জোহরের সঙ্গে জুমার নামাজের পার্থক্য কী?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:০০ পিএম, ০৩ জুন ২০২২

জুমার নামাজ সাপ্তাহিক প্রধান ইবাদত। প্রতি সপ্তাহে একবার মুসলিম উম্মাহ জুমার নামাজ উপলক্ষ্যে জামে মসজিদে একত্রিত হয়, সম্মিলিত হয়, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতারবন্দী হয়ে নামাজ আদায় করে। নামাজের আগে নসিহতমূলক খুতবা শোনে। এর বিনিময়ে মহান আল্লাহ বান্দার বিগত এক সপ্তাহের গুনাহসহ অতিরিক্ত আরও তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। কিন্তু জোহরের সঙ্গে জুমার নামাজের পার্থক্য কী?

জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরজ হিসেবে পড়তে হয়। সময় এক হলেও জোহরের সঙ্গে জুমার নামাজের নিয়মগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন-মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামাতের সঙ্গে সে দিনের জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরজরূপে আদায় করে, সে জন্য এই নামাজকে 'জুমার নামাজ' বলা হয়। জুমার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

 یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ -  فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

'হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে তাড়াতাড়ি করো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। এরপর নামাজ সম্পন্ন হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।' (সুরা জুমুআ : আয়াত ৯-১০)

জোহরের সঙ্গে জুমার নামাজের পার্থক্য

জুমার নামাজ জোহরের সময় পড়লেও জোহরের সঙ্গে জুমার নামাজের নিয়মগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। তাহলো-

১. জুমার নামাজ ২ রাকাত ফরজ আর জোহরের নামাজ ৪ রাকাত ফরজ রয়েছে।

২. জুমার ফরজ নামাজের আগে ২/৪ রাকাত দুখুলিল মসজিদ/কাবলাল জুমা এবং পরে ৪ রাকাত বাদাল জুমা (সুন্নাত নামাজ) আদায় করতে হয়। আর জোহরের নামাজের আগে ৪ রাকাত সুন্নাতে মোয়াক্কাদা পড়তে হয়।

৩. জুমার নামাজের আগে ইমামের খুতবা শুনতে হয়। খুতবা শোনা আবশ্যক। জোহর নামাজের জন্য কোনো খুতবা শুনতে হয় না।

৪. এ ছাড়াও জুমার দিন অনেক নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, তাওবা-ইসতেগফার ও দরূদ পড়ার বিশেষ ফজিলত নির্ধারিত আছে। যা অন্যান্য দিন জোহরের সময় নেই। তবে এসব নফল নামাজ জুমার অংশ হিসেবে পড়া হয় না এবং তা আবশ্যকীয়ও নয় বরং ব্যক্তি তা স্বেচ্ছায় এসব আমল-ইবাদত করতে পারে এবং না করলে তার দোষ হয় না।

জুমা পড়ার নিয়ম

দুই রাকাত জুমার নামাজ পড়া ফরজ। এছাড়া ফরজ নামাজের আগে চার রাকাত কাবলাল জুমা এবং পরে চার রাকাত বাদাল জুমা (সুন্নাত নামাজ) আদায় করতে হয়। এ ছাড়াও মসজিদে প্রবেশ করেই দুই রাকাত দুখুলিল মসজিদ নামাজ আদায় করা সুন্নাত। জুমার নামাজের আগের পরের এসব নামাজ জুমার নামাজের অংশ নয়।

জুমার নামাজের জন্য জামাত শর্ত। জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করতে হয়। তা একাকি আদায় করা যায় না। জুমার নামাজের আজান হলে সব কাজ-কর্ম বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ এসেছে কোরআনে।

যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া (যেমন খুব অসুস্থ ব্যক্তি) জুমার নামাজ ত্যাগ করার সুযোগ নেই।  জুমা আদায় করতে না পারে তবে তার ক্ষেত্রে জোহরের নামাজ আদায় করা নিয়ম। তাছাড়া কিছু ক্ষেত্রে সুস্থ ব্যক্তির উপর, যেমন ভ্রমণকারী (মুসাফির) অবস্থায় জুমার আবশ্যকতা থাকে না এবং সেক্ষেত্রে জোহরের নামাজ আদায় করলে তা গ্রহণীয় হয়। তবে ভ্রমণকারী চাইলে জুমা আদায় করতে পারে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার দিন আগে আগে মসজিদে গিয়ে ২ রাকাত জুমার ফরজ নামাজ ইমামের সঙ্গে আদায় করা। জুমার ফজিলত ও বরকত গ্রহণের আগ্রহী হওয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহক জুমার ২ রাকাত ফরজ নামাজ যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।