ঋণ মুক্তির দোয়া কখন-কীভাবে পড়বেন?
ঋণ পরিশোধ সম্পর্কে কত সুন্দর উপদেশ! নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম; যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।’ কেউ যেন ঋণ পরিশোধে গড়িমসি না করে সে জন্য নবিজী বলেছেন, ‘ঋণ পরিশোধ না করা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু একান্তই যদি কেউ ঋণ পরিশোধে অপরাগ হয় তবে তার করণীয় কী? ঋণমুক্তিতে তিনি কখন কীভাবে আল্লাহর সাহায্য চাইবেন?
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘একজন চুক্তিবদ্ধ গোলাম (ক্রীতদাস) তাঁর কাছে এসে বলে, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে আমি অপরাগ হয়ে পড়েছি। আমাকে আপনি সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দেব না; যা আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর সীর (সাবীর) পর্বত পরিমাণ ঋণও থাকে তবে আল্লাহ তাআলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেবেন। তিনি বললেন, তুমি বল-
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার হালালের মাধ্যমে আমাকে তোমার হারাম থেকে দূরে রাখ এবং তোমার দয়ায় তুমি ছাড়া অন্য কারো মুখাপেক্ষী হওয়া থেকেও আমাকে আত্মনির্ভরশীল (ঋণমুক্ত) করো।’ (তিরমিজি)
ঋণমুক্তির নিয়তে সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। ঋণমুক্ত হওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। তবেই মহান আল্লাহ ওই বান্দাকে ঋণ থেকে মুক্ত করবেন ইনশআল্লাহ।
শুধু তা-ই নয়, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় ভয়-চিন্তা-পেরেশানির পাশাপাশি ঋণ থেকে মুক্তি চাইতেন। তাই যারা ঋণগ্রস্ত; তাদের জন্য ঋণমুক্তিতে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত আমলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া জরুরি। হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন অবতরণ করতেন, তখন প্রায়ই তাকে এই দোয়া পড়তে শুনতাম-
اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি ওয়াল আঝযি ওয়াল কাসালি ওয়াল বুখলি ওয়াল ঝুবনি ওয়া দালায়িদ-দাইনি ওয়া গালাবাতির-রিঝালি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে আশ্রয় চাই; অক্ষমতা ও অলসতা থেকে আশ্রয় চাই; কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে আশ্রয় চাই; ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে মুক্তি চাই।’ (বুখারি)
বিশেষ করে দ্বিতীয় দোয়াটি ঋণ পরিশোধের নিয়ত ও প্রচেষ্টার পাশাপাশি নামাজের দুই সেজদার মাঝে বসে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করা। বিশুদ্ধ নিয়তে আল্লাহর কাছে ঋণমুক্তির আশ্রয় কামনা করলে মহান আল্লাহ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের তা থেকে মুক্ত করবেন ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ঋণ পরিশোধে বিশুদ্ধ নিয়ত ও সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পাশাপাশি সকাল-সন্ধ্যা এবং প্রত্যেক নামাজের দুই সেজদার মাঝে উল্লেখিত দোয়াগুলো পড়া। আল্লাহর কাছে ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক কামনা করা।
ঋণ পরিশোধের সময়ও দোয়া করা
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু রবিআ আল-মাখযুমি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুনাইন যুদ্ধের সময় তার কাছ থেকে তিরিশ অথবা চল্লিশ হাজার দিরহাম ঋণ নিয়েছিলেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তার পাওনা পরিশোধ করেন। এরপর নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে (দোয়া করে) বললেন-
بارَكَ اللَّهُ لَكَ فِي أَهْلِكَ وَمَالِكَ، إِنَّمَا جَزَاءُ السَّلَفِ الْحَمْدُ وَالأَدَاءُ
উচ্চারণ : ‘বারাকাল্লাহু লাকা ফি আহলিকা ওয়া মালিকা; ইন্নামা ঝাযাউস-সালাফিল হামদু ওয়াল-আদাউ।’
অর্থ : ‘আল্লাহ তাআলা তোমাকে তোমার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। নিশ্চয়ই ঋণের প্রতিদান হলো- তা পরিশোধ করা এবং প্রশংসা করা।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঋণ পরিশোধের তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। ঋণ পরিশোধ করার মাধ্যমে সবাইকে সর্বোত্তম আমলকারী হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস