মুনাফেকদের মুখোশ উন্মোচন ও গণিমতের সম্পদ বণ্টন

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:১৪ পিএম, ০৮ এপ্রিল ২০২২

যুদ্ধলব্দ সম্পদ গণিমতের বণ্টন সম্পর্কিত আয়াত দ্বারা শুরু হবে ৭ম তারাবি। রমজানের প্রথম ৬ তারাবিতে ৯ পারার তেলাওয়াত সম্পন্ন হয়েছে। আজ থেকে প্রতিদিন ১ পারা তেলাওয়াত করা হবে। হাফেজে কোরআনদের কণ্ঠে আজ শোনা যাবে ১০তম পারার তেলাওয়াত।

৭ম তারাবিতে সুরা আনফালের বাকি অংশ এবং সুরা তাওবার ৯৩ আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত শোনা যাবে আজ। সুরা দুইটিতে যুদ্ধলব্দ সম্পদ তথা গণিমত, হিজরত, যুদ্ধ, সন্ধি, মক্কা বিজয়সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ের আলোচনা রয়েছে। আজকের গুরুত্বপূর্ণ এ অংশের তেলাওয়াত শুনে মুমিন রোজাদারের হৃদয় ও মন প্রানবন্ত হবে।

সুরা আনফাল : ৪১-৭৫
৭ম তারাবিতে আজ ৪১-৭৫ আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে। এ অংশের শুরুতেই গণিমতের সম্পদ বণ্টন ও অংশ নির্ধারণ সম্পর্কিত আয়াত। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা গণিমতের অংশ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَاعْلَمُواْ أَنَّمَا غَنِمْتُم مِّن شَيْءٍ فَأَنَّ لِلّهِ خُمُسَهُ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ إِن كُنتُمْ آمَنتُمْ بِاللّهِ وَمَا أَنزَلْنَا عَلَى عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ وَاللّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
'আরো জেনে রাখ যে, যুদ্ধে যা কিছু তোমরা (গণিমত) পেয়েছো; তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ, তাঁর রাসুলের, রাসুলের নিকটাত্মীয়, পিতৃহীন এতিম, দরিদ্র এবং পথচারীদের জন্য; যদি তোমরা আল্লাহতে ও সেই জিনিসে বিশ্বাসী হও যা ফায়সালার দিন (বদরে) আমি আমার দাসের প্রতি অবতীর্ণ করেছিলাম; যেদিন দুই দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।' (সুরা আনফাল : আয়াত ৪১)
আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে-
‘গণিমতের মাল’ থেকে সেই মাল উদ্দেশ্য যা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর পাওয়া যায়। আগের উম্মতে এই মাল বিতরণের পদ্ধতি এই ছিল যে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর কাফেরদের কাছ থেকে পাওয়া সব মাল-সম্পদকে এক জায়গায় জমা করা হতো; আর আসমান থেকে আগুন এসে তাকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিতো। কিন্তু মুসলিম উম্মতের জন্য এই গণিমতের মাল আল্লাহ হালাল করে দিয়েছেন। আর যে মাল দুই দলের সন্ধি চুক্তির ভিত্তিতে বিনা যুদ্ধে অথবা জিযিয়া কর ও খাজনা আদায়ের মাধ্যমে অর্জিত হয় তাকে ‘ফাই-এর মাল’ বলা হয়।

কখনো কখনো গণিমতের মালকেও ফাই-এর মাল বলা হয়ে থাকে। কম হোক অথবা বেশি, মূল্যবান হোক অথবা সামান্য মূল্যের, সব মালকে জমা করে তা যথারীতি বণ্টন করা হবে। কোনো সৈন্যের জন্য তা থেকে বণ্টনের আগে কোনো বস্তু রেখে নেওয়ার অনুমতি নেই।

