ফরজের আগে-পরে বিশ্বনবির সুন্নাত নামাজ
ফরজ নামাজ ছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক নফল নামাজ পড়তেন। নফল নামাজ পড়ার ব্যাপারে তাঁর প্রতি নির্দেশও ছিল। উম্মে মুসলিমাহ কি ফরজের আগে কিংবা পরে বিশ্বনবির অনুসরণে সুন্নাত নামাজ পড়বে? ফরজের আগে ও পরের নামাজ সম্পর্কে হাদিসের কোনো দিকনির্দেশনা আছে কি?
হ্যাঁ, ফরজ নামাজের আগে পরে সুন্নাত পড়ার ব্যাপারে হাদিসের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। কেউ কেউ এ নামাজকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বলে থাকেন। ফরজের আগে ও পরের নামাজ পড়ার ব্যাপারে হাদিসের দিকনির্দেশনাগুলো এমন-
১. জোহর-ইশা-ফজরের আগের ও পরের নামাজ
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু শাকিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নফল নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন-
তিনি (বিশ্বনবি) আমার ঘরে জোহরের (ফরজ নামাজের) আগে চার রাকাত নামাজ আদায় করেন, এরপর বাইরে গিয়ে লোকরেদকে নিয়ে (ফরজ) নামাজ আদায় করেন। পুনরায় আমার ঘরে ফিরে এসে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তিনি লোকদেরকে নিয়ে ইশার নামাজ আদায়ের পর আমার ঘরে এসে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন।
এছাড়া তিনি রাতে বিতরসহ ৯ রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তিনি রাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে এবং দীর্ঘক্ষণ বসে নামাজ আদায় করতেন। তিনি দাঁড়িয়ে কেরাত পড়ার সময় ওই অবস্থায়ই রুকু ও সিজদা করতেন আর বসাবস্থায় কেরাত পড়লে বসাবস্থায় থেকেই রুকু ও সিজদা করতেন। ফজর উদয় হলে তিনি দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন। এরপর বের হয়ে লোকদের নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করতেন।’ (মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ)
২. জোহর-মাগরিব-ইশা ও জুমার আগের পরের নামাজ
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু ওমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জোহরের (ফরজ নামাজের) আগে দুই রাকাত ও পরে দুই রাকাত; মাগরিবের পর দুই রাকাত নামাজ তাঁর ঘরে আদায় করতেন। তিনি ইশার পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। আর জুমার (ফরজ নামাজের) পরে ঘরে এসে দুই রাকাত আদায় করতেন।’ (আবু দাউদ)
৩. ফজর ও জোহরের আগে নামাজ
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জোহরের আগে ৪ রাকাত ও ফজরের আগে দুই রাকাত নামাজ কখনো ছাড়তেন না।’ (বুখারি, আবু দাউদ)
ফজরের ফরজের আগে নামাজকে খুবই গুরুত্ব দিতেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের আগে দুই রাকাত নামাজের চেয়ে অধিক দৃঢ় প্রত্যয় অন্য কোনো নফল নামাজে রাখেননি।’ (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ)
ফরজের আগে নফল পড়ার ফজিলত
ফরজ নামাজের আগের এসব নফল (সুন্নাত) নামাজ পড়ার ফজিলতও অনেক বেশি। হাদিসের এক বর্ণনা থেকে তা সুস্পষ্ট। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি এসব নামাজের ফজিলত এভাবে ঘোষণা করেন-
১. হজরত উম্মু হাবিবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে; এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একখানা ঘর নির্মাণ করা হবে।’ (আবু দাউদ)
২. হজরত উম্মে হাবিবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ১২ রাকাত (সুন্নাতে মুওয়াক্কাদার) নামাজ যে ব্যক্তি আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন। (তাহলো)- জোহরের ফরজের আগে ৪ রাকাত; জোহরের ফরজের পরে ২ রাকাত। আসরের ফরজের আগে ২ রাকাত। মাগরিবের ফরজের পরে ২ রাকাত। ফজরের ফরজের আগে ২ রাকাত।’ (নাসাঈ)
৩. হজরত উম্মু হাবিবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিন-রাতে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। জোহরের নামাজের আগে ৪ রাকাত ও পরে ২ রাকাত, মাগরিবের নামাজের পরে ২ রাকাত, ইশার নামাজের পরে ২ রাকাত এবং ভোরের ফজরের নামাজের আগে ২ রাকাত।’ (তিরমিজি)
৪. হজরত উম্মু হাবিবাহ বিনতে আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি দিনে ১২ রাকাত (সুন্নাত) নামাজ পড়লো, তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়।’
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, প্রত্যেক ওয়াক্তের ফরজ নামাজের আগে ও পরে যেভাবে নামাজ পড়ার দিকনির্দেশনা এসেছে হাদিসে সেভাবে নামাজ আদায় করা। নফল নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে হাদিসের উপর যথাযথ আমল করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফরজ নামারে আগে ও পরে হাদিসে বর্ণিত নফল নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস