যেসব আমলকারীকে জাহান্নাম স্পর্শ করবে না
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন শ্রেণীর মানুষের ব্যপারে সুখবর দিয়েছেন। যাদের চোখ কখনো জাহান্নাম দেখবে না। এসব লোক তিনটি চমৎকার গুণের অধিকারী। এ গুণের কারণেই তাদের চোখ জাহান্নাম দেখবে না। হাদিসের বর্ণনায় এই তিনশ্রেণীর লোক কারা?
হজরত মুয়াবিয়া ইবনু হায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষ রয়েছে, যাদের চোখ জাহান্নাম দেখবে না। তারা হলেন-
১. যারা আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়।
২. যারা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে।
৩. যারা বেগানা নারী দেখে চোখ নিচু করে।’ (তারগিব)
আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেওয়া
আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সীমান্ত পাহারা দেওয়ার ফজিলত অনেক বেশি। আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেওয়া ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুণ স্পর্শ করবে না। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন-
> ‘আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেওয়া; দুনিয়া ও এর মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম।’ (বুখারি, মিশকাত)
> ‘একটি দিন ও রাত আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা এক মাস দিনে রোজা এবং রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে থাকার চেযেও উত্তম।’ (মুসলিম, মিশকাত)
এছাড়াও সীমান্ত পাহারা দেওয়া এমন একটি আমল যা ছাদকায়ে জারিয়ার সমতুল্য। এর সওয়াব সে কেয়ামত পর্যন্ত পেতে থাকবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, তারগিব)
আল্লাহর ভয়ে কাঁদা
কোরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে আল্লাহকে ভয় করার কথা এসেছে। যা অন্তরে আল্লাহর ভয় যত বেশি, সে তত বেশি আল্লাহর কাছাকাছি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবে। পরকালের তার মর্যাদা থাকবে সবার উপরে। আর আল্লাহর ভয়ে যার চোখ থেকে পানি নির্গত হয়; ওই ব্যক্তির চোখের পানি আল্লাহর কাছে অনেক মর্যাদার। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে দুটি ফোঁটা ও দুটি চিহ্নের চেয়ে অধিক প্রিয় আর কিছু নেই। তাহলো-
১. আল্লাহর ভয়ে নির্গত ছোখের পানির ফোঁটা।
২. আল্লাহর রাস্তায় নির্গত রক্তের ফোঁটা।’ (তিরমিজি)
যাদের চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি ঝরে; এ চোখ কখনো জাহান্নাম দেখবে না।
চোখের হেফাজত করা
‘(হে রাসুল! আপনি) মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে; এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩০)
আল্লাহ তাআলা মানুষকে চোখের হেফাজত করতে বলেছেন। যারা চোখের হেফাজত করতে পারবে; সে চোখ কখনো জাহান্নাম দেখবে না। আল্লাহ তাআলা মানুষের সবকিছু জানেন। কে চোখের আমানত রক্ষা করো কিংবা কে চোখের খেয়ানত করলো তাও তিনি জানেন। চোখের খেয়ানত ও অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরও ঘোষণা করেন-
یَعۡلَمُ خَآئِنَۃَ الۡاَعۡیُنِ وَ مَا تُخۡفِی الصُّدُوۡرُ
‘তিনি চোখের গোপন চাহনি সম্পর্কেও অবগত, আর অন্তর যা গোপন করে সে সম্পর্কেও।’ (সুরা মুমিন : আয়াত ১৯)
মনে রাখতে হবে
আল্লাহ তাআলার অজস্র নেয়ামতে সুসজ্জিত সুন্দর এই পৃথিবী। যা দৃষ্টিশক্তি ছাড়া দেখা সম্ভব নয়। মহান রাব্বে কারিম দয়া করে মানুষকে দান করেছেন দেখার শক্তি। অথচ এ দৃষ্টির হেফাজত করার ক্ষেত্রে মানুষ প্রায় অক্ষম হয়ে পড়ে। দৃষ্টির যথাযথ ব্যবহারের নিশ্চিত না করার কারণেই মানুষ শাস্তি ভোগ করবে। যে কারণে আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের অনেক স্থানে দৃষ্টির হেফাজতের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
দৃষ্টির হেফাজত করতে না পারলে অনেক গুনাহ ও অন্যায় সংঘটিত হয়ে যায়। কারণ চোখ যা দেখে, অন্তরে তার উদ্রেক ঘটে। আর কলুষিত অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা কিংবা ভয় কোনটাই স্থান পায় না। তাই লুকিয়ে দেখা, আঁড় চোখে দেখা তথা চোখের এ খেয়ানত থেকে সব সময় সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ আল্লাহ তাআলা মানুষের চোখের এ খেয়ানত আঁড় চোখে দেখা বা দৃষ্টির খেয়ানত সম্পর্কে অবহিত। সে কথাই তিনি কোরআনে এভাবে তুলে ধরেছেন-
‘তিনি চোখের গোপন চাহনি সম্পর্কেও অবগত, আর অন্তর যা গোপন করে সে সম্পর্কেও।’ (সুরা মুমিন : আয়াত ১৯)
আর এ আয়াতের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ তাঁর পরিপূর্ণ জ্ঞানের বর্ণনা তুলে ধরেছেন। তিনি সব বস্তুরই জ্ঞান রাখেন; তা যত ছোট হোক বা বড়, সূক্ষ্ম হোক বা স্থুল, উচ্চ মানের হোক কিংবা তুচ্ছ। এই জন্য যখন আল্লাহর জ্ঞানের ও তাঁর (সবকিছুকে) পরিবেষ্টন করে রাখার অবস্থা হল এই, তখন মানুষের উচিত তাঁর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা এবং নিজেদের অন্তরে প্রকৃতার্থে তাঁর ভয় সৃষ্টি করা।
আর চোখের খেয়ানত হল, আড়চোখে দেখা। পথ চলার সময় কোন সুন্দরী নারীকে চোরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখা ইত্যাদি।
সুতরাং মানুষের উচিত, উল্লেখিত ৩টি আমল যথাযথ পালন করা। জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদের হেফাজত করা। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করে পরকালের সফলতা অর্জন করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত তিন শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। জাহান্নাম থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম