গ্রহণযোগ্য জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে ইসলামের ঘোষণা
ইসলামই একমাত্র মনোনীত জীবন ব্যবস্থা। এর বাইরে অন্য কোনো জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। আল্লাহ তাআলার এমন ঘোষণার পরