মেয়ে সন্তান না থাকলে কি বেহেশতে যাওয়া যাবে না?

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:২৪ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২১

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি মেয়ের লালন-পালন করে, তাদের ব্যয়ভার বহন করে এবং তাদের প্রতি সুন্দর আচরণ করে তবে তার জন্য জান্নাত অবধারিত।’ কিন্তু যদি কারো মেয়ে না থাকে তবে কি তারা জান্নাতে যেতে পারবে না?

কারা জান্নাতি? জান্নাতে যাওয়ার উপায় কী? এসব নিয়ে হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে নানা উপায় ও ঘোষণা। আল্লাহ তাআলা মানুষের মুক্তির জন্য অনেক উপায় ঘোষণা করেছেন। কারো মেয়ে সন্তান না থাকলে যে সে জান্নাতে যেতে পারবে না; বিষয়টি এমন নয়। বরং এটি দায়িত্ব পালনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনা রয়েছে-

১. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি মেয়ের লালন-পালন করে, তাদের ব্যয়ভার বহন করে এবং তাদের প্রতি সুন্দর আচরণ করে তবে তার জন্য জান্নাত অবধারিত। (এ কথা শোনার পর সাহাবাদের মধ্যে) একজন বেদুঈন দাঁড়িয়ে বললেন, ‘দুইজন মেয়েকে লালন-পালন করলে? ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, দুইজনকে লালন-পালন করলেও।

(উপস্থিত সাহাবিদের বিশ্বাস যে) সে যদি একজন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতো তাহলেও নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘হ্যাঁ’ বলতেন।’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা)

২. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি মেয়ে (সন্তানের) দায়িত্বশীল হয়; এরপর তার প্রতি সুন্দর আচরণ করে তাহলে এই মেয়েরা তাকে জাহান্নাম থেকে আড়াল করে রাখবে।’ (বুখারি)

৩. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি মেয়েকে, (অন্য রেওয়ায়েতে আছে) অথবা দুটি মেয়েকে লালন-পালন করে তাদেরকে আদব শিক্ষা দেয়, বিবাহের ব্যবস্থা করে এবং তাদের প্রতি সুন্দর আচরণ করে (তবে) সে জান্নাতের অধিকারী হবে।’ (আবু দাউদ)

মেয়ে না থাকলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না; বিষয়টি এমন নয় বরং যাদের মেয়ে সন্তান বা যাদের দায়িত্বে নারীরা আছে, তাদের প্রতি উত্তম আচরণ, তাদের সার্বিক ভালো ব্যবস্থাপনায় যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে; এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তি জান্নাতে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।

মহান আল্লাহ তাআলা অনেক দয়ালু ও মেহেরবারন। মানুষ তার ভালোবাসার সৃষ্টি। সবাই যেন বেহেশতে যায়; এ জন্য অনেক উপায় অবলম্বনের কথা বলেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তন্মধ্যে নারীদের প্রতি উত্তম আচরণ একটি।

এছাড়াও মহান আল্লাহ আরও অনেকের জন্য জান্নাতের সবকটি দরজা উন্মুক্ত রাখবেন বলে ঘোষণা করেছেন। তারা কারা? হাদিসের বর্ণনা থেকে তাদের বিষয়টিও প্রমাণিত-

১. হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে এবং উত্তমরূপে অজু করে, এরপর কালেমা শাহাদত পড়ে এবং এ দোয়াটি পড়ে-

اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْن

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাঝ্‌আলনি মিনাত তাওয়াবিনা ওয়াঝ্‌আলনি মিনাল মুতাত্বাহহিরিন।’

তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা (জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে।’ (তিরমিজি)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজানের রোজা রাখে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে; তবে সে বেহেশতের যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’

সুতরাং এমনটি ভাবার অবকাশ নেই যে, যদি কারো মেয়ে সন্তান না থাকে তবে তারা জান্নাতে যেতে পারবে না। বরং মহান আল্লাহ চান, দুনিয়ার সব মানুষ যেন জান্নাতে যান। আর এ জান্নাতে যাওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠ পথনির্দেশনা হলো- ‘কুরআনুল কারিম ও নবিজীর সুন্নাহ’। এ দুইটির উপর আমল করলে যে কারও জন্য বেহেশতে যাওয়া সহজ হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নাহর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। নিজ নিজ পরিবারের মেয়ে ও নারীর প্রতি উত্তম আচরণ, আদব ও যথাযথ দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।