যে সময় দোয়া করলে কবুল হয়

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৪৯ পিএম, ২৬ জুন ২০২২

রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ। এ নামাজের সেজদায় গিয়ে নিজের মনের ইচ্ছাগুলো প্রকাশ করুন। এ সময় আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের মনের ইচ্ছেগুলো প্রকাশ করলে সবচেয়ে বেশি কবুল হয়। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কী এই দিকনির্দেশনা?

আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বন্ধু নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এ মর্মে আয়াত নাজিল করেন-

كَانُوا قَلِيلاً مِنْ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ - وَ بِالۡاَسۡحَارِ هُمۡ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ

রাতের সামান্য সময়ই তাঁরা ঘুমে থাকেন, শেষ রাতে তাঁরা ইসতেগফার করেন।’ (সুরা জারিয়াত : ১৭-১৮)

‘ভোরের সময়টি দোয়া গ্রহণের অন্যতম উত্তম সময়। হাদিসে এসেছে যে, ‘যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে, তখন মহান আল্লাহ প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং ডাক দিয়ে বলেন যে, কেউ তাওবাকারী আছে কি, যার তওবা আমি কবুল করবো? কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি, যাকে আমি ক্ষমা করবো? কেউ কিছু চায় কি, যাকে আমি দান করব? এইভাবে ফজর উদয় হয়ে যায়।’

রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ শেষ রাতের দিকে পড়া হয়। শেষ রাতের ইবাদত ও দোয়া কবুল প্রসঙ্গে হাদিসের একাধিক বর্ণনায় ওঠে এসেছে। তাহলো-

১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে দুনিয়ার কাছাকাছি আকাশে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন-

> কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেবো।

> কে আছে এমন যে, আমার কাছে চাইবে? আমি তাকে তা দেবো।

> কে আছে এমন যে, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করবো।’ (মুসলিম, বুখারি, মুসনাদে আহমাদ)

২. হজরত আসওয়াদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাতে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাজ কেমন ছিল? তিনি বললেন, তিনি (রাতের) প্রথমাংশে ঘুমাতেন, শেষাংশে জেগে নামাজ আদায় করতেন। এরপর তাঁর শয্যায় ফিরে যেতেন, মুয়াজ্জিন আজান দিলে শিগগির উঠতেন, তখন তাঁর প্রয়োজন থাকলে গোসল করতেন, নতুবা অজু করে (মসজিদের দিকে) বেরিয়ে যেতেন।’ (মুসলিম, বুখারি, মুসনাদে আহমাদ)

ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদ নামাজে বিশেষভাবে দোয়া করতেন। আল্লাহ তাআলা এ সময় তাঁর দোয়া কবুল করে নিতেন। তিনি দোয়া বলতেন-

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ لَكَ مُلْكُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ

وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ مَلِكُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ

وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ الْحَقُّ وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ وَقَوْلُكَ حَقٌّ وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ وَالسَّاعَةُ حَقٌّ

 اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَوْ لآ إِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আংতা কায়্যিমুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না ওয়া লাকালহামদু। লাকা মুলকুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না।

ওয়া লাকাল হামদু আংতা নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। ওয়া মান ফিহিন্না। ওয়া লাকাল হামদু আংতা মালিকুস সামাওয়াতি ওয়াল-আরদি।

ওয়া লাকাল হামদু আংতাল হাক্কু। ওয়া ওয়াদুকাল হাক্কু। ওয়া লিক্বাউকা হাক্কু। ওয়া ক্বাওলুকা হাক্কু। ওয়াল ঝান্নাতু হাক্কু। ওয়ান নারু হাক্কু। ওয়ান নাবিয়্যুনা হাক্কু। ওয়া মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাক্কু। ওয়াস সাআতু হাক্কু।

আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু। ওয়াবিকা আমাংতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু। ওয়া ইলাইকা আনাবতু। ওয়া বিকা খাসামতু। ওয়া ইলাইকা হাকামতু। ফাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখ্খারতু। ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আলাংতু। আংতাল মুকাদ্দিমু ওয়া আংতাল মুআখ্খিরু। লা ইলাহা ইল্লা আংতা আও লা ইলাহা গাইরুকা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনারই জন্য সব প্রশংসা; আপনি আসমান-জমিন ও এ দুইয়ের মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর নিয়ামক এবং আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আসমান-জমিন এবং তাদের মাঝে বিদ্যমান সব কিছুর কর্তৃত্ব আপনারই। আপনারই জন্য সব প্রশংসা।

আপনি আসমান-জমিনের নূর। আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি আসমান-জমিনের মালিক, আপনারই জন্য সব প্রশংসা।

আপনিই চির সত্য। আপনার ওয়াদা চির সত্য; আপনার সাক্ষাৎ সত্য; আপনার বাণী সত্য; জান্নাত সত্য; জাহান্নাম সত্য; নবীগণ সত্য; মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য, কিয়ামত সত্য।

হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আমি আত্মসমর্পণ করলাম; আপনার প্রতি ঈমান আনলাম; আপনার উপরেই তাওয়াক্কুল করলাম, আপনার দিকেই রুজু করলাম; আপনার (সন্তুষ্টির জন্যই) শত্রুতায় লিপ্ত হলাম, আপনাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমার আগের-পরের ও প্রকাশ্য-গোপন সব অপরাধ ক্ষমা করুন। আপনিই আগের-পরের মালিক। আপনি ছাড়া সত্য প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই, অথবা আপনি ছাড়া প্রকৃত কোনো সত্য উপাস্য নেই।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

সুতরাং রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ দোয়া কবুলের অন্যতম সময়। এসময় নবিজীর শেখানো পদ্ধতিতে দোয়া করলে মহান আল্লাহ তা কুবল করেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রাতের শেষভাগে তাহাজ্জুদ পড়ার তাওফিক দান করুন। নবিজীর শেখানো পদ্ধতিতে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।