বণ্টনের মধ্যে ‘আল্লাহ’ শব্দটি বরকতস্বরূপ। মূলত এই জন্যও যে, প্রত্যেক জিনিসের প্রকৃত পক্ষে মালিক হলেন তিনিই। আর আদেশও তাঁরই চলে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভাগ থেকে উদ্দেশ্য একটাই। অর্থাৎ, সব গণিমতের মালকে পাঁচ ভাগ করে চার ভাগ সেই মুজাহিদদের মধ্যে বণ্টন করা হবে, যাঁরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

তাঁদের মধ্যেও পদাতিক (পায়ে হাঁটা ব্যক্তিদের)-কে এক ভাগ এবং অশ্বারোহীকে তিন ভাগ দেওয়া হবে। আর পঞ্চম ভাগটাকে পুনরায় পাঁচ ভাগ করা হবে, তার মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য এক ভাগ। এরপর বাকি ভাগগুলি মুসলিমদের সাধারণ কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হবে। যেমন- নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও এই ভাগগুলো মুসলিমদের উপরেই খরচ করতেন। বরং তিনি বলেছেনও, الخمسُ مَردودٌ عليكم - আমার ভাগে যে পঞ্চম অংশ রয়েছে সেটাও মুসলিমদের উপকারে ব্যয় করা হবে।' (নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ)

দ্বিতীয় ভাগ রাসুলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আত্মীয়-স্বজনের জন্য। এরপর এতীম ও মিসকিন এবং মুসাফিরদের জন্য। আরো বলা হয় যে, এই পঞ্চম ভাগটি প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয় করা হবে।

গণিমতের মাল বণ্টন সম্পর্কে তাফসিরে জাকারিয়া এসেছে-
জেহাদের পর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ গণিমতের হকদারদের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। সব সম্পদ পাঁচ ভাগে ভাগ করা হবে। এর চার ভাগ যোদ্ধাদের মধ্যে বন্টন করা হবে। আর বাকী এক পঞ্চমাংশ পাঁচভাগে ভাগ করা হবে।
প্রথমভাগ : আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্য। এ অংশ মুসলিমদের সাধারণ স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যয় হবে।

দ্বিতীয়ভাগ : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বজনদের জন্য নির্ধারিত। তারা হলেন ওই সব লোক যাদের উপর সাদকা খাওয়া হারাম। অর্থাৎ বনু হাশেম ও বনু মুত্তালিব। কারণ তাদের দেখাশুনার দায়িত্ব ছিল নবিজীর। তিনি তার নবুওয়াতের কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকায় তাদের জন্য এ গণিমতের মাল থেকে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

তৃতীয়ভাগ : এতিমদের জন্য সুনির্দিষ্ট।
চতুর্থভাগ : ফকির ও মিসকিনদের জন্য। আর
পঞ্চম ভাগ : মুসাফিরদের জন্য।' (ইবন কাসির)

হজরত ইবন তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, 'পুরো এক পঞ্চমাংশই বর্তমানে ইমামের কর্তৃত্বে থাকবে। তিনি মুসলিমদের অবস্থা অনুযায়ী কল্যাণকর কাজে ব্যয় করবেন।' (ইবনে কাসির)

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, গণিমতের মাল যদিও আগে সুরা আনফালের প্রথম আয়াতে শুধু আল্লাহ ও তার রাসুলের বলা হয়েছে তবুও তা মূলতঃ মুসলিমদের মধ্যেই পুনরায় বন্টন হয়ে গেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য তার জীবদ্দশায় যা কিছু পেতেন তাও বর্তমানে সাধারণ জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে।

মুমিন মুসলমান বদর যুদ্ধে জয় লাভ করেছেন। মাত্র ৩১৩ জন সৈন্যবাহিনী নিয়ে ৩ হাজারেরও বেশি বিশাল কাফের বাহিনীর সঙ্গে জেহাদে নেমে পড়েন। আল্লাহ তাআলা ঈমানদার মুমিন মুসলমানদের বিজয়ের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ إِن يَكُن مِّنكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُواْ مِئَتَيْنِ وَإِن يَكُن مِّنكُم مِّئَةٌ يَغْلِبُواْ أَلْفًا مِّنَ الَّذِينَ كَفَرُواْ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لاَّ يَفْقَهُونَ
'হে নবি, আপনি মুসলমানগণকে উৎসাহিত করুন জেহাদের জন্য। তোমাদের মধ্যে যদি বিশ জন দৃঢ়পদ ব্যক্তি থাকে, তবে জয়ী হবে দু'শর মোকাবেলায়। আর যদি তোমাদের মধ্যে থাকে একশ লোক, তবে জয়ী হবে হাজার কাফেরের উপর থেকে তার কারণ ওরা জ্ঞানহীন।' (সুরা আনফাল : আয়াত ৬৫)

যুদ্ধলব্দ গণিমতের মাল বা সম্পদ থেকে খাওয়ার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ। কুরআনে এসেছে-
فَكُلُواْ مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلاَلاً طَيِّبًا وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
'সুতরাং তোমরা খাও গণীমত হিসাবে তোমরা যে পরিচ্ছন্ন ও হালাল বস্তু অর্জন করেছ তা থেকে। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, মেহেরবান।' (সুরা আনফাল : আয়াত ৬৯)

আবার ইসলামের জন্য ত্যাগ স্বীকারকারী আনসার ঈমানদারকে সত্যিকারের মুসলমান হিসেবে আল্লাহ ঘোষণা করেন-
وَالَّذِينَ آمَنُواْ وَهَاجَرُواْ وَجَاهَدُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالَّذِينَ آوَواْ وَّنَصَرُواْ أُولَـئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَّهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
'আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো সত্যিকার মুসলমান। তাঁদের জন্যে রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক রুজি।' (সুরা আনফাল : আয়াত ৭৪)

এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে আনসার-মুহাজির সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরিসহ আনসারদের মধ্যে চালু থাকা বিগত দিনের শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা কলহ-বিবাদের অবসান ঘটিয়ে ইসলামি রাষ্ট্রের প্রথম ধাপ ইসলামি জাতীয়তা প্রতিষ্ঠা করেন।

দ্বিতীয় ধাপে মদিনার ইয়াহুদি খ্রিস্টানদের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ সকল চুক্তির বিষয়াদি আলোচিত হয়েছে এ সুরায়। এ সুরার শেষে বদরের যুদ্ধের যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিতে করণীয় ও মুক্তিপণের বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে।

সুরা তাওবার : আয়াত ০১-৯৩
মদিনায় অবতীর্ণ ১২৯ আয়াত ও ১৬ রুকু সম্বলিত সুরা 'সুরা তাওবা'। নবম হিজরিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রোমানদের শায়েস্তা করার অভিযানে বের হচ্ছিলেন তখন এ সুরাটি নাজিল হয়। ইসলামের ইতিহাসে সে অভিযানটি তাবুক যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত।

সুরা তওবা দুইটি মৌলিক বিষয় আলোচিত হয়ছে। একটি হলো- মুশরিক ও আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে জেহাদের বিধান। আর দ্বিতীয় হলো- তাবুকের যুদ্ধে মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচন। এ সুরা প্রসঙ্গে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি ফরমান লিখেছিলেন। ফরমানটি হলো-
'তোমরা নিজেরা সুরা তাওবা শিখ আর তোমাদের স্ত্রীদেরকে সুরা নূর শিক্ষা দাও। এর কারণ হলো- সুরা তাওবাতে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে আর সুরা নুরে পর্দা প্রথা প্রচলনের তাগিদ দেয়া হয়েছে।'

আজকের তেলাওয়াত অংশে ওঠে এসেছে আল্লাহর গণণায় ১২মাসের বর্ণনা। যার মধ্যে ৪টি সম্মানিত। এ সম্মানিত মাসে আল্লাহ তাআলা রক্তপাতকে নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَات وَالأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلاَ تَظْلِمُواْ فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ وَقَاتِلُواْ الْمُشْرِكِينَ كَآفَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَآفَّةً وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
'নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে রয়েছেন।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৩৬)

তাবুক যুদ্ধে মুনাফিকদের মুখোষ উন্মোচন
ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য মুনাফেকরা ছিল মারাত্মক ক্ষতিকর। তারা বিভিন্ন সময় মুসলমানদের মারাত্মক ক্ষতি করেছেন। মুনাফিকদের সেসব বিষয়গুলো কোরআনের উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন এভাবে-
১. মিথ্যা অজুহাত
لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِيبًا وَسَفَرًا قَاصِدًا لاَّتَّبَعُوكَ وَلَـكِن بَعُدَتْ عَلَيْهِمُ الشُّقَّةُ وَسَيَحْلِفُونَ بِاللّهِ لَوِ اسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَكُمْ يُهْلِكُونَ أَنفُسَهُمْ وَاللّهُ يَعْلَمُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
'যদি আশু লাভের সম্ভাবনা থাকতো এবং যাত্রাপথও সংক্ষিপ্ত হতো, তবে তারা অবশ্যই আপনার সহযাত্রী হতো, কিন্তু তাদের নিকট যাত্রাপথ সুদীর্ঘ মনে হল। আর তারা এমনই শপথ করে বলবে, আমাদের সাধ্য থাকলে অবশ্যই তোমাদের সাথে বের হতাম, এরা নিজেরাই নিজেদের বিনষ্ট করছে, আর আল্লাহ জানেন যে, এরা মিথ্যাবাদী।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৪২)

২. যুদ্ধে অংশগ্রহণে তালবাহানা
لاَ يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَن يُجَاهِدُواْ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ وَاللّهُ عَلِيمٌ بِالْمُتَّقِينَ
'আল্লাহ ও রোজ কেয়ামতের প্রতি যাদের ঈমান রয়েছে তারা মাল ও জান দ্বারা জেহাদ করা থেকে আপনার কাছে অব্যাহতি কামনা করবে না, আর আল্লাহ সাবধানীদের ভাল জানেন।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৪৪)

إِنَّمَا يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ لاَ يُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ
'নিঃসন্দেহে তারাই আপনার কাছে অব্যাহতি চায়, যারা আল্লাহ ও রোজ কেয়ামতে ঈমান রাখে না এবং তাদের অন্তর সন্দেহগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, সুতরাং সন্দেহের আবর্তে তারা ঘুরপাক খেয়ে চলেছে।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৪৫)

وَلَوْ أَرَادُواْ الْخُرُوجَ لأَعَدُّواْ لَهُ عُدَّةً وَلَـكِن كَرِهَ اللّهُ انبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُواْ مَعَ الْقَاعِدِينَ
'আর যদি তারা বের হবার সংকল্প নিত, তবে অবশ্যই কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো। কিন্তু তাদের উত্থান আল্লাহর পছন্দ নয়, তাই তাদের নিবৃত রাখলেন এবং আদেশ হল বসা লোকদের সাথে তোমরা বসে থাক।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৪৬)

৩. জেহাদ থেকে বেঁচে থাকার ফন্দি
وَمِنْهُم مَّن يَقُولُ ائْذَن لِّي وَلاَ تَفْتِنِّي أَلاَ فِي الْفِتْنَةِ سَقَطُواْ وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةٌ بِالْكَافِرِينَ
'আর তাদের কেউ বলে, আমাকে অব্যাহতি দিন এবং পথভ্রষ্ট করবেন না। শোনে রাখ, তারা তো পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট এবং নিঃসন্দেহে জাহান্নাম এই কাফেরদের পরিবেষ্টন করে রয়েছে।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৪৯)

৪. ঈমানদারের বিপদে আনন্দ-উল্লাস
إِن تُصِبْكَ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكَ مُصِيبَةٌ يَقُولُواْ قَدْ أَخَذْنَا أَمْرَنَا مِن قَبْلُ وَيَتَوَلَّواْ وَّهُمْ فَرِحُونَ
'আপনার কোনো কল্যাণ হলে তারা মন্দবোধ করে এবং কোনো বিপদ উপস্থিত হলে তারা বলে, আমরা আগে থেকেই নিজেদের কাজ সামলে নিয়েছি এবং ফিরে যায় উল্লসিত মনে।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৫০)

৫. মুসলমানদের সঙ্গে মিথ্যা শপথ
وَيَحْلِفُونَ بِاللّهِ إِنَّهُمْ لَمِنكُمْ وَمَا هُم مِّنكُمْ وَلَـكِنَّهُمْ قَوْمٌ يَفْرَقُونَ
'তারা আল্লাহর নামে হলফ করে বলে যে, তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত, অথচ তারা তোমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়, অবশ্য তারা তোমাদের ভয় করে।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৫৬)

৬. সম্পদে পেলে আনন্দ ও না পেলে ক্ষোভ
وَمِنْهُم مَّن يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ فَإِنْ أُعْطُواْ مِنْهَا رَضُواْ وَإِن لَّمْ يُعْطَوْاْ مِنهَا إِذَا هُمْ يَسْخَطُونَ
'তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা সদকা বন্টনে আপনাকে দোষারূপ করে। এর থেকে কিছু পেলে সন্তুষ্ট হয় এবং না পেলে বিক্ষুব্ধ হয়।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৫৮)

৭. নবিজীকে গালমন্দ
وَمِنْهُمُ الَّذِينَ يُؤْذُونَ النَّبِيَّ وَيِقُولُونَ هُوَ أُذُنٌ قُلْ أُذُنُ خَيْرٍ لَّكُمْ يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَيُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِينَ وَرَحْمَةٌ لِّلَّذِينَ آمَنُواْ مِنكُمْ وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ رَسُولَ اللّهِ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
'আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ নবিকে ক্লেশ দেয়, এবং বলে, এ লোকটি তো কানসর্বস্ব। আপনি বলে দিন, কান হলেও তোমাদেরই মঙ্গলের জন্য, আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখে এবং বিশ্বাস রাখে মুসলমানদের কথার উপর। বস্তুতঃ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার তাদের জন্য তিনি রহমতবিশেষ। আর যারা আল্লাহর রসূলের প্রতি কুৎসা রটনা করে, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আজাব।' (সরা তাওবা : আয়াত ৬১)

৮. মন্দ কাজে জড়িত
الْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُم مِّن بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمُنكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوفِ وَيَقْبِضُونَ أَيْدِيَهُمْ نَسُواْ اللّهَ فَنَسِيَهُمْ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
'মুনাফেক নর-নারী সবারই গতিবিধি একরকম; শিখায় মন্দ কথা, ভাল কথা থেকে বারণ করে এবং নিজ মুঠো বন্ধ রাখে। আল্লাহকে ভুলে গেছে তার, কাজেই তিনিও তাদের ভূলে গেছেন নিঃসন্দেহে মুনাফেকরাই নাফরমান।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৬৭)

৯. মুনাফিকরা কাফেরদের প্রতিনিধি
সর্বোপরি মুনাফেকরা ছিল মূলত কাফেরদের প্রতিনিধিত্বকারী। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টিও কুরআনের আজকের তেলাওয়াতের অংশে তুলে ধরেন-
كَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ كَانُواْ أَشَدَّ مِنكُمْ قُوَّةً وَأَكْثَرَ أَمْوَالاً وَأَوْلاَدًا فَاسْتَمْتَعُواْ بِخَلاقِهِمْ فَاسْتَمْتَعْتُم بِخَلاَقِكُمْ كَمَا اسْتَمْتَعَ الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ بِخَلاَقِهِمْ وَخُضْتُمْ كَالَّذِي خَاضُواْ أُوْلَـئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الُّدنْيَا وَالآخِرَةِ وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
'যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তোমাদের চেয়ে বেশি ছিল শক্তিতে এবং ধন-সম্পদের ও সন্তান-সন্ততির অধিকারীও ছিল বেশি; এরপর উপকৃত হয়েছে নিজেদের ভাগের দ্বারা আবার তোমরা ফায়দা উঠিয়েছ তোমাদের ভাগের দ্বারা-যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তীরা ফায়দা উঠিয়েছিল নিজেদের ভাগের দ্বারা। আর তোমরাও বলছ তাদেরই চলন অনুযায়ী। তারা ছিল সে লোক, যাদের আমলসমূহ নিঃশেষিত হয়ে গেছে দুনিয়া ও আখেরাতে। আর তারাই হয়েছে ক্ষতির সম্মুখীন।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৬৯)

তাছাড়া আজকের তারাবিতে পড়া শেষ দিকের ৪টি আয়াতে ওঠে এসেছে আল্লাহ ও তার রাসুলের জন্য জীবন ও মাল দিয়ে জেহাদে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সুসংবাদ এবং অসহযোগিতাকারীদের জন্য শাস্তির ঘোষণা। আর যারা অসহায় গরিব কিংব রুগ্ন তাদের জন্য ছাড়ের বিষয়টিও। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
لَـكِنِ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ مَعَهُ جَاهَدُواْ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ وَأُوْلَـئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
'আর রাসুল এবং সেসব লোক যারা ঈমান এনেছে, তাঁর সাথে তারা যুদ্ধ করেছে নিজেদের জান ও মালের দ্বারা। তাদেরই জন্য নির্ধারিত রয়েছে কল্যাণসমূহ এবং তারাই মুক্তির লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৮৮)

أَعَدَّ اللّهُ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
'আল্লাহ তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে প্রস্রবণ। তারা তাতে বাস করবে অনন্তকাল। এটাই হল বিরাট কৃতকার্যতা।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৮৯)

وَجَاء الْمُعَذِّرُونَ مِنَ الأَعْرَابِ لِيُؤْذَنَ لَهُمْ وَقَعَدَ الَّذِينَ كَذَبُواْ اللّهَ وَرَسُولَهُ سَيُصِيبُ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِنْهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
'আর ছলনাকারী বেদুঈন লোকেরা এলো, যাতে তাদের অব্যাহতি লাভ হতে পারে এবং নিবৃত্ত থাকতে পারে তাদেরই যারা আল্লাহ ও রসূলের সাথে মিথ্যা বলে ছিল। এবার তাদের উপর শীগ্রই আসবে বেদনাদায়ক আযাব যারা কাফের।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৯০)

لَّيْسَ عَلَى الضُّعَفَاء وَلاَ عَلَى الْمَرْضَى وَلاَ عَلَى الَّذِينَ لاَ يَجِدُونَ مَا يُنفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُواْ لِلّهِ وَرَسُولِهِ مَا عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِن سَبِيلٍ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
'দূর্বল, রুগ্ন, ব্যয়ভার বহনে অসমর্থ লোকদের জন্য কোন অপরাধ নেই, যখন তারা মনের দিক থেকে পবিত্র হবে আল্লাহ ও রসূলের সাথে। নেককারদের উপর অভিযোগের কোন পথ নেই। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী দয়ালু।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৯১)

কোরআন নাজিলের মাসে প্রতিদিন তারাবি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্ধারিত অংশ অধ্যয়নে সব মুমিন মুসলমানের হৃদয় হবে আলোকিত। জানতে পারবে ইসলামের বিধি-বিধান ও সুন্দর আলোকিত জীবন সম্পর্কে।

আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের এই বরকতময় মাসে কোরআন বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। কোরআন নাজিলের মাস রমজানে এ মহাগ্রন্থ বুঝে পড়ে সে অনুযায়ী জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।