তাকওয়া অর্জনের জন্য রোজা

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৩০ পিএম, ০৫ এপ্রিল ২০২২

রোজার অনেক বড় ফজিলত হলো ‘তাকওয়াবান হওয়া’। রোজা রাখলে তাকওয়া অর্জন হয়। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা এ মর্মে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, মুমিন মুসলমানের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেন তারা তাকওয়া অর্জন করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

 یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকদের প্রতি ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি বা তাকওয়াবান হতে পারো।' (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

তাকওয়া কী?

হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, তাকওয়া কী? হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আপনি কি কখনো কাঁটা বিছানো পথে হেঁটেছেন? উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হ্যাঁ’। হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু জানতে চাইলেন, (কাঁটা বিছানো পথে) আপনি কীভাবে হেঁটেছেন? উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘খুব সাবধানে, কষ্ট সহ্য করে হেঁটেছি; যাতে আমার শরীরে কাঁটা বিঁধে না যায়। (তখন) হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এটাই হচ্ছে তাকওয়া।’ (তাফসিরে কুরতুবি, ইবনে কাসির)

হাদিসের এই উদাহরণ থেকে প্রমাণিত, কাঁটাযুক্ত পথে কাঁটা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যেভাবে সতর্ক হয়ে চলে, ঠিক সেভাবে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ যা নির্দেশ দিয়েছেন তা মেনে চলার সঙ্গে সঙ্গে যা নিষিদ্ধ করেছেন সেগুলো থেকেও বেঁচে থাকা। আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার জন্য আল্লাহ যা ভালোবাসেন, সেই অনুযায়ী আমল করা। এর নামই ‘তাকওয়া’।

মূলত এ ‘তাকওয়া’ অন্তরের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা কাউকে দেখানো যায় না। সহজ বাংলায় যাকে বলা হয় ‘আল্লাহভীতি’। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে রমজানজুড়ে আল্লাহর ভয় অর্জনে রোজা রাখার বিধান দিয়েছেন। এতে মুমিন মুসলমানের জন্য রয়েছে তাকওয়া অর্জনের মহা সুযোগ। কোরআন নাজিলের এ মাসে রোজা রেখে তাকওয়া অর্জন করতে পারলে মহান আল্লাহ দান করবেন মহামূল্যবান নেয়ামত- হেদায়েত তথা সঠিক পথ। আল্লাহ তাআলা বলেন-

 شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡکُمُ الشَّهۡرَ فَلۡیَصُمۡهُ ؕ وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰهُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَ لِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَ لِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا هَدٰىکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ

‘রমজান মাস এতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়াতের জন্য এবং হেদায়তের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোজা পালন করে। তবে তোমাদের কেউ অসুস্থ থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান এবং তোমাদের জন্য কষ্ট চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূর্ণ কর এবং তিনি তোমাদের যে হেদায়াত দিয়েছেন সে জন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

মনে রাখতে হবে

যেসব শর্তের আলোকে মানুষের ওপর রোজা রাখা ফরজ, তা পাওয়া গেলে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে। এমনটিই মুমিন মুসলমানের প্রতি মহান আল্লাহর নির্দেশ। আর এ নির্দেশ ছিল উম্মতে মুহাম্মাদির আগের লোকদের জন্যও। যারা আল্লাহর বিধান পালন করতে গিয়ে রোজা রাখবে, তারাই হবে তাকওয়াবান বা আল্লাহকে ভয়কারী। এছাড়াও কুরআন-হাদিসে রোজা পালনের অনেক উপকারিতা ঘোষণা করা হয়েছে।

সুতরাং রমজানের নির্দেশনা হলো

দিনের বেলায় হালাল বস্তু খাওয়া ও পান করা, বৈধ স্বামী-স্ত্রীর মেলামেশা থেকে বিরত থাকার মাধ্যম রোজা পালন করা। কেউ যদি আল্লাহর শাস্তির ভয়ে দিনের বেলা উল্লেখিত হালাল কাজগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে তাহলে নিঃসন্দেহে সে আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পারবে।

পাশাপাশি যারা আল্লাহর নির্দেশে হালাল কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারে, নিঃসন্দেহে তারা দুনিয়ার সব হারাম কাজ থেকেও বিরত থাকতে পারবে। আর আল্লাহর ভয়ের মাধ্যমেই তা সম্ভব হয়।

রোজা মানুষকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে হেফাজত করে, যৌন উত্তেজনাকে প্রশমিত করে। রোজা রাখার ফলে মানুষের যখন ক্ষুধা লাগে তখন মানুষ গরিব-দুঃখির না খাওয়ার কষ্ট বুঝতে সক্ষম হয়। তাদের প্রতি রোজাদারের হৃদয় ও মন আকৃষ্ট হয়। তাদের ক্ষুধার কষ্ট লাগবে রোজাদারের দান-খয়রাত করার মানসিকতা তৈরি হয়।

কষ্টের সম্মুখীন হওয়া ছাড়া মুখে শুনে কিংবা বই পড়ে কোনো মানুষই কষ্টের পরিপূর্ণ বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারে না। যখন মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হয় তখনই কেবল বাস্তব কষ্ট কেমন তা বুঝতে সক্ষম হয়। যেমনিভাবে গাড়িতে চড়া ব্যক্তি পায়ে হাটা ব্যক্তির কষ্ট কখনো অনুধাবন করতে পারবে না, যতক্ষণ না সে সমান দূরত্ব পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি না দেয়।

সুতরাং আল্লাহর নির্দেশে রমজানের উপবাস থাকার মাধ্যমে রোজা পালন করলেই মানুষ প্রকৃত কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে। আর তাতে রোজা প্রকৃত শিক্ষাও মানুষের সামনে ফুটে ওঠে। মানুষ হয়ে ওঠে পরহেজগার বা তাকওয়াবান।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমে কুরআনের ঘোষণা তাকওয়া অর্জন করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালে নেয়ামতে পরিপূর্ণ জীবন পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।