ধ্বংসশীল দুনিয়ায় মানুষের করণীয় কী?
সৃষ্টি জগতের যা কিছু আছে, তার সব কিছুই ধ্বংসশীল। এটির যেসর চিরস্থায়ীত্ব নেই আবার এটি আনন্দ-উৎসবের জায়গাও নয়। আর মানুষ ও জ্বীনকে আল্লাহ তাআলা এমনি এমনি সৃষ্টি করেননি। ধ্বংসশীল এ দুনিয়ায় মানুষ সৃষ্টিতে মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য কী?
হ্যাঁ, এমনি এমনি মহান আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করেননি বরং ধ্বংসশীল এ দুনিয়া মানুষকে তিনি পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছেন। সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগি তথা তার দাসত্ব করা। যা মানুষকে পরকালে চিরস্থায়ী সফলতা দান করবে।
ধ্বংসশীল এ দুনিয়া সেসব মানুষের জন্য উত্তম স্থান; যারা নিজেদেরকে দুনিয়ার চাকচিক্য ও আকর্ষণ থেকে দূরে রেখে বুদ্ধি ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে এগিয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা ধ্বংসশীল এ দুনিয়া সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করে বলেন-
‘নিশ্চয় দুনিয়ার জীবনের তুলনাতো পানির ন্যায় যা আমি আকাশ থেকে নাজিল করি অতঃপর তার সঙ্গে জমিনের উদ্ভিদের মিশ্রণ ঘটে। যা মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তু ভোগ করে থাকে। অবশেষে যখন জমিন শোভিত ও সজ্জিত হয় এবং অধিবাসীরা মনে করে জমিনে উৎপন্ন ফসল করায়ত্ব করতে তারা সক্ষম, তখন তাতে রাতে কিংবা দিনে আমার আদেশ চলে আসে। অতঃপর আমি সেগুলোকে কর্তিত ফসল বানিয়ে দেই। আর তাতে মনে হয়, গতকালও এখানে কোনো কিছু ছিল না। এভাবে আমি চিন্তাশীল মানুষের জন্য নিদর্শনসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করি।’ (সুরা ইউনুস : আয়াত ২৪)
সুতরাং দুনিয়ার চাকচিক্য, সৌন্দর্য, লোভ ইত্যাদি বিষয়ে জড়িয়ে পড়ার মানেই হচ্ছে নিজেকে মারাত্মক ভুল ও বিপথগামী করে তোলা। দুনিয়ার সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও ঐশ্বর্যের তুলনায় আখেরাতের নেয়ামত অনেক বেশি মর্যাদার এবং তুলনাহীন।
ধ্বংসশীল এ দুনিয়ায় যারা আরাম আয়েশের পরিবর্তে দুঃখ ও কষ্টের জীবন-যাপন করবে, তারা পরকালের নেয়ামত পেয়ে ধন্য হবেন। ভুলে যাবেন দুনিয়ার সব কষ্ট। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি ঘোষণা করেন-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি নেয়ামতের অধিকারীকে কেয়ামতের দিন নিয়ে আসা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামের আগুনে একবার প্রবেশ করানোর পর বের করে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কি তোমার দুনিয়ার জীবনে কোনো ভালো বা কল্যাণ কিছু পেয়েছিলে? তুমি কি কোনো নেয়ামত পেয়েছিল? সে বলবে, ‘না’।
পক্ষান্তরে দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন কষ্টের মধ্যে থাকা এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, তারপর তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কি কোনো দুঃখ কষ্ট দেখেছিলে? সে বলবে, ‘না’। (মুসলিম)
মনে রাখতে হবে
আল্লাহ তাআলা ছাড়া সৃষ্টি জগতের সব কিছুই ক্ষনস্থায়ী। যারা দুনিয়ার পেছনে বেশি ছুটতে থাকে, দুনিয়ার চাকচিক্য তাদের থেকে দূরে চলে যায়। আর যারা দুনিয়া বিমুখ হয়, দুনিয়া তাদেরকে পেছন থেকে ধাওয়া করে। এটা দুনিয়ার চরিত্র। তাই আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার পরিচয় এভাবে তুলে ধরেছেন-
‘তাদের কাছে দুনিয়ার জীবনের উপমা বর্ণনা কর। তাহলো পনির ন্যায়, যা আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করি। যার সংমিশ্রণে মাটির গাছপালা সবুজ শ্যামল হয়ে ওঠে। অতঃপর সেটা শুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস তাকে ওড়িয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ সব বিষয়ে র্স শক্তিমান।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ৪৫)
সুতরাং মানুষের উচিত পরকালের চিরস্থায়ী কল্যাণে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদতে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করা। সব সময় ধ্বংসশীল এ দুনিয়া থেকে বেঁচে থাকতে এ উপদেশগুলো স্মরণ রাখা। তাহলো-
১. দুনিয়া চিরস্থায়ী নয়, একদিন তা শেষ হয়ে যাবে।
২. দুনিয়াকে কোনোভাবেই পরকালের ওপর প্রাধান্য দেয়া যাবে না।
৩. দুনিয়াতে কেউই স্থায়ী হবে না। যতই সুন্দর করে দুনিয়াকে সাজানো হোক না কেন, একদিন সব সাজ-সজ্জা ত্যাগ করে এ দুনিয়া ছেড়ে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে ফিরে যেতে হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের যাবতীয় কল্যাণের লক্ষ্যে দুনিয়ায় মহান আল্লাহর পথে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম