যেসব মৌলিক বিশ্বাসই মুক্তির উপায়
দুনিয়া ও পরকালে শান্তি এবং মুক্তি চায় না এমন মানুষ নেই। শুধু মুমিন মুসলমানই নয় বরং সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষ মাত্রই উভয় জাহানের শান্তি ও মুক্তি আশা করে। এ শান্তি ও মুক্তির উপায় কী? যার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা ছাড়া শান্তি ও মুক্তি পাওয়ার অন্য কোনো উপায় নেই; ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসই বা কী?
আল্লাহ তাআলা মানুষকে ইসলামের মৌলিক বিষয়ের উপর যেমন বিশ্বাস স্থাপন করতে বলেছেন আবার উভয় জাহানে সফলতার বিষয়গুলো কোরআনুল কারিমে বারবার তুলে ধরেছেন। যা পালন করা অত্যন্ত জরুরি। আল্লাহ বলেন-
الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ - وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِکَ ۚ وَ بِالۡاٰخِرَۃِ هُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ - اُولٰٓئِکَ عَلٰی هُدًی مِّنۡ رَّبِّهِمۡ ٭ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ
‘যারা না দেখা (অদৃশ্য) বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুজি (জীবিকা) দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে। এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু আপনার (রাসুল) প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা আপনার পূর্ববর্তীদের (নবি-রাসুলদের) প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখিরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ৩-৫)
উল্লেখিত আয়াতগুলোতে সফলতা লাভের বিষয়ের কথা যেমন ওঠে এসেছে। আবার ইসলামের মৌলিক কিছু বিষয়ও ওঠে এসেছে। যা পালন করলে মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে সফলতা দান করবেন বলে শেষ আয়াতে ঘোষণা দিয়েছেন। তাহলে সফলতা লাভের বিষয়গুলো কী?
দুনিয়া ও পরকালে সফলতা পেতে হলে কোরআনে ঘোষিথ কার্যাবলীর যথাযথ আমল করলে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ ও নাজাত পাওয়া বান্দার জন্য অবধারিত। বিষয়গুলো হলো-
১. অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস
পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও মেধা শক্তির দ্বারা যা জানা সম্ভব নয়, সে বিষয়ে শুধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ্বাস করা। যে সব বিষয় দুনিয়াতে মানুষের কাছে একেবারেই অদৃশ্য। যেমন- আল্লাহ, (রাসুলের) রিসালাত, পরকাল, জান্নাত, জাহান্নাম। এটি ইসলামের পাঁচটি মৌলিক বিশ্বাসের প্রথমটি।
২. নামাজ প্রতিষ্ঠা করা
ঈমান গ্রহণ করার পর ইসলামের প্রধান ইবাদত হচ্ছে নামাজ। যথাযথভাবে নামাজ আদায় করলেই দুনিয়া ও পরকালের সফলা সুনিশ্চিত। হাদিসের ঘোষণা হলো- পরকালে সর্ব প্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। যে ব্যক্তি নামাজের হিসাব দিতে পারবে, তার পরবর্তী হিসাবগুলো সহজ হয়ে যাবে। এটিও ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের (মৌলিক বিশ্বাসের) দ্বিতীয়টি।
তাই উভয় জাহানের সফলতায় সব ধরনের আরকান-আহকাম, বিনয়, ভয়, নম্রতার আদব, হুকুমসহ যথাযথভাবে নামাজ সম্পাদন করা জরুরি।
৩. আল্লাহর পথে ব্যয়
দুনিয়া ও পরকালে সফলতা পাওয়ার অন্যতম উপায় আল্লাহর পথে প্রকাশ্যে গোপনে দান করা। চাই সে অধিক সম্পদের অধিকারী হোক কিংবা কম সম্পদের অধিকারী হোক। আল্লাহর দেওয়া জীবিকা থেকে অল্প হলেও দান করা।
উল্লেখ্য যদি কারো নিসাব পরিমান মাল তথা জাকাত দেওয়ার মতো সম্পদ থাকে তাবে বছরে একবার মোট সম্পদের ২.৫০% (শতকরা আড়াই ভাগ) জাকাত হিসেবে দিতে হবে। এটিও ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম একটি। যাকে বলা হয় ‘জাকাত’। এ আয়াতে আল্লাহর পথে ফরজ দানসহ (জাকাত) সব ধরনের দান-সাদকার কথাই বোঝানো হয়েছে।
৪. কোরআনের প্রতি বিশ্বাস করা
মুমিন মুসলমানদের জীবন পরিচালনার অনন্য গ্রন্থ আল-কোরআন। এ কোরআনের সব বিষয়ের উপর পুরোপুরি বিশ্বাস স্থাপন করা। আংশিক বিশ্বাস করে আর আংশিক লঙ্ঘনের নাম ঈমান নয়। তবে সে সফলতা পাবে না। সুতরাং কোরআনের প্রতি বিশ্বাসই মানুষকে দুনিয়া ও পরকালে সফলতার চূড়ান্ত শাখায় উন্নীত করে দেবে।
৫. আগের সব আসমানি কিতাবের প্রতি বিশ্বাস রাখা
কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার আগে যত আসমানি কিতাব- তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুরসহ যত সহিফা নাজিল হয়েছে; সেগুলো যে আসমানি কিতাব এ বিশ্বাস রাখা। যদি কোরআন নাজিলের পর আগের সব কিতাবের আমল রহিত হয়েগেছে। বিধান রহিত হলেও সেগুলো যে আসমানি গ্রন্থ এ বিশ্বাস রাখাও সফলতার মূলমন্ত্র।
৬. পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখা
দুনিয়ার জীবনের পরে যে আরও জীবন ও জগৎ আছে তাতে বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের অন্যতম বিষয়। যে জীবনে শুরু আছে শেষ নেই। অন্তহীন জীবন। তাই দুনিয়া থাকতে পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা দুনিয়া ও পরকালে সফলতার অন্যতম উপায়।
ইসলামের মৌলিক বিষয়ে বিশ্বাস রাখা
তাহলে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস বা পাঁচটি স্তম্ভ কী। যেগুলোর প্রতি সবার আগে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। শুধু বিশ্বাসই নয় পাঁচটি বিষয়ে মানুষের মৌখিক স্বীকৃতি, অন্তরের বিশ্বাস এবং কর্মে বাস্তবায়নও আবশ্যক। একজন পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার জন্য এর বিকল্প নেই। ইসলামের পাঁচটি মৌলিক বিশ্বাসের কথা হাদিসে পাকে এভাবে এসেছে-
হজরত আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ বিন ওমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি রাখা হয়েছে। (তাই) এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে-
১. আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল।
২. নামাজ প্রতিষ্ঠা করা।
৩. জাকাত আদায় করা।
৪. সম্পদের মালিক হলে আল্লাহর ঘরে (উপস্থিত হয়ে) হজ করা এবং
৫. রমজানের (মাসব্যাপী) রোজা রাখা।’ (বুখারি ও মুসলিম)
সুতরাং যারা দুনিয়া ও পরকালে সফল হতে চায়, তাদের উচিত, ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের বিষয়গুলোসহ কোরআনে ঘোষিত উপদেশগুলো বাধ্যতামূলক পালন করা। তবে কোরআনের এ ঘোষণা সব মুমিন মুসরমানের জন্য হবে সফল ও স্বার্থক-
اُولٰٓئِکَ عَلٰی هُدًی مِّنۡ رَّبِّهِمۡ ٭ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ
‘তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নায় ঘোষিত ইসলামের মৌলিক ও সফলতার বিষয়গুলো যথাযথ বিশ্বাসের সঙ্গে বাস্তবে পালন করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালে সফলতা দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম