দেখে তাঁর মুখমÐল বিবর্ণ হয়ে যায় এবং তা নষ্ট করে বলেন, হে আয়েশা! যারা কোন জীবের ছবি আঁকাবে কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে তাদের কঠিন আজাব হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
এ হাদিস থেকে এটাই প্রমাণ কওে যে, ঘর-বাড়িতে ছবি রাখা হারাম; যদি তা দেখা যায়। আর তার চেয়ে ভয়াবহ হলো- যদি তা দেয়ালের সঙ্গে লটকানো হয় অথবা ঘর-বাড়ির কোণ, আলমারি ও শোকেসে যদি মূর্তি বা পুতুল রাখা হয়। এতে গোনাহ তো রয়েছেই তা সত্তে¡ও এ বাড়ির অধিবাসীরা রহমতের ফেরেশতা সে ঘরে প্রবেশ করা থেকে বঞ্চিত হবে।
এমএমএস/জেআইএম