কোরআনে যাদের সফল বলা হয়েছে
ভোগ-বিলাসই হবে আখেরাতের কঠিন যন্ত্রণার কারণ। পক্ষান্তরে সঠিক পথে চলতে গিয়ে দুনিয়ার দুঃখ-কষ্টই হবে আখেরাতের সঞ্চয় ও সফলতার উপায়। তাহলে সফল কারা? এ প্রশ্নের উত্তরে মহান আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেছেন-
فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ
‘সুতরাং যাকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং বেহেশতৈ প্রবেশ করানো হবে; সেই হবে সফলকাম।’
এটি একটি আয়াতের মধ্যাংশ। আয়াতের শুরুতে আল্লাহ মানুষের উদ্দেশ্যে বলেছেন- ‘প্রত্যেক জীবই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। প্রত্যেককেই পরকালে (তাদের কর্ম অনুযায়ী) পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে।’
আর আয়াতের শেষাংশে মানুষকে সতর্ক করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- ‘আর দুনিয়ার জীবন ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’
মানুষ যাতে সফলতার পথে হাটে। নিজেকে সফল করতে চায়। সে জন্য আল্লাহ তাআলা মানুষকে সতর্ক ও উৎসাহ দিতেই কোরআনের একাধিক আয়াতে বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেন-
کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ
‘জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কেয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে। সুতরাং যাকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং বেহেশতে প্রবেশ করানো হবে; সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮৫)
আয়াতের শিক্ষা
এই আয়াতে কারিমায় মহান আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন। আর এর সঙ্গে সফলতার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। তাহলো-
প্রথমত : মৃত্যু এমন এক ধ্রুব সত্য বিষয় যে, তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার কো পথ নেই।
দ্বিতীয়ত : দুনিয়াতে মানুষ ভাল ও মন্দ যে যা-ই করুক না কেন, তাকে পরকালে তার কর্মের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে।
তৃতীয়ত : প্রকৃত সফলতা সেই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে- ‘যে দুনিয়াতে থাকাকালীন স্বীয় প্রতিপালককে সন্তুষ্ট করে নিয়েছে এবং যার ফল স্বরূপ তাকে জাহান্নাম থেকে দূর করে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
চতুর্থত : দুনিয়ার (চাকচিক্যময়) জীবন ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ধোঁকা থেকে যে নিজেকে বাঁচিয়ে নিতে পারবে, সেই হবে সৌভাগ্যবান। আর যে এই ধোঁকার জালে ফেঁসে যাবে, সেই হবে ব্যর্থ ও হতভাগা।
দুনিয়াতে এমন কোনো মানুষ পাওয়া যাবে না; যে সফলতা চায় না। এ সফলতা একেকজন একেক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্ধারণ করে। যেমন-
> কেউ দুনিয়ার প্রচুর সম্পদ, নারী, গাড়ী-বাড়ী, ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি ইত্যাদির মাধ্যমে নির্ধারণ করে।
> কেউ আবার সুস্বাস্থ্যকে নির্ধারণ করে।
> কেউ আবার পরকালের সফলতায় নিজেকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।
কিন্তু প্রকৃত সফলতা কিসে?
বিষয়টি আল্লাহ তাআলা চমৎকার ভাবে এ আয়াতে তুলে ধরেছেন-
فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ
‘সুতরাং যাকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং বেহেশতে প্রবেশ করানো হবে; সেই হবে সফলকাম।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতে এক বেত পরিমান জায়গা দুনিয়া ও তাতে যা আছে তার থেকে উত্তম’- তারপর তিনি উপরোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন।’ (তিরমিজি)
সুতরাং আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের তিন সুরায় চিন্তাশীল মানুষের জন্য সফলতা লাভে সতর্ক করতে ঘোষণা করেন-
১. کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ
‘জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কেয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে। সুতরাং যাকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং বেহেশতে প্রবেশ করানো হবে; সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮৫)
২. کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ نَبۡلُوۡکُمۡ بِالشَّرِّ وَ الۡخَیۡرِ فِتۡنَۃً ؕ وَ اِلَیۡنَا تُرۡجَعُوۡنَ
‘জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি। আর আমার কাছে তোমরা ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৩৫)
কে সফল হবে আর কে ব্যর্থ হবে এ আয়াতে মানুষকে পরীক্ষা করার সে বিষয়টি ওঠে এসেছে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে পরীক্ষা করবেন-
> কখনো দুঃখ-দুর্দশা দিয়ে;
> কখনো পার্থিব সুখ-শান্তি দিয়ে;
> কখনো সুস্বাস্থ্য ও প্রশস্ততা দিয়ে;
> কখনো অসুস্থতা ও সংকীর্ণতা দিয়ে;
> কখনো ধনবসম্পদ ও বিলাস-সামগ্রী দিয়ে;
> কখনো দারিদ্রতা ও অভাব দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন। যারা এসব ক্ষেত্রে সফল হয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত নিশ্চিত করতে পারেন। তারাই হলেন সফল।
৩. মানুষের জন্য সফলতা ছাড়া বিকল্প কিছু চিন্তা করার সুযোগ নেই। কারণ সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। বিচার-জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ۟ ثُمَّ اِلَیۡنَا تُرۡجَعُوۡنَ
‘প্রত্যেক আত্মাই মরণের স্বাদ গ্রহণ করবে; এরপর তোমরা আমারই কাছে ফিরে আসবে।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৫৭)
মনে রাখতে হবে
যেহেতু সব প্রাণীকে মৃত্যুবরণ করতে হবে, দুনিয়ার নির্ধারিত সময় শেষে সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে; তাই পরকালের সফলতা লাভে দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে মত্ত না হয়ে আল্লাহর বিধান মেনে জীবন পরিচালনা করার বিকল্প নেই।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাত দানের মাধ্যমে প্রকৃত সফলতা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম