ফল-ফসলের জাকাত দেবেন কীভাবে?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:২৪ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২২

জাকাত ফরজ ইবাদাত। জাকাত চার ধরনের সম্পদে ওপর প্রযোজ্য। এমনকি কৃষিজাত ফল-ফসলও জাকাতের অন্তর্ভূক্ত। তাই কৃষিজাত শস্যদানা, ফল ও ফসলের জাকাতের বিধান ও পরিমাণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যেমন জরুরি। তেমনি রমজানের বরকতময় মাসে ফল-ফসলের জাকাত দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। তাহলো-

ফল-ফসলের জাকাত দেওয়ার হুকুম
অধিকাংশ ইসলামিক স্কলারের মতে জমিনে উৎপাদিত ফসলের জাকাত তখনই ফরজ হবে, যখন ফসলের পরিমাণ নিসাব পূর্ণ হবে। তবে ফসল ও ফলের জাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য একবছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। যখনই ফসল কাটার সময় তবে তখনই তার জাকাত প্রদান করা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ هُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡشَاَ جَنّٰتٍ مَّعۡرُوۡشٰتٍ وَّ غَیۡرَ مَعۡرُوۡشٰتٍ وَّ النَّخۡلَ وَ الزَّرۡعَ مُخۡتَلِفًا اُکُلُهٗ وَ الزَّیۡتُوۡنَ وَ الرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّ غَیۡرَ مُتَشَابِهٍ ؕ کُلُوۡا مِنۡ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثۡمَرَ وَ اٰتُوۡا حَقَّهٗ یَوۡمَ حَصَادِهٖ ۫ۖ وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ؕ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ
‘আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন এমন বাগানসমূহ যার কিছু মাচায় তোলা হয় আর কিছু তোলা হয় না এবং খেজুর গাছ ও শস্য, যার স্বাদ বিভিন্ন রকম, যায়তুন ও আনার যার কিছু দেখতে একরকম, আর কিছু ভিন্ন রকম। তোমরা তার ফল থেকে আহার কর, যখন তা ফলদান করে এবং ফল কাটার দিনেই তার হক (প্রাপ্য মালিক/গরিব/অসহায়দের) দিয়ে দাও। আর অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদেরকে ভালবাসেন না।' (সুরা আনআম : আয়াত ১৪১)

বিজ্ঞাপন

ফসলের জাকাত ফরজের শর্ত
ফল-ফসলের জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত হলো- কোনো ব্যক্তির ফল-ফসলের জাকাত ফজর হওয়ার সময় সেই ফল-ফসলের মালিকানাভুক্ত হতে হবে। অনুরূপভাবে তা নিসাব পরিমাণ হতে হবে।

ফল-ফসলের নিসাব
ফল-ফসলের নিসাব হলো- ৫ (পাঁচ) ওয়াসাক। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘৫ ওয়াসাকের কমে জাকাত ফরজ নয়।' (বুখারি ও মুসলিম)

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

উৎপন্ন ফসলের ক্ষেত্রে জাকাতের পরিমাণ
যেসব ফসল ১ ওয়াসাক = ৬০ সাআ’। তাহলে ৫ ওয়াসাক = ৩০০ সাআ’। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক সাআ’ = চার মুদ। এক সাআ’ = ২.৪০ কেজি (২০৪০ গ্রাম)। সে হিসাবে ফল ও ফসলের নিসাব পরিমাণ মাল হলো- ৬১২ কেজি। আবার কেউ কেউ বলেন, উত্তম গমের দ্বারা নিসাবের পরিমাণ হলো ৬৫২ কেজি ৮০০গ্রাম।

১. ২০ (বিশ) ভাগের ১ ভাগ (৫%)
উৎপন্ন ফসলের ক্ষেত্রে জাকাত প্রদান করতে হবে এক বিশমাংশ অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ। যে ব্যক্তি ৬১২ কেজি ফল বা ফসল উৎপন্ন করতে সক্ষম হবে, সে এ ফসলের ২০ ভাগের এক ভাগ জাকাত আদায় করবে। যেমন- কুপ বা গভীর নলকুপ অথবা নদীর পানি মেশিনে সেচ দিয়ে উৎপন্ন করা ফসল।

২. ১০ (দশ) ভাগের ১ ভাগ (১০%)
যেসব ফসল বিনা পরিশ্রমে পানি সরবরাহ হয়ে উৎপন্ন হয়েছে, সে সব পণ্যের জাকাতের নির্ধারিত পরিমাণ হলো ১০ ভাগের একভাগ। যেমন বৃষ্টির পানি, ঝর্নার পানি দ্বারা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩. তিন (তিন) দশমাংশ (৭.৫%)
যেসব ফল-ফসল সেচ এবং বৃষ্টির পানি দ্বারা উৎপন্ন হয়ে থাকে। একবার সেচের পানি আবার বৃষ্টি অথবা নদীর জোয়ার-ভাটার পানি দ্বারা হয়ে থাকে। এ সব ফল বা ফসলের ক্ষেত্রে শতকরা ৭.৫ ভাগ জাকাত আদায় করতে হবে।

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘যা বৃষ্টি ও ঝর্নার পানি দ্বারা সেচ হয় বা বৃষ্টির পানিতে উৎপন্ন শষ্যক্ষেত্র তার জাকাত একদশমাংশ (১০%)। আর যা সেচ দ্বারা পানি দেওয়া হয় তার জাকাত একবিশমাংশ (৫%)। (বুখারি মুসলিম)

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত, সব নিসাব পরিমাণ ফল-ফসলের মালিকের ওপর জাকাত আদায় করা জরুরি। ইসলামি শরিয়তে বান্দার জন্য তা আদায় করা ফরজ।

বিজ্ঞাপন

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব নিসাব পরিমাণ ফল-ফসলের মালিকদেরকে নির্ধারিত হারে জাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।