তিনিই মহান শিক্ষক! কেমন ছিল তাঁর শিক্ষা?
তিনিই মহান আদর্শ শিক্ষক। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি সর্বকালের সেরা শিক্ষক। কেমন ছিল তাঁর শিক্ষা? মানবজাতির কল্যাণে মাত্র ২৩ বছরের যে দীক্ষা ও শিক্ষায় তিনি পাল্টে দিয়েছিলেন পুরো আরববিশ্বের অজ্ঞতার চেহারা। তাঁর জ্ঞান ও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েছে পুরো বিশ্ব। তাইতো তিনি ঘোষণা করেছিলেন-
اِنَّمَا بُعِثْتُ مُعَلِّمًا
‘নিশ্চয়ই আমি শিক্ষক হিসেবেই প্রেরিত হয়েছি।’
বিশ্বজুড়ে আজ মঙ্গলবার ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালিত হচ্ছে। শিক্ষকরা আদর্শ জাতি গঠনের কারিগর। শিক্ষকের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতেই প্রতি বছর ৫ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এবারের শিক্ষক দিবসের স্লোগান- 'Teachers at the Heart of the Education Recovery' বা শিক্ষকই শিক্ষা-পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে।’
সত্যিকার অর্থে শিক্ষকরাই জ্ঞান অর্জনের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিটি মানুষই তার শিক্ষকের কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করে থাকেন। আর শিক্ষক থেকে আহরিত জ্ঞানই মানুষকে যথার্থ শক্তি, শান্তি ও মুক্তির পথনির্দেশ দিতে পারে।
কেমন শিক্ষক ছিলেন বিশ্বনবি?
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি মনোমুগ্ধকর ভাষণে জ্ঞান ও জ্ঞানীর মর্যাদা এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, এ মর্যাদাগুলো যেন শরতের গভীর রাতে আকাশ ভরা উজ্জ্বল তারকারাজির আলোর মেলা।
জ্ঞানপিপাসু যুবক সাহাবি হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন কর। কারণ-
> জ্ঞান অন্বেষণ একটি ইবাদত।
> জ্ঞানচর্চা একটি তাসবিহ।
> জ্ঞান গবেষণা একটি জেহাদ।
> জ্ঞান অর্জনের ফলে অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়।
> জ্ঞান হালাল-হারামের পার্থক্য নির্ণয় করে দেয়।
> জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া একটি দান হিসেব বিবেচিত হয়।
> জ্ঞান নির্জনের বন্ধু।
> জ্ঞান জান্নাত প্রত্যাশীদের পথের আলো।
> জ্ঞান সঠিক পথে চলার সঙ্গী।
> জ্ঞান একাকিত্বের (জ্ঞানীর সঙ্গে) আলোচক।
> জ্ঞান সুসময় ও দুঃসময়ের পথপ্রদর্শক।
> জ্ঞান শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্র।
> জ্ঞান বন্ধু মহলের অলংকার।
> জ্ঞান অন্তরকে অজ্ঞতার মৃত্যু থেকে জীবন্ত করে তোলে।
> জ্ঞান অন্ধকারে দৃষ্টির আলো।
> জ্ঞান নিয়ে চিন্তা-ভাবনা রোজার সমতুল্য।
> জ্ঞান বিনিময় নামাজের সমতুল্য।
> জ্ঞান সব (ভালো) কাজের পথ প্রদর্শক।
> জ্ঞান অর্জনকারীরাই সৌভাগ্যবান।
> জ্ঞান অর্জনকারীরা কল্যাণের কাজে নেতৃত্ব দেয়।
> জ্ঞানীদের কর্ম অনুসরণ করা হয়।
> জ্ঞানীদের আল্লাহ তাআলা উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন।
এমনকি জ্ঞানীদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে সব তাজা ও নিরস বস্তু, পানির মাছ, স্থলের হিংস্র প্রাণী এবং নিরিহ পশু-পাখি।’ (জামেউল বয়ান আল-ইলম)
