যাদের ‘কবরে’ কোনো প্রশ্ন করা হবে না

ইসলাম ডেস্ক
ইসলাম ডেস্ক ইসলাম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৩১ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০২১

মৃত্যুর পর যাদের কবরে কোনো প্রশ্ন করা হবে না তারা সৌভাগ্যবান। কারণ কবর হলো আখেরাতের প্রথম মনজিল। যারা প্রথম মনজিল বিনা বাঁধায় বা প্রশ্নহীন পার পেয়ে যাবেন তাদের জন্য পরবর্তী সব মনজিলের হিসাবই সহজ হয়ে যাবে। এসব সৌভাগ্যবান ব্যক্তি কারা?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৫-৭ শ্রেণির লোকদের কবরে প্রশ্ন করা হবে না মর্মে হাদিসে ঘোষণা দিয়েছেন। তারা হলেন-

১. যারা ইসলামী রাষ্ট্রের ভূখন্ড বা সীমান্ত পাহারায় থাকেন

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কোন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত অঞ্চল পাহারাদানরত অবস্থায় মারা গেলে আল্লাহ তার জন্য সেইসব নেক আমলের সওয়াব প্রদান অব্যাহত রাখবেন; যা সে (জীবিত থাকা অবস্থায়) করতো। জান্নাতে তাকে রিজিক দান করবেন। কবরের বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে নিরাপদ রাখবেন। আর কেয়ামতের ভয়ভীতি থেকে মুক্ত অবস্থায় উঠাবেন।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, রাওদুন নাদীর, আত-তালিকুর রাগিব)

২. যারা আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হয়েছেন

হজরত মিকদাম ইবনে মাদি কারিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শহিদের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে ছয়টি পুরস্কার রয়েছে। তাহলো-

> তার প্রথম রক্তবিন্দু পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ক্ষমা করা হয়।

> তাকে তার জান্নাতের বাসস্থান দেখানো হয়।

> কবরের আযাব থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

> সে কঠিন ভয়-ভীতি থেকে নিরাপদ থাকবে।

> তার মাথায় মর্মর পাথর খচিত মর্যাদার টুপি পরানো হবে। যার এক একটি পাথর দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম।

> তার সঙ্গে টানা টানা আয়তলোচনা ৭২জন জান্নাতি হুরকে বিয়ে দেওয়া হবে এবং তার ৭০ জন নিকটাত্মীয়ের জন্য তার সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (তিরমিজি, তালিকুর রাগিব)

৩. যারা রাতে নিয়মিত ‘সুরা মুলক’ তেলাওয়াত করেন

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, কোন এক সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক সাহাবি একটি কবরের উপর তার তাবু খাটান। তিনি জানতেন না যে, তা একটি কবর। তিনি হঠাৎ বুঝতে পারেন যে, কবরে একটি লোক ‘সুরা মুলক’ পাঠ করছেন। সে তা পাঠ করে সমাপ্ত করলো। তারপর তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি একটি কবরের উপর তাঁবু খাটাই। আমি জানতাম না যে, তা কবর। হঠাৎ বুঝতে পারি যে, একটি লোক ‘সুরা মুলক’ পাঠ করছে এবং তা সমাপ্ত করেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এ সুরাটি প্রতিরোধকারী; নাজাত দানকারী। এটা কবরের আজাব থেকে তিলাওয়াতকারীকে নাজাত দান করে।’ (তিরমিজি)

৪. জুমার দিন মৃত্যুবরণকারী

যে ঈমানদার শুক্রবার রাত অথবা দিনে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে মৃত্যুবরণ করেন, তাকে কবরের ফেতনা বা কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। বলে আশা রাখা যায়। হাদিসে এসেছে-

হজরত আদুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিনে অথবা জুমার রাতে কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার কবরের ফিতনা থেকে আল্লাহ তাআলা তাকে রক্ষা করেন।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

উল্লেখ্য, অনেক খারাপ মানুষেরও এ সময় মৃত্যু হতে পারে। তবে স্বাভাবিকভাবে যারা ঈমানদার, তাহলে এটি তাদের জন্য সৌভাগ্যের আলামত। অর্থাৎ এটি ভালো মৃত্যুর একটি আলমত হিসেবে ধরে নেওয়া যায়।

৫. যারা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন

ইসলামের জন্য তথা আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হওয়া ছাড়াও আরও ৫/৭ শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাআলা শহিদের মর্যাদা দান করবেন মর্মে হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ মুসলিমে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন। তাদের মধ্যে একজন হলো- ‘কেউ যদি পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তবে সে ব্যক্তি শহিদ। আর শহিদের জন্য কবরের সাওয়াল-জওয়াব হবে না।

বাকি যারা আগুনে পুড়ে মারা যান, পানিতে ঢুবে মারা যান, গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান কিংবা কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মারা যান- তারাও শাহাদাতের মর্যাদা পাবেন।

তবে এসব মৃত্যুর মধ্যে পেটের পীড়ায় মৃত্যুবারণকারীকে নির্দিষ্ট করে ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ এ রোগটি মানুষের জন্য অনেক কষ্টের। যারা দীর্ঘদিন এ রোগে ভুগে ধৈর্যধারণ করে মারা যান তাদের জন্য এ সৌভাগ্য ঘোষণা করেছেন বিশ্বনবি।

এছাড়াও আরও দুই শ্রেণির মানুষের কথা ওঠে এসেছে, যাদের কবরে কোনো সাওয়াল-জওয়াব হবে না। তারা হলেন-

৬. নাবালক শিশু এবং মায়ের গর্ভে মৃত শিশু

অপ্রাপ্ত বয়সে কোনো শিশু মারা গেলে তাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না। প্রখ্যাত আকাইদবিদ আল্লামা নাসাফি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি দৃঢ়তার সঙ্গে বিষয়টি ব্যক্ত করেছেন। ইমাম নববি রাহমাতুল্লাহি আলাইহিও অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইবনে সালাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, শিশু মারা গেলে তাকে কালিমায়ে শাহাদাতের তালকিন করারও দরকার নেই। আর সেসব শিশুদেরও সাওয়াল করা হবে না; যারা মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় মারা যায়।

৭. পাগল ও বোকা ব্যক্তি

যাদের মস্তিষ্ক ঠিক নেই; পাগল কিংবা বোকা তাদের কবরেও সাওয়াল জওয়াব করা হবে কিনা এ বিষয়ে ইমাম ও ফকিহগণ মৌনতা অবলম্বন করেছেন।

এছাড়াও যে ব্যক্তি দুই নবির পৃথিবীতে আগমনের মধ্যবর্তী যুগে (সময়ে) মারা গেছেন, তাকেও কবরে সাওয়াল করা হবে কিনা? এ বিষয়েও কোনো মত প্রকাশ করেননি।

রওজা নামক কিতাবে এ বর্ণনা এসেছে, ‘যে ব্যক্তির উপর শরিয়তের দৃষ্টিতে মুকাল্লাফ (যার ওপর শরিয়তের হুকুম-আহকাম বর্তায়) বা তার সমগোত্রীয়, একমাত্র তাদেরকেই সাওয়াল-জাওয়াব করা হবে। এছাড়া অন্য কাউকে নয়।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।