সব সময় অজু অবস্থায় থাকার ফজিলত ও মর্যাদা
অজু হচ্ছে পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। এটি অনেক ফজিলতপূর্ণ ইবাদতও বটে। শুধু তা-ই নয়, অজু অবস্থায় ঘুমানোর ফজিলতও অনেক বেশি। সব সময় অজু অবস্থায় থাকার ব্যাপারে ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনাও রয়েছে। কী সেই সব দিকনির্দেশনা?
শুধু নামাজ কোরআন তেলাওয়াত হজ ও ওমরার জন্যই ওজু অবস্থায় থাকা প্রয়োজন এমনটি নয় বরং সব সময় অজু অবস্থায় থাকার ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা পবিত্র অবস্থায় থাকা ব্যক্তিদের ভালোবাসেন। কোরাআনুল কারিমে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَ یُحِبُّ الۡمُتَطَهِّرِیۡنَ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তওবাকারী এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২২২)
সব সময় অজু অবস্থায় থাকার আমলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিশেষ আমলও ছিল এটি। তিনি সব সময় অজু অবস্থায় থাকতেন। আর যখনই অজু করতেন সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। কানজুল উম্মালে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেরাজের রাতে জান্নাতেও বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু হাটাচলায় জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, ‘তোমার সর্বোত্তম আমল সম্পর্কে আমাকে বল, আমি জান্নাতে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমার সর্বোত্তম আমল হলো, আমি রাতে অথবা দিনে যখনই পবিত্রতা অর্জন করি তখনই তার দ্বারা সাধ্যমত নামাজ আদায় করে থাকি।’
সব সময় অজু অবস্থায় থাকার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। তাহলো-
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পরিপূর্ণভাবে অজু সম্পাদন করে, (তার জন্য) ফরজ নামাজগুলোর মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়।’ (মুসলিম)
২. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছিলেন, ‘হে ছেলে! সম্ভব হলে সবসময় অজু অবস্থায় থাক। কেননা মৃত্যুর ফেরেশতা অজু অবস্থায় যার রূহ কবজ করবে; তার শাহাদাতের মর্যাদা লাভ হয়।’ (বায়হাকি)
৩. সব সময় অজুর সঙ্গে থাকা ব্যক্তি হাশরের ময়দানে উজ্জ্বল চেহারার হবে। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত নুয়াইম মুজমির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। এরপর তিনি অজু করে বললেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন আমার উম্মাতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে যে, অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল ঝলমল করতে থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ ঝলমলতা বাড়িয়ে নিতে চায় সে যেন বেশি বেশি অজু করে।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
৪. এমনকি বিশ্রামের জন্য শয্যাগ্রহণের সময় অজু করে বিশ্রাম নিলে বা ঘুমালেও রয়েছে বিশেষ ফজিলত। হাদিসে এসেছে হজরত বারা ইবনে আযিব হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন,
إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلَاةِ ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الْأَيْمَنِ
‘যখন তুমি তোমার শয্যা গ্রহণের ইচ্ছা করবে, তখন সালাতের ন্যায় অজু করে ডান কাত হয়ে শয়ন করবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
৫. যে ব্যক্তি পবিত্রাবস্থায় (অজু অবস্থায় ) ঘুমায় তার সাথে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে। অতঃপর সে ব্যক্তি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ্র সমীপে ফেরেশতাটি প্রার্থনায় বলে থাকে, হে আল্লাহ্! তোমার অমুক বান্দাকে ক্ষমা করে দাও, কেননা সে পবিত্রাবস্থায় ঘুমিয়েছিল।’ (আল ইহসান ফি তাকরিব, ইবনে হিব্বান)
সুতরাং মানুষের উচিত সব সময় অজু অবস্থায় থাকা। এমনকি ঘুমাতে যাওয়ার সময়ও অজু অবস্থায় ঘুমানো। অজু অবস্থায় থাকার মাধ্যমে হাদিসে উল্লেখিত ফজিলত অর্জন করাই মুমিন মুসলমানের কাজ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য পবিত্র অবস্থায় থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম