নামাজে মানুষের যেসব অনুভূতি খুবই জরুরি
আল্লাহকে স্মরণ করার অন্যতম মাধ্যম নামাজ। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ তার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহকে মিটিয়ে দেয়। গুনাহ থেকে বিরত থাকার জন্য প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে পাঁচবার মহান আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোই যথেষ্ট। নামাজ গ্রহণযোগ্য হওয়ার নামাজির বিশেষ কিছু অনুভূতি ও করণীয় খুবই জরুরি। মানুষের সেই অনুভূতিগুলো কী?
নামাজ মানুষকে গুনাহ থেকে বিরত রাখতে যেমন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তেমনি দিন ও রাতের মধ্যে যখনই কেউ কোনো গুনাহ করে, তারপর নামাজে দাঁড়ালেই তার গুনাহগুলোর কথা স্মরণ হয়ে যায়। ফলে সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ নিজ থেকে লজ্জিত হয়; অনুতপ্ত হয়। এই লজ্জা ও অনুভূতিই মানুষকে গুনাহ মুক্তির দিকে নিয়ে যায়।
মানুষের অনুভূতিতে বারবার যা স্মরণ হয়
মানুষ এমন এক সত্ত্বার সামনে নামাজে দাঁড়ায়; যে সত্ত্বা মানুষের সার্বিক দিকগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। মানুষের অনুভূতিতে জাগ্রত হয়-
> তিনি- ‘আলিমুল গাইবি ওয়াশ শাহাদাহ’ অর্থাৎ তিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সবকিছু জানেন।
> তিনি ‘আলিমুম বিজাতিস সুদুর’ অর্থাৎ তিনি মানুষের অন্তরের সংকল্পও জানেন।
তখনই মানুষ খুশু-খুজু তথা হৃদয়ের পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের স্থিরতার মাধ্যমে নামাজে তাসবিহ, তেলাওয়াত, রুকু-সেজদা করে থাকেন। ফলে মহান আল্লাহ বান্দাকে নামাজের পরিপূর্ণ সাওয়াব ও উপকারিতা দান করেন। ভালো কাজের অনুভূতিগুলো হৃদয়ে জাগিয়ে তোলেন। মহান আল্লাহ এসব নামাজির উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন-
১. قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ، الَّذِیْنَ هُمْ فِیْ صَلَاتِهِمْ خٰشِعُوْنَ.
‘সফলকাম সেসব মুমিন; যারা নামাজে খুশু-খুজু (ভয় ও একাগ্রতা) অবলম্বন করে।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১-২)
২. سِیْمَاهُمْ فِیْ وُجُوْهِهِمْ مِّنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ
‘তাদের লক্ষণ তাদের মুখমন্ডলে সেজদার প্রভাব (ভয় ও একাগ্রতা) পরিস্ফুটিত থাকবে।’ (সুরা ফাতহ : আয়াত ২৯)
নামাজে প্রশান্তি পাওয়ার এ অনুভূতি তখনই জাগ্রত হবে; যখন মানুষ নামাজে আল্লাহর প্রতি ভয় ও একাগ্রতা অর্জন করবে। নিজেরে অন্তরকে সবকিছু থেকে ফিরিয়ে রেখে নামাজে মনোযোগী হবে। তাইতো নামাজি ব্যক্তি শেষ বৈঠকে আল্লাহর কাছে হৃদয়ের সর্বোচ্চ আবেগ দিয়ে আহ্বান করতে থাকে-
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি; আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি’- হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি নিজের ওপর জুলুম করেছি।’
মনে রাখা জরুরি
মূলত নামাজের এমন অনুভূতিই মুসল্লিকে পাপাচার ও অন্যায় কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِنّ الْعَبْدَ لَيُصَلِّي الصّلَاةَ مَا يُكْتَبُ لَهُ مِنْهَا إِلّا عُشْرُهَا، تُسُعُهَا، ثُمُنُهَا، سُبُعُهَا، سُدُسُهَا، خُمُسُهَا، رُبُعُهَا، ثُلُثُهَا نِصْفُهَا
‘নিশ্চয়ই বান্দা নামাজ সম্পন্ন করে আর তার জন্য নামাজের দশ ভাগের এক ভাগ (সাওয়াব) লেখা হয় অথবা নয় ভাগের এক ভাগ, আট ভাগের এক ভাগ, সাত ভাগের এক ভাগ, ছয় ভাগের এক ভাগ, পাঁচ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ অথবা সে নামাজের অর্ধেক (সাওয়াব) পায়। অন্য বর্ণনা মতে, অথবা সে নামাজের পূর্ণ সাওয়াব ও সুফল পায়।’ (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ)
নামাজ যেন নাম নির্ভর না হয়। বরং তেলাওয়াত, তাসবিহ পাঠ, রুকু-সেজদা ও ক্ষমা প্রার্থনায় বাস্তবেই অন্তরের একাগ্রতা ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের স্থিরতার অনুভূতি জাগ্রত হয়। তবেই মুসল্লি পাবে নামাজের পরিপূর্ণ সাওয়াব ও সুফল। গুনাহ, অশ্লীলতা ও মন্দকাজ থেকে পাবে মুক্তি।
হাদিসের পরিভাষায় এ নামাজই হবে চোখের শীতলতা। যেভাবে একাধিক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
১. جُعِلَتْ قُرّةُ عَيْنِي فِي الصّلَاةِ
‘(এ) নামাজেই আমার চোখের শীতলতা দান করা হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ)
২. يَا بِلَالُ! أَقِمِ الصّلَاةَ، وَأَرِحْنَا بِهَا.
‘হে বেলাল! নামাজের ব্যবস্থা করে আমাকে শান্তি দাও।’ (আবু দাউদ)
এ নামাজই মুমিনের জন্য এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল, অন্তরের প্রশান্তি, শান্তির আধার। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি আরও বলেন-
‘তোমাদের কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সঙ্গে একান্তে আলাপ করে। সুতরাং তার উচিত সে কিভাবে আলাপ করছে সেদিকে যথাযথভাবে লক্ষ রাখা।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, ইবনে খুজাইমাহ)
এ জন্যই সাহাবি হজরত সাদ ইবনে ওমারাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু নামাজ সম্পর্কে এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন-
صَلِّ صَلَاةَ مُوَدِّعٍ
‘যখন তুমি নামাজ আদায় কর, তো এমনভাবে আদায় কর যেন এটাই তোমার জীবনের শেষ নামাজ।’ (তাবারানি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত অনুভূতি নিয়ে জীবনের প্রতিটি ওয়াক্তের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম