সামাজিক উন্নয়নে ইসলামের অর্থনৈতিক নির্দেশনা কী?

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:২৭ পিএম, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

ব‍্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র প্রত‍্যেকের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল অর্থনৈতিক ব‍্যবস্থা। সমাজের উন্নয়নে ইসলামিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিকল্প নেই। বিশেষ ৪টি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইসলাম সামাজিক উন্নয়নের পথকে সুগম করেছে। কোরআন-সুন্নাহর বর্ণনায় এসব খাতকে বাস্তবে রূপ দিতে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যার বাস্তবায়নে সবার জন্য ইসলামি অর্থনৈতিক রূপরেখা কার্যকর ও প্রসারিত হবে। ইসলামিক সামাজিক অর্থায়নের সেই পথগুলো কী?

ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নাম। বাদ যায়নি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাও। সামাজিক উন্নয়নে ইসলাম অনেক অর্থনৈতিক খাতের দিকনির্দেশনা দেয়। ইসলামিক অর্থায়নের পথগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- জাকাত, দান-সাদকা; ওয়াকফ ও করজে হাসানা। সংক্ষেপে এ খাতগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরা হলো-

>> জাকাত
সম্পদশালীর জন্য জাকাত দেওয়া ফরজ। জাকাতভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সুখী সমৃদ্ধিশালী প্রগতিশীল কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব। জাকাত প্রদানে আল্লাহর নির্দেশ হলো-
وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰة
‘তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো আর জাকাত আদায় করো।’ (সুরা বাকারাহ : আয়াত ৪৩) এ নির্দেশ এসেছে সুরা বাকারার ৮৩,১১০, ২৭৭; সুরা নিসার ৭৭, ১৬২; সুরা আন-নুরের ৫৬; সুরা আহজাবের ৩৩ এবং সুরা মুজ্জামিলের ২০ নং আয়াতসহ আরও অনেক আয়াতে।

আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক নেসাবের অতিরিক্ত সম্পদ থাকলে আড়াই শতাংশ হারে ৮ শ্রেণির মানুষকে জাকাত দেওয়া। জাকাত সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্যই হলো সমাজের অসহায়, গরিব ইয়াতিম ও নিঃস্ব লোকদের পূনর্বাসিত করা। তাদের জীবন-মানের উন্নয়ন করা। জাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮২ সালে ইসলামি শরিয়া আইনে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠন করেছে জাকাত বোর্ড।

গরিব-অসহায় মানুষের সামাজিক উন্নয়নের জন্য জাকাতের মতো ইসলামি অর্থ ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। দেশের দারিদ্র বিমোচন এবং সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে নিঃস্ব ও দরিদ্র শ্রেণিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পুণর্বাসিত করতে জাকাত আদায় ও বণ্টন খুবই কার্যকরী। এ কারণেই চিরন্তন ও শাশ্বত ধর্ম ইসলাম জাকাতের ন্যায় একটি ফলপ্রসূ ও কার্যকর বিধানের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী রূপরেখা প্রদান করেছে। যা মানব রচিত সব অর্থনৈতিক মতবাদের উপর ইসলামি অর্থব্যবস্থার সার্বজনীনতা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। জাকাত ব্যবস্থাপনায় যে ৮ শ্রেণির মানুষ উপকৃত হবে; তাদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা এসেছে কোরআনে। তারা হলেন-
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡهَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُهُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ
নিশ্চয়ই (ফরজ) সাদকা হচ্ছে- ফকির ও মিসকিনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় (নওমুসলিম) তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আজাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিধান। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৬০)

>> সাদকা
মানুষের উপকারের জন্য সাধারণ দান-সাদকা অন্যতম। অর্থনৈতিক টানা-পোড়নে যখন গরিব-অসহায় মানুষ দিশেহারা; সে সময় সামান্য দান-সাদকাও অভাবি মানুষের জন্য খুবই গুরুত্ববহন করে। সম্পদশালীদের জন্য দান-সাদকা দুনিয়ার জীবন ও পরকালের জন্য খুবই ফজিলতপূর্ণ। এটি মানুষের সম্মান ও গৌরব বৃদ্ধি করে। সে কারণে যথাযথ সম্মান, মর্যাদা তথা ইজ্জত, হুরমত ও তাজিমের সঙ্গে সযত্নে গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের মাঝে দান-সাদকা করতে হয়। দান-সাদকাকে সম্মানজনক ইবাদত-বন্দেগি ও পবিত্র মনে করা দানকারীর অন্যতম কর্তব্য।

জাকাত যারা পাওয়ার যোগ্য দান-সাদকাও তারাই পাওয়ার যোগ্য। তবে জাকাত যেহেতু সম্পদের হিসাব-নিকাশের ওপর নির্ভরশীল। তাই বছরের যে কোনো সময় সামথ্যবান মানুষের জন্য অভাবি মানুষকে সম্মানের সঙ্গে দান-সাদকা করা জরুরি।

দান কি শুধু গরিবকে করতে হবে?
তবে দান শুধু গরিব-অসহায়কেই করতে হবে এমন নয়; বরং দানের ক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। সম্পদ ব্যয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ খাত হলো ‘পিতা–মাতা’। আত্মীয়দের মধ্যে ভাই-বোনের অধিকার সবচেয়ে বেশি।
বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয় যাঁরা, তাঁদের মধ্যে শ্বশুর–শাশুড়ি ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া। তাঁদের হাদিয়া, উপহার ও উপঢৌকন দেওয়া সুন্নাত। যদিও সম্ভ্রান্তরা এসব দান গ্রহণ করতে ইস্ততবোধ করেন; তাই তাঁদের হাদিয়া বা উপহার উপঢৌকন হিসেবে দেওয়াই সমীচীন। এটাই দানের শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। আবার অন্যদেরকেও ‘জাকাত বা দান-সাদকার কথা উল্লেখ না করেও দেওয়া যায়; এভাবে দান করলে যারা দান গ্রহণ করেন তারা বিব্রতবোধ করেন না।

দানকারীর মর্যাদা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম।’ (মুসলিম) অর্থাৎ দানকারী ব্যক্তি গ্রহণকারী ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম। এ দানের ফলেই দানকারী দুনিয়া ও পরকালে ফজিলত, সম্মান ও গৌরব লাভ করে।

হজরত কাআব ইবনে উজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাদকা পাপ নিভিয়ে দেয় যেভাবে পানি আগুন নেভায়।’ (তিরমিজি)

হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি গোপনে সাদকা দেয় তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই ৭ শ্রেণির মধ্যে গণ্য করবেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা তার আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন; যেদিন তাঁর আরশের ছায়া ব্যতিত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এবং এমন ব্যক্তি যে সদকা করল, এরপর তা গোপন করল, এমনকি তার বাম হাত জানল না, তার ডান হাত কি দান করছে।’

দান-সাদকায় করণীয়
দান করে কাউকে খোঁটা দেওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে কোরআন-সুন্নায় নিষেধাজ্ঞা এসেছে এভাবে-
১. ‘হে মুমিনগণ! তোমরা খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বাতিল কোরো না। তাদের মতো যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে লোকদেখানোর জন্য এবং তারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৬৪)
২. এমনটি নিষেধ করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘খোঁটাদানকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (তিরমিজি)

>> ওয়াকফ
ওয়াকফ হলো মূল স্বত্ব নিজের রেখে বস্তুর উপকার দান করা। বেশির ভাগ আলেমের মতে, ওয়াকফ করলে তা বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে এবং ওয়াকফ ফেরত নেওয়া যায় না। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছেন, ‘তুমি ইচ্ছা করলে জমির মূল স্বত্ব ওয়াকফে আবদ্ধ রেখে উৎপন্ন বস্তু সদকা করতে পার।’ (বুখারি)
ইসলামি আইনে সাধারণত কোনো ভূমি, ভবন বা সম্পদ ধর্মীয় বিষয়ের প্রতি মানসিকতা রেখে দাতব্য প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্দেশ্যে দেওয়াকে ওয়াকফ বলা হয়। ওয়াকফ-এর মাধ্যমেও ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা জোরদার হয়।

ওয়াকফকৃত সম্পদ কোনো ট্রাস্ট বা কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়। ইসলামী সংস্কৃতির রীতি অনুযায়ী ধর্মীয় কাজে চিরস্থায়ীভাবে নিজের মালিকানাধীন সম্পদ উৎসর্গ করাই হচ্ছে ওয়াকফ। তাই সম্পদ বা অর্থ এমনভাবে দান করা যেখানে মূলটা থেকে যাবে আর সে সম্পদ থেকে প্রাপ্ত অর্থ মানুষের কাজে ব্যয় হতে থাকবে।

এ ওয়াকফ শুধু মুসলিমদের বৈশিষ্ট্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের মধ্যে যাঁদেরই সামর্থ্য ছিল; তাঁরা সবাই ওয়াকফ করেছেন। ওয়াকফের শাব্দিক অর্থ কোনো কিছু আটকে রাখা বা উৎসর্গ করা। আর পারিভাষিক অর্থে বস্তুর মূল স্বত্ব ধরে রেখে (মালিকানায় রেখে) এর উপকারিতা ও সুবিধা প্রদান করা।

ওয়াকফকৃত বস্তু কারো মালিকানায় প্রবেশ করা থেকে বেরিয়ে যাবে, শুধু বস্তুর উপকার যাদের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে তাদের জন্য নির্ধারিত হবে। ওয়াকফের উপকারের মালিকানা যাদের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে তারা ওয়াকফকারীর জীবদ্দশায়ই পাবে এবং তার মৃত্যুর পরও ভোগ করবে। ওয়ারিশের জন্য ওয়াকফ করা জায়েজ।

ওয়াকফের শর্ত
ওয়াকফকারীর মধ্যে কতিপয় শর্ত থাকতে হবে, নতুবা তার ওয়াকফ করা জায়েজ হবে না। শর্তগুলো হচ্ছে-
১. ওয়াকফকারীকে দান করার যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে। জবরদখলকারী এবং যার মালিকানা স্থির হয়নি; এমন লোকের পক্ষ থেকে ওয়াকফ করা জায়েজ হবে না।
২. ওয়াকফকারীকে বিবেকবান (জ্ঞানসম্পন্ন) হতে হবে। পাগল ও বিকারগ্রস্ত ব্যক্তির ওয়াকফ সঠিক হবে না।
৩. ওয়াকফকারীকে বালেগ তথা প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। শিশুর ওয়াকফ শুদ্ধ হবে না। যদিও কোনো শিশু ভালো-মন্দ পার্থক্য করতে পারে।
৪. বুদ্ধিমান হওয়া। নির্বোধ বা বোকার ওয়াকফ শুদ্ধ হবে না।

ওয়াকফকৃত বস্তুর শর্ত
যে সম্পদ বা জিনিস ওয়াকফ করা হবে; ওয়াকফ বাস্তবায়নে সে সম্পদের মধ্যেও কিছু শর্ত রয়েছে। তাহলো-
১. ওয়াকফকৃত বস্তুর মূল্য বা দাম থাকতে হবে। যেমন- জমি-জমা ইত্যাদি।
২. ওয়াকফকৃত বস্তুর পরিমাণ জানা ও নির্ধারিত থাকতে হবে।
৩. ওয়াকফকৃত বস্তু জমি-জমা ওয়াকফ করার সময় ওয়াকফকারীর মালিকানায় থাকতে হবে।
৪. ওয়াকফকৃত বস্তু সুনির্দিষ্ট হতে হবে। যৌথ মালিকানার সম্পদ এককভাবে ওয়াকফ করা যাবে না। বহু মানুষের মালিকানাধীন কোনো বস্তুর একাংশ ওয়াকফ করলে তা শুদ্ধ হবে না।
৫. ওয়াকফকৃত বস্তু বা সম্পদের সঙ্গে অন্যের অধিকার সম্পৃক্ত থাকা যাবে না।
৬. ওয়াকফকৃত বস্তু দ্বারা প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী উপকার গ্রহণের সুবিধা থাকতে হবে।
৭. ওয়াকফকৃত বস্তুতে বৈধ উপকার থাকতে হবে। তা থেকে উপকার পাওয়ার ধরন এমন হতে হবে-
‘ঘর-বাড়িতে বসবাস করে, আরোহণকারী পশু ও যানবাহনে আরোহণ করে, জীবজন্তুর পশম, দুধ, ডিম, লোম সংগ্রহ করে উপকার নেওয়া যায়।’

সামাজিক উন্নয়নে ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ওয়াকফ-এর গুরুত্ব অপরিসীম। যা শুধু ইসলামেই সম্ভব।

>> করজে হাসানা
এমন ঋণ যা থেকে দাতা অতিরিক্ত কোনো অর্থ বা সুবিধা নেবে না। বরং ঋণগ্রহিতা সময় মতো মূলধন ফেরত দেবে। এর উদ্দেশ্য হলো- সমাজের একটি প্রয়োজন পূর্ণ করা। ব্যবসা-বাণিজ্যের বাইরেও নানা কারণে মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের করজে হাসানার দরকার হতে পারে।

করজে হাসানায় মেলে নফল সাদকার সাওয়াব। তাই সবসময় করজে হাসানা বা নফল সদকা দেয়া উত্তম। বিশেষ করে যখন প্রয়োজন দেখা দেয়। এ ব্যাপারে কোরআন ও সুন্নাহর দিকনির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا فَيُضَٰعِفَهُۥ لَهُۥٓ أَضۡعَافٗا كَثِيرَةٗۚ
‘কে আছে, যে আল্লহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন?’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৪৫)

করজে হাসানার উদ্দেশ্য
মানব জীবনের বিশেষ অর্থনৈতিক কল্যাণমূলক ব্যবস্থার নাম ‘করজে হাসানা’। এর উদ্দেশ্য হলো- সমাজের ঋণগ্রস্ত মানুষের একটি প্রয়োজন পূর্ণ করা। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বা প্রতিষ্ঠানের নানা সময়ে নানা কারণে সাময়িক ঋণ গ্রহণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সবসময় ব্যক্তির কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ থাকে না। কিন্তু সম্ভাবনা থাকে যে, পরে করজ পরিশোধ করতে পারবে।
এ কারণেই মহান আল্লাহ ইসলামি অর্থনীতিতে করজে হাসানার বিধান রেখেছেন। যেন মানুষ বিনা সুদে সাময়িকভাবে করজে হাসানা নিতে পারে এবং পরে তা দিয়ে দিতে পারে। কেননা ইসলাম সুদকে হারাম ঘোষণা করেছে। ফলে কোনো ব্যক্তির পক্ষে সুদের ভিত্তিতে অর্থ নেওয়া উচিত নয়।

কোরআনুল কারিমের একাধিক স্থানে করজে হাসানার কথা এসেছে-
১. ‘কে সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে উত্তম করজে হাসানা দেবে, এরপর তিনি তার জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানিত পুরস্কার। (সুরা আল-হাদিদ : আয়াত ১১)
২. ‘নিশ্চয়ই দানশীল ব্যক্তি ও দানশীল নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে করজে হাসানা দেয়, তাদের দেওয়া হবে বহুগুণ এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ (সুরা আল-হাদিদ : আয়াত ১৮)
৩. ‘যদি তোমরা আল্লাহকে করজে হাসানা দান কর, তিনি তোমাদের জন্য তা দ্বিগুণ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, সহনশীল।’ (সুরা আত-তাগাবুন : আয়াত ১৭)
৪. ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, আল্লাহকে ‘করজে হাসানা’ দিতে প্রস্তুত? এরপর আল্লাহ তাকে কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। হ্রাস-বৃদ্ধি দুটোই আল্লাহর হাতে রয়েছে। আর তারই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৪৫)

হজরত আবু হুরায়রা বাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সাদকা করে; আর আল্লাহ হালাল ব্যতিত অন্যকিছু গ্রহণ করেন না; আল্লাহ তাআলা তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন এরপর তিনি তা লালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন করে, এমনকি একসময় সে সদকা পাহাড়তুল্য হয়ে যায়।’ (বুখারি ও মুসলিম)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সমাজ উন্নয়নে ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাগুলো যথাযথভাবে সমাজে প্রচলন করা। জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলা। সম্পদশালীরা দান-সাদকার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া। ওয়াকফ ব্যবস্থার মাধ্যমে ইসলামি অর্থনীতিকে গতিশীল করা। করজে হাসানার মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নে এগিয়ে আসা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সমাজ উন্নয়নে ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, জাকাত, দান-সাদক, ওয়াকফ ও করজে হাসানার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত ও উপকারিতা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।