সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় মুহাম্মাদ (সা.)-এর আদর্শ
মুসলিম খ্রিস্টান ইয়াহুদি হিন্দু ও বৌদ্ধ সবাই মানুষ হিসেবে এক জাতির অন্তর্ভূক্ত। হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালামের সন্তান হিসেবে আল্লাহর কাছে সব মানুষের অধিকার ও মর্যাদা সমান। কোনো ধর্মই কারো ওপর জোর-জবরদস্তিকে সমর্থন করে না। সাম্প্রদায়িত সম্প্রীতি রক্ষায় ইসলামের আদর্শ সুমহান। অমুসলিমদের প্রতি বিশ্বনবির আচরণ ও মানসিকতায় তা ফুটে ওঠেছে।
সব ধর্মের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করেছে ইসলাম। ধর্ম পালনে কেউ কাউকে বাধা দেবে না। অন্য ধর্ম নিয়ে কেউ ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা যাবে না মর্মেও কোরআনে আয়াত নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আল্লাহকে ছেড়ে যাদের তারা (মূর্তিপূজক) ডাকে, তাদের তোমরা গালি দিও না। তাহলে তারা সীমালংঘন করে অজ্ঞানতাবশত আল্লাহকেও গালি দেবে।’ (সূরা আনয়াম : ১০৮)
মুসলিম ব্যক্তির প্রতিবেশি যদি অমুসলিম হয়, তার অধিকারের প্রতিও খেয়াল রাখা জরুরি। এটিও প্রতিবেশীর হকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলার ঘোষণা-
‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেননি। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ৮)
বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে তা সুস্পষ্ট। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কণ্ঠে ঘোষিত হয়েছে-
‘হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এবং তোমাদের আদিপিতাও এক। একজন আরব একজন অনারব থেকে কোনো মতেই শ্রেষ্ঠ নয়। তেমনি একজন আরবের ওপরে একজন অনারবেরও কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। একজন সাদা চামড়ার মানুষ একজন কালো চামড়ার মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়, আবার কালোও সাদার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। শ্রেষ্ঠত্বের মূল্যায়ন করতে বিচার্য বিষয় হবে, কে তাকওয়া তথা আল্লাহ ও বান্দার হক কতদূর আদায় করল। এর মাধ্যমেই আল্লাহর কাছে তোমাদের সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী সেই ব্যক্তি, যিনি সর্বাপেক্ষা বেশি ধর্মপরায়ণ।’ (বায়হাকি)
সুতরাং বর্ণবাদ, পূঁজিবাদ, সামাজিক মর্যাদা, বংশ ইত্যাদি দ্বারা মানুষের মর্যাদার মূল্যায়ন হতে পারে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশ ইত্যাদির বিভক্তি কেবল পরস্পরকে জানার জন্য, যাতে পরস্পরের চারিত্রিক ও মানসিক গুণাবলি দ্বারা একে অপরের উপকার হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর এ ঘোষণা খুবই কার্যকরী। তিনি বলেছেন-
‘হে মানবজাতি! আমি পুরুষ ও নারী থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছি। আর আমি বিভিন্ন গোষ্ঠী ও গোত্রে তোমাদের বিভক্ত করেছি যেন তোমরা একে অপরকে চিনতে পার’। (সুরা আল-হুজরাত : আয়াত ১৩)
মানুষ হিসেবে যার মর্যাদা যেমন; তার আচার-আচরণ ও পারিপাশ্বিকতাও তেমন। মহান আল্লাহ তাআলা যেখানে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে এত প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেছেন, সেখানে অমুসলিমদের প্রতি বিশ্বনবির আচরণ মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যেসব গুণ ও মর্যাদার কথা ঘোষণা করেছেন, তাহলো-
১, ‘আর আমি আপনার আলোচনাকে সুউচ্চ করেছি।’ (সুরা আলাম নাশরাহ : আয়াত ৪)
২. ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত করে পাঠিয়েছি।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৭)
৩. ‘আপনিই সেই মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী, যাকে আমি বিশ্বমানবতার জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা জানে না।’ (সুরা সাবা : আয়াত ২৮)
এসব কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উত্তম চরিত্র দিয়ে মানবতার মুক্তির দূত করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আর ঘোষণা করেছেন- ‘আর (হে নবি!) নিশ্চয়ই আপনি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।’
যিনি স্বয়ং আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে এতগুণ ও মর্যাদার সনদ পেয়েছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় তাঁর আদর্শ কেমন ছিল?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মানুষের প্রতি উদার। ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠী বিচারে তিনি করো প্রতি জুলুম করেননি। কারো প্রতি অবিচার করেননি। আবার কারো প্রতি জুলুম-অবিচার করাও পছন্দ করেননি। এমনকি তাঁর উম্মতের সবার উদ্দেশ্যে তিনি এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন-
‘কেউ যেন কারো প্রতি জুলুম না করে; যেন সবার সঙ্গে উত্তম সদাচরণ করে ‘
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ছিল তুলনাহীন। অন্য ধর্মের মানুষের অধিকার রক্ষায় ঘোষণা করেছেন- কোনো মুসলিম যদি অমুসলিমের প্রতি অবিচার করে তবে শেষ বিচারের দিন তিনি অমুসলিমের পক্ষে অবস্থান নেবেন। হাদিসে এসেছে-
১. হজরত সুফিয়ান ইবনে সালিম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জেনে রেখ! কোনো মুসলিম যদি অমুসলিম নাগরিকের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করে, তার কোনো অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করে, তার কোনো জিনিস বা সহায়-সম্পদ জোরপূর্বক কেড়ে নেয়; তবে কেয়ামতের দিন আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় আমি তাদের বিপক্ষে অমুসলিমদের পক্ষে অবস্থান করব।’ (আবু দাউদ)
২. হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো ওপর জুলুম করতে নিষেধ করেছেন, যদিও মজলুম অমুসলিম হয়। তিনি বলেন, ‘তোমরা মজলুমের বদ-দোয়া থেকে বেঁচে থেকো, যদিও সে কাফির হয়। কারণ তার (মজলুমের) মাঝখানে আর আল্লাহর মাঝখানে কোনো পর্দা থাকে না। অর্থাৎ তার বদ-দোয়াও দ্রুত কবুল হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ)
৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোর সতর্কবাণী দিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমকে হত্যা করলো, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের দূরত্বে থেকেও জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।’ (বুখারি)
৫. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘সাবধান! যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম নাগরিকের ওপর অত্যাচার করে অথবা তার অধিকার থেকে কম দেয় কিংবা সামর্থ্যবহির্ভূতভাবে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয় বা জোর করে তার কোনো সম্পদ নিয়ে যায়, তবে কেয়ামতের দিন আমি সে ব্যক্তির প্রতিবাদকারী হবো।’ (আবু দাউদ)
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় করণীয়
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কোনো মুসলিম যেন কোনো অমুসলিমের জান ও মালের ওপর উপর অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ না করে। বরং অমুসলিমদের প্রতি সাদাচরণ করতে হবে। ইসলাম ও মুসলমানদের সুমহান আদর্শ ও সৌন্দর্যগুলো তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। অমুসলিমদের প্রতি আচরণ কেমন হতে হবে তা-ও সুস্পষ্টভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বনবি। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-
১. হজরত আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এলেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জানতে চাইলাম- আমি কি তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হ্যাঁ’। (বুখারি)
২. একবার বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে দিয়ে এক ইয়াহুদির লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আর এতে ওই লাশের সম্মানার্থে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এটি তো ইয়াহুদির লাশ! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, সে কি মানুষ নয়?’ (বুখারি)
মদিনার ইসলামি রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিক
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কা থেকে মদিনা হিজরত করেন; তখন ‘মদিনা সনদ’ ঘোষণা করেন। এ সনদে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাসহ সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা প্রদান সম্পর্কিত বিষয়গুলোও উল্লেখযোগ্য ধারা হিসেবে স্থান পেয়েছিল।
