মানবজাতির জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রথম ঘর কোনটি?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:০৪ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২১

প্রাচীনকাল থেকেই কাবা ঘরের প্রতি মানবজাতির সম্মান প্রদর্শন অব্যাহত। আর জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সমগ্র মানবগোষ্ঠী এ ঘরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত এ ঘরের আঙিনায় রয়েছে মাকামে ইবরাহিম। এ ঘরের আঙিনায় যারাই যাবে তারা থাকবে নিরাপদ। এটি হলো পবিত্র কাবা শরিফ। মহান আল্লাহ তাআলা এর প্রকৃতিতে এমন মাহাত্ম্য নিহিত রেখেছেন যে, মানুষের অন্তর আপনা-আপনিই এর দিকে আকৃষ্ট হয়। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ এ বরকতময় ঘরের স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষণা করেন-

إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِّلْعَالَمِينَ

নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা বক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত।[1] তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের জন্য পথের দিশারী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯৬)

আলোচ্য আয়াতে কাবা শরিফের কথা বলা হয়েছে। আবার এ ঘরের শ্রেষ্ঠত্বের কয়েকটি বিশেষ দিকও বর্ণনা করা হয়েছে। তাহালো-

প্রথমত : এটি সারা বিশ্বে সর্বপ্রথম ইবাদাতের স্থান।

দ্বিতীয়ত : এই পবিত্র ঘর বরকতময় ও কল্যাণের আধার।

তৃতীয়ত : এ ঘর সমগ্র সৃষ্টির জন্য পথপ্রদর্শক।

আয়াতে বর্ণিত প্রথম শ্রেষ্ঠত্বের সারমর্ম এই যে, মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট করা হয়, এটিই সেই ঘর; কাবা শরিফ; যা বাক্কায় তথা মক্কায় অবস্থিত।

‘বাক্কা’ শব্দের অর্থ মক্কা। এখানে ‘মীম’ অক্ষরকে ‘বা’ অক্ষর দ্বারা পরিবর্তন করা হয়েছে। আরবি ভাষায় এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। অথবা উচ্চারণ ভেদে এর অপর নাম বাক্কা।

অতএব কাবা ঘরই বিশ্বের সর্বপ্রথম ইবাদাতের ঘর। তখন এর অর্থ দাঁড়াবে- মানুষের বসবাসের জন্য আগেই ঘর নির্মিত হয়েছিল কিন্তু ইবাদাতের জন্য কাবা শরিফই সর্বপ্রথম নির্মাণ করা হয়েছিল। এ মতটি হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও বর্ণিত রয়েছে।

তাছাড়া আয়াতের অর্থ এটিও হতে পারে যে, বিশ্বের সর্বপ্রথম ঘর ইবাদাতের জন্যই নির্মাণ করা হয়েছিল। এর আগে কোনো উপাসনালয়ও ছিল না এবং বসবাসের ঘরও ছিল না। এ কারণে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরসহ যুগশ্রেষ্ঠ অনেক সাহাবি ও তাবিঈগণের মতে কাবাই বিশ্বের সর্বপ্রথম ঘর। তবে প্রথম অর্থটিই অধিক গ্রহণযোগ্য মত।

কাবা ঘরের শ্রেষ্ঠত্ব

আলোচ্য আয়াত দ্বারা পবিত্র কাবা শরিফের একটি শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হলো যে, এ হচ্ছে জগতের সর্বপ্রথম ঘর। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একবার জিজ্ঞাসা করেন যে, জগতের সর্বপ্রথম মসজিদ কোনটি? উত্তর হলো- মসজিদুল হারাম। আবারও প্রশ্ন করা হলো- এরপর কোনটি? উত্তর হলো- মসজিদে বায়তুল-মুকাদ্দাস। আবার জিজ্ঞাসা করলেন- এই দুটি মসজিদ নির্মাণের মাঝখানে কতদিনের ব্যবধান ছিল? উত্তর হলো- চল্লিশ বছর।’ (বুখারি, মুসলিম)

উল্লেখিত হাদিসে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের হাতেই কাবা শরিফ নিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল বলে বুঝা যায়। তাই সবচেয়ে প্রামাণ্য সঠিক মত হলো- হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামই সর্ব প্রথম কাবা শরিফ নিৰ্মাণ করেছিলেন।

কারণ এ হাদিসে বায়তুল-মুকাদ্দাস নির্মাণের ব্যবধান বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা বিভিন্ন হাদিস থেকে প্রমাণিত রয়েছে যে, বায়তুল-মুকাদ্দাসের প্রথম নির্মাণও হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের হাতে কাবা শরিফ নির্মাণের ৪০ বছর পর সম্পন্ন হয়। এরপর হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম বায়তুল-মুকাদ্দাসের পুণঃনির্মাণ করেন। এভাবে বিভিন্ন হাদিসের পরস্পর বিরোধিতাও দূর হয়ে যায়।

তবে এ আয়াত নাজিলের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণও রয়েছে। আর তাতেও প্রমাণিত হয় যে, কাবা শরিফই ইবাদত-বন্দেগির জন্য বরকতময় প্রথম ঘর। কারণ-

এ আয়াত ইয়াহুদিদের দ্বিতীয় অভিযোগের উত্তর। তারা বলতো- বায়তুল মাকাদ্দাসই প্রথম ইবাদতখানা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার সাথীরা নিজেদের ক্বেবলা কেন পরিবর্তন করে নিলো? এর উত্তরে বলা হল- তোমাদের এই দাবিও ভুল। প্রথম যে ঘর আল্লাহর ইবাদতের জন্য নির্মিত হয়, তাহলো- সেই ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত। 

মনে রাখতে হবে

মুসলিম উম্মাহ আজও বছরব্যাপী ওমরা পালনে পবিত্র নরগী মক্কার কাবা শরিফে গমন করেন। হজের নির্ধারিত সময়ে ফরজ হজ পালনে সেখানে উপস্থিত হয় মুসলিম উম্মাহ। কেয়ামতের আগ পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকবে। আর এ স্থানটি থাকবে ফেতনামুক্ত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কাবা ঘরে ইবাদত-বন্দেগি ও হজ-ওমরাহ করার তাওফিক দিন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।