আল্লাহ কেন মানুষকে ‘তাকওয়া’র নির্দেশ দিয়েছেন?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:১৪ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২১

তাকওয়া বা পরহেজগারী মূলত আল্লাহকে ভয় করার নাম। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে তাকওয়া অবলম্বনের কথা বলেছেন। যার যতবেশি তাকওয়া সে আল্লাহর কাছে ততবেশি মর্যাদাবান। এ জন্য ছোট-বড় সব প্রজন্মকেই তাকওয়ার শিক্ষা দেওয়া জরুরি। কেননা খাঁটি মুসলিম হওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে তাকওয়া। কোরআনুল কারিমের একটি সতর্কতামূলক আয়াত থেকে তা প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ
‘হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০২)

আল্লাহ তাআলাকে ভয় করার নির্দেশ ছিল আগের ও পরের সবার জন্য। কোরআনুল কারিমে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন এভাবে-
وَ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ وَ لَقَدۡ وَصَّیۡنَا الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ وَ اِیَّاکُمۡ اَنِ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ وَ اِنۡ تَکۡفُرُوۡا فَاِنَّ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ غَنِیًّا حَمِیۡدًا
‘আসমান ও জমিনে যা আছে সব আল্লাহরই; তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। আর তোমরা কুফরি করলেও আসমানে যা আছে ও জমিনে যা আছে তা সবই আল্লাহর এবং আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসাভাজন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৩১)

সুতরাং সবার জন্য তাকওয়া অবলম্বন করা ফজর। তাকওয়া বা আল্লাহকে ভয় করা শুধু উপদেশই নয় বরং এটি আগের সব নবি-রাসুলের উম্মতের জন্য যেমন ফরজ ছিল; তেমনি উম্মতে মুহাম্মাদির সবার জন্যও তাকওয়া বা আল্লাহকে ভয় করা আবশ্যক। আর তাকওয়ার মূল কথা হচ্ছে-
‘আল্লাহ তাআলার ওসিয়ত ও নির্দেশ হচ্ছে, তাক্বওয়া অবলম্বন করা; তাঁর আদেশ মেনে চলা এবং তাঁর নিষেধকৃত বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকা।

অন্য আয়াতে মহান রব ঘোষণা করেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ لۡتَنۡظُرۡ نَفۡسٌ مَّا قَدَّمَتۡ لِغَدٍ ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর প্রত্যেকেরই ভেবে দেখা জরুরি যে, আগামীকালের (কেয়ামতের) জন্য সে কি অগ্রিম পাঠিয়েছে। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত।’ (সুরা হাশর : আয়াত ১৮)

কোরআনুল কারিমের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী হাদিসে পাকেও প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে তাকওয়া অবলম্বনের অসিয়ত করেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
১. একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের নামাজ পড়ালেন। নামাজ শেষে তিনি তাঁদের দিকে মুখ করে বসে একটি অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী ভাষণ শোনালেন। সেই বক্তব্য শুনে সাহাবাদের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল এবং তাঁদের হৃদয়ে কম্পন শুরু হল। তখন সাহাবারা আবেদন করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! মনে হচ্ছে, এটা যেন আপনার বিদায়ী ভাষণ! সুতরাং আপনি আমাদেরকে কিছু অসিয়ত করুন! তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ
‘আমি তোমাদেরকে অসিয়ত’ করছি (উপদেশ দিচ্ছি), তোমরা আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্ব কর এবং তোমাদের (নেতাদের) আনুগত্য স্বীকার কর এবং তাদের কথা শ্রবণ কর।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ)

এ তাকওয়া অবলম্বন শুধু নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে অসিয়তই নয় বরং এটি মানবজাতির জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ অসিয়ত। আগের ও পরের সব মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অসিয়ত। মানুষের জন্য যার চেয়ে বড় আর কোনো অসিয়ত হতে পারে না।

সব যুগের নবি-রাসুলগণও তাদের যুগে যুগে নিজ নিজ উম্মতদেরকে তাকওয়ার অসিয়ত করেছেন। এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও তার কাছে কেউ অসিয়তের অনুরোধ জানালে তিনি প্রথমেই তাকওয়ার অসিয়ত করতেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
২. এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে অসিয়ত চাইলে তিনি বললেন, ‘তোমার কর্তব্য হবে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করা। আর তুমি প্রতিটি উঁচুস্থানে উঠা বা উল্লেখযোগ্য স্থানে তাকবির বা আল্লাহর শ্ৰেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা।’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)

তাছাড়াও প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনিই কোথাও কোনো সেনাদল পাঠাতেন; তাদের সবাকে তাকওয়ার অসিয়ত করতেন।’ (মুসলিম, আবু দাউদ)

মনে রাখা জরুরি
শুধু মানুষই নয়; সমগ্র সৃষ্টিজগতই আল্লাহকে ভয় করে। তাই তাকওয়া শুধু উপদেশই নয় বরং এটি ছিল আগের পরের সব নবি-রাসুলের উম্মতের জন্য পালনীয় আবশ্যক কাজ। তাকওয়ার নির্দেশ এখনো উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য আবশ্যক পালনীয় কর্তব্য।

আবার এটি মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অসিয়ত এবং আমলও বটে। যা মানুষকে সব পাপাচার থেকে মুক্ত রাখবে। কারণ, যার মধ্যে আল্লাহর ভয় থাকে; তার দ্বারা কখনো কোনো অন্যায় সংঘটিত হওয়া সম্ভব নয়। এ তাকওয়াই মূলত প্রত্যেককে খাঁটি মুসলমানে পরিণত করার অন্যতম উপায়।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তার ভয় কামনা করা। যার মাধ্যমে নিজেদের অন্তরে আল্লাহর ভয় জেগে ওঠেবে। এ সম্পর্কে হাদিসে পাকে একটি দোয়া এসেছে-
৩. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন-
اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى
উচ্চারণ :‘ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আফাফা; ওয়াল গিনা।’
অর্থ : হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে হেদায়েত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য কামনা করি। (মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে তাকওয়া অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহকে বেশি বেশি ভয় করার মাধ্যমে খাঁটি মুসলমান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।