সে সময় মদিনায় মুসলমানসহ, ইহুদি এবং আওস ও খাযরায মিলে মোট ১২টি উপগোত্রের লোকজনের বসবাস ছিল। ইসলামের প্রথম যুগের এই চরম গোষ্ঠীগত মতানৈক্য ও সংঘাতের মধ্যে ‘মদিনা সনদ’-এর আলোকে সব গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবেই না সহাবস্থান করেছিলেন। যা নতুন ইসলামি রাষ্ট্র মদিনাকে একটি অতুলনীয় দৃষ্টান্ত হিসাবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
ঐতিহাসিক ‘মদিনা সনদ’-এর মাধ্যমে শান্তির বার্তাবাহক বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার মাঝে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, সাম্য-মৈত্রীর সুদৃঢ় বন্ধন রচনা করে আদর্শ কল্যাণ রাষ্ট্রের অদ্বিতীয় নজির স্থাপন করেছিলেন। তাতে উল্লেখ ছিল-
> সনদে স্বাক্ষরকারী সব গোত্র-সম্প্রদায় ‘মদিনা রাষ্ট্রে’ সমান অধিকার ভোগ করবে।
> সব ধর্ম সম্প্রদায়ের স্ব স্ব ধর্ম-কর্ম পালনের স্বাধীনতা ও অধিকার যথারীতি বহাল থাকবে।
> কেউ কারও ওপর কোনোরূপ হামলা বা আক্রমণ করবে না।
> সন্ধিভুক্ত কোনো সম্প্রদায় (হোক মুসলিম কিংবা অন্য ধর্মের) বহিঃশত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হলে ওই আক্রান্ত সম্প্রদায়কে সম্মিলিতভাবে সহযোগিতা করতে হবে এবং শত্রুদের প্রতিহত করতে হবে।
> কোনো নাগরিক যে কোনো অপরাধ করলে তা তার ব্যক্তিগত অপরাধ বলে গণ্য করা হবে।
বহু ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য ‘মদিনা সনদ’ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মদিনা সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর তৎকালীন সমাজের গোত্রগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অন্তর্কলহের অবসানসহ নৈরাজ্যমুক্ত, মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
শুধু তা-ই নয়, কোনো অমুসলিম প্রতিবেশি অসুস্থ হলে তার সেবাযত্ন করাকেও ইসলাম নিষেধ করেনি। বরং অমুসলিম রোগীকে দেখতে যাওয়া সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে অমুসলিম প্রতিবেশি রোগীদের দেখতে যেতেন এবং তাদেরকে সুন্দরভাবে ঈমানের দাওয়াত দিতেন। তাদের সেবাযত্ন করতেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন এক ইয়াহুদি গোলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমত করত। যখন সে অসুস্থ হলো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন, তার মাথার দিকে বসলেন আর তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো! তখন সে তার পিতার দিকে দেখল। পিতা বললেন, তুমি আবুল কাসেমের অনুসরণ করো। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বলে বের হলেন- আল্লাহর শুকরিয়া যে, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ (বুখারি)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে সৃষ্টির সেরাজীব হিসেবে সম্মান করেছেন। হোক সে মুসলিম কিংবা অমুসলিম, কাফির, ইয়াহুদি কিংবা খ্রিস্টান।
মনে রাখতে হবে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন বিশ্বমানবতার মুক্তি দূত। ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় তিনি কারো প্রতি কোনো ধরণের পক্ষপাতমূলক আচরণ করেননি। অন্যায়ের ক্ষেত্রেও তিনি কারো সঙ্গে আপোষ করেননি। অন্যায়ভাবে কোনো মুসলিমের পক্ষ অবলম্বনও করেনি। তিনি ছিলেন ন্যায়ের প্রতীক।
মানুষ হিসেবে তিনি সবার প্রতি ছিলেন উদার ও উত্তম আচরণকারী। প্রতিবেশি যে-ই হোক অর্থাৎ মুসলিম কিংবা অমুসলিম তার অধিকারের ব্যাপারে তিনি ছিলেন সজাগ দৃষ্টিসম্পন্ন।
সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত, বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাম্প্রদায়িত সম্প্রীতির এ উদার নীতি ও দৃষ্টান্ত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। ইসলাম ও মুসলমানদের লালিত এবং মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুমহান আদর্শগুলো বিশ্বব্যাপী তুলে ধরা। আর তাতে মুসলিম-অমুসলিম সব মানুষের কাছে পৌছে যাবে বিশ্বনবির সুমহান আদর্শ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অমুসলিমদের সঙ্গে আচার-আচরণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনা মেনে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম