আসুন নিজেকে বদলে ফেলি

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:২৯ এএম, ১২ এপ্রিল ২০২২

উমামা তাসনিম

আল্লাহতায়ালার অপার অনুগ্রহে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ সিয়াম সাধনা আর বিশেষ ইবাদতের মধ্য দিয়ে পবিত্র মাহে রমজানের দিনগুলো অতিবাহিত করছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ এবং আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি নিরাপদ দুর্গ।’ (সহিহ বোখারি)। আমরা অনেকেই আছি, যারা এ ঢালকে কাজে লাগাচ্ছি না। আর ইবাদতে মগ্ন না হয়ে বৃথা সময় অতিবাহিত করছি।

আমাদের উচিত, এ দিনগুলোতে বৃথা সময় নষ্ট না করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে রত হওয়া। কেননা, বিশ্বের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। একদিকে গত দু'বছর ধরে চলছে বিশ্বময় করোনা মহামারি। অপরদিকে রাশিয়া-ইউক্রেনে চলছে যুদ্ধ। আল্লাহই ভালো জানেন, কখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যায়!

রমজানে আত্মবিশ্লেষণ
পৃথিবীর সব চেষ্টা-প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও আল্লাহতায়ালা ইচ্ছে করলে এক মুহূর্তেই পারেন বিশ্বের সব বালা-মসিবত দূর করতে। কিন্তু এর আগে আমাদের সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। পবিত্র রমজানে আমাদের রাতগুলোকে ইবাদতের মাধ্যমে জাগ্রত রাখতে হবে। সেজদার স্থানগুলোকে অশ্রুজলে সিক্ত করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের আত্মবিশ্লেষণ করা উচিত, আমরা কি আল্লাহর অধিকার এবং বান্দার অধিকার পরিপূর্ণভাবে আদায় করেছি?

প্রকৃত সাহায্যকারী মহান আল্লাহ
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি বলো, আকাশসমূহের ও পৃথিবীর আদি দ্রষ্টা আল্লাহ ছাড়া আমি কি অন্য কোনো সাহায্যকারী গ্রহণ করতে পারি? অথচ তিনি রিজিক দান করেন; কিন্তু কারও রিজিক গ্রহণ করেন না।’ (সুরা আনআম : ১৪)। পবিত্র কোরআনের এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, আমাদের সবার প্রকৃত সাহায্যকারী হচ্ছেন মহান রাব্বুল আলামিন। তিনিই পারেন আমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করতে।

সন্তানদের উত্তম শিক্ষাদান
রমজান মাসে আমরা অধিক সময় বাসায় অবস্থান করার সুযোগ পাই। এ সুবাদে হাতে প্রচুর সময়ও পাই। তাই এখন সন্তানদের উত্তম শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কোনো পিতা তার পুত্রকে উত্তম শিষ্টাচার অপেক্ষা অধিক শ্রেয় আর কোনো বস্তু দান করতে পারে না।’ (তিরমিজি)। তাই পিতামাতার উচিত, পুরো রমজানে সন্তানদের উত্তম শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

পিতামাতার প্রতি করণীয়
আবার পিতামাতার প্রতিও সন্তানের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। পিতামাতার প্রতি আমাদের যা করণীয়, এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক একমাত্র তাঁরই ইবাদত করার এবং পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার তাগিদপূর্ণ আদেশ দিয়েছেন। তোমার জীবদ্দশায় তাদের একজন বা উভয়েই বার্ধক্যে উপনীত হলে তুমি তাদের উদ্দেশে বিরক্তিসূচক উহ্-ও বোলো না। তাদের বকাঝকা কোরো না। বরং তাদের সঙ্গে সদা বিনম্র ও সম্মানসূচক কথা বলো। তুমি মমতাভরে তাদের উভয়ের ওপর বিনয়ের ডানা মেলে ধরো। দোয়ার সময় বলবে, হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি সেভাবে দয়া করো, যেভাবে শৈশবে তারা আমায় লালন-পালন করেছিল।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৩-২৪)।

ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি পরীক্ষাস্বরূপ
আল্লাহতায়ালা এ পৃথিবীতে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দিয়ে থাকেন পরীক্ষা করার জন্য। অনেককে আল্লাহতায়ালা প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেন ঠিকই; কিন্তু সেই ধন-সম্পদের সঠিক ব্যবহার না করার ফলে দেখা যায়, সে ধ্বংস হয়ে যায়। আবার কাউকে সন্তান-সন্তুতি দেন ঠিকই; কিন্তু তাদের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত না করার ফলে এ সন্তান তার জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। সন্তান-সন্তুতি যদি প্রকৃত নৈতিকগুণ সম্পন্ন না হয়, তাহলে মাতাপিতার জন্য তা একটি আজাব বৈ কিছুই নয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দুনিয়ার সৌন্দর্য। এ সন্তান-সন্তুতি যদি আদর্শ চরিত্রের না হয়, তাহলে তা হয় মা-বাবার জন্য পরীক্ষার কারণ ও দুঃখের বোঝা।’ (সুরা কাহাফ : ৪৬)।

এ জন্যই আল্লাহতায়ালা মোমিনদের হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘জেনে রাখো, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি পরীক্ষার কারণ।’ (সুরা আনফাল : ২৭)। একজন পিতামাতা হিসেবে সন্তানের সুশিক্ষায় আমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি।

শান্তির সুবাতাসের উপায়
পবিত্র মাহে রমজানের এ দিনগুলোকে বৃথা নষ্ট না করে সন্তানদের তরবিয়তের দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। সন্তানদের নিয়ে বসতে হবে। তাদেরকে সময় দিতে হবে। সন্তানরা কোরআন পড়তে না পারলে তাদের শেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে। রমজানের এ দিনগুলোতে আমরা যদি ঘরগুলোতে ধর্মীয় আলোচনা করি, আর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করি, তাহলে সন্তানদের মাঝে যেমন নামাজ পড়ার অভ্যাস সৃষ্টি হবে, পাশাপাশি পরিবারে প্রবাহিত হবে শান্তির সুবাতাস।

আল্লাহর কাছে রমজানের ইবাদতের গুরুত্ব অনেক বেশি। আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি রোজা রাখে, তার এ একটি দিনের বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখবেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

রমজান কাটুক আধ্যাত্মিকতা চর্চায়
পবিত্র মাহে রমজানের এ দিনগুলো কাটাতে হবে আধ্যাত্মিকতা চর্চায়। আমরা আমাদের সন্তানদের নামাজের দোয়াগুলো অর্থসহ শেখাতে পারি। কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন দোয়া মুখস্থ করাতে পারি। পবিত্র কোরআন থেকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে পারি। বিভিন্ন ইসলামি বই পাঠচক্রের আকারে পড়ার আয়োজন করতে পারি। সেহরির আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে পারি।

মুনশি/এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।