এ হাদিস থেকেই প্রমাণিত হয় যে, হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সর্বকালের সর্বযুগের সেরা আদর্শ শিক্ষক। যার চিন্তা-চেতনা ও গবেষণা থেকে বাদ যায়নি শিক্ষার কোনো দিক। যার শিক্ষা থেকে দুনিয়াজুড়ে সব শিক্ষকরাও হচ্ছে-হবে আলোকিত।
তিনিই সেই মহান শিক্ষক! যিনি বিশ্বজুড়ে সন্দেহাতীতভাবে মানুষকে শক্তি, শান্তি এবং মুক্তির পথনির্দেশ দিয়ে একজন মহান আদর্শ শিক্ষক হিসেবে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তিনিই মহান শিক্ষক! গোটা মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ শিক্ষকরূপে এই ধরায় আগমন করেছিলেন। যার সংক্ষিপ্ত সময়ের শিক্ষা-দীক্ষা সমগ্র আরব উপদ্বীপের চেহারা পাল্টে দিয়েছিল।
তিনিই মহান শিক্ষক! যিনি সমগ্র পৃথিবীর জন্য কল্যাণ ও হেদায়াতের এমন এক মশাল প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন- যা কেয়ামত পর্যন্ত আগত মানব ও জ্বীন জাতিকে দেখাবে ইনসাফ, সুখ-শান্তি, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির আলোকোজ্জ্বল পথ।
তিনিই মহান শিক্ষক! যার ২৩ বছরের অতি সংক্ষিপ্ত সময়ে জ্ঞানের মশাল জ্বালানোর পরিশ্রম আরব ও আজমে বিস্ময়কর বিপ্লব সাধিত হয়েছিল। অজ্ঞতা ও অশিক্ষা দূরীভূত হয়েছিল। তাঁর জ্ঞান বিতরণের এ অপ্রতিরুদ্ধ গতি ও ব্যাপকতা দেখে বিস্মিত ও চিন্তিত হয়েছিল তৎকালীন সময়ে (অজ্ঞতার যুগের) তাঁর কট্টর বিরোধী জ্ঞানীরাও। অথচ তাঁর এ জ্ঞান বিতরণ ছিল সবার জন্য সমভাবে উদার।
তিনিই সেই মহান শিক্ষক! যার সুমহান জ্ঞানের স্পর্শ পেয়ে অতি সামান্য সময়ে আরব মরুর অশিক্ষিত ও বর্বর জাতি হিসেবে পরিচিত মানুষগুলো দুনিয়া ও পরকালের শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত হয়েছিল। তাঁর শিক্ষা-দীক্ষা, তাহজিব-তামাদ্দুন, সভ্যতা ও ভদ্রতার জ্ঞান থেকে সমগ্র জাহান জ্ঞান ও আদর্শের আলোয় আলোকিত হয়েছিল। এটা ছিল তাঁর সুমহান শিক্ষার বিস্ময়কর প্রভাব।
এভাবেই দুনিয়ার সর্বক্ষেত্রে সর্ব বিষয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহান আদর্শ শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি হলেন সর্বকালের সর্বযুগের সব আদর্শ শিক্ষকের তুলনাহীন মডেল। পৃথিবী জুড়ে যার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
তিনিই মহান শিক্ষক! যার কাছে ‘শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছাড়া কেউই আপন ছিল না। তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ, দীক্ষা এবং শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ ও অনুকরণেই সম্মানিত হবে পুরো পৃথিবীর শিক্ষক সমাজ।
তিনিও মহান শিক্ষক! যার শিক্ষা ও দীক্ষায় ফুটে ওঠবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুমহান আদর্শ। যারা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে অহিংস, সুন্দর ও উত্তম শিক্ষার আলো বিতরণ করবে। আজকের শিক্ষক দিবসে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ সব আদর্শ শিক্ষকের প্রতি রইলো আন্তরিক সালাম, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
এমএমএস/এএসএম