তাকওয়ার স্থান ও মুত্তাকির পরিচয়

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, ০৬ এপ্রিল ২০২২
ছবি: সংগৃহীত

তাকওয়ার স্থান অন্তর
তাকওয়ার স্থান ও অবস্থান হলো অন্তর। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে তা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অন্তরের বিষয়ে বিশেষ অবগত।’ (সুরা মায়িদা : ৭)।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। সে তার ওপর জুলুম করে না। তাকে সঙ্গীহীন ও সহায়হীনভাবে ছেড়ে দেয় না। সে তার কাছে মিথ্যা বলে না ও তাকে অপমান করে না।’ এরপর তিনি নিজের বুকের দিকে ইশারা করে বলেন, ‘তাকওয়া হচ্ছে এখানে।’ (সহিহ মুসলিম : ২৫৬৪)।

ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য
ইবাদত-বন্দেগির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে এগুলোর রক্ত-গোশত পৌঁছে না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ : ৩৭)।

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের সম্মান করে, নিশ্চয়ই তা অন্তরের তাকওয়ারই বহিঃপ্রকাশ।’ (সুরা হজ : ৩২)।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের শরীর ও বাহ্যিক আকৃতির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তরের প্রতি দৃষ্টি দেন।’ এরপর তিনি তাঁর আঙুল দ্বারা নিজের বুকের দিকে ইশারা করেন। (সহিহ মুসলিম : ৬৩১০)।

মুত্তাকির পরিচয়
পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা মুত্তাকির পরিচয় তুলে ধরেছেন। কোরআনে কারিমের বিভিন্ন আয়াতে কিছু আমলের বর্ণনা করা হয়েছে। যারা এ আমলগুলো করবে, তারাই প্রকৃত অর্থে মুত্তাকি। আমলগুলো হলো—

এক. আকিদা ও বিশ্বাস : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি।’ (সুরা বাকারা : ১৭৭)।

দুই. বাহ্যিক আমলসমূহ : যেমন— নিকটাত্মীয়দের, এতিমদের, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে সম্পদ প্রদান করা; নামাজ কায়েম করা ও জাকাত প্রদান করা ইত্যাদি। যেমনটি সুরা বাকারার ১৭৭ নং আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে।

তিন. উত্তম চরিত্র : যেমন— ওয়াদা পূর্ণ করা, কষ্ট-দুর্দশা ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণ করা, রাগ নিয়ন্ত্রণ করা এবং মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়া। যেমনটি সুরা বাকারার ১৭৭ নং এবং সুরা আলে ইমরানের ১৩৪-১৩৫ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

চার. মুত্তাকিরা যখন কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে বসে, তখন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। যেমনটি সুরা আলে ইমরানের ১৩৫ নং আয়াতে বর্ণিত আছে।

পাঁচ. শায়খ কাফায়ি (রহ.) বলেন, ‘শরিয়তের পরিভাষায় যে ব্যক্তি পরকালের জন্য ক্ষতিকারক বিষয় থেকে নিজেকে হেফাজত করে, তাকে মুত্তাকি বলে। (আল কুল্লিয়াত : ৩৮)।

ছয়. আল্লামা ফিরোজ আবাদি (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাপাচার ও তার মধ্যে গোনাহ বর্জন করার দৃঢ় সংকল্প ও অন্তরকে তার প্রতি উদ্বুদ্ধ করার বিষয়টিকে রক্ষণশীল হিসেবে ধার করে, যা পাপাচার ও তার মধ্যে বাঁধা সৃষ্টি করে, তাকে মুত্তাকি বলে।’ (বাসাইরু যায়িত্তামিজ : ২/৩০০)।

পরকালে তাকওয়ার প্রয়োজনীয়তা
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে দুনিয়াতে সফরের জন্য পাথেয় গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘পরকালের সর্বোত্তম পাথেয় হলো, তাকওয়া। এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা পাথেয় গ্রহণ করো। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় তাকওয়া।’ (সুরা বাকারা : ১৯৭)।

আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে পূর্ণ তাকওয়া হাসিল করে মাহে রমজানকে মহিমান্বিত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

মুনশি/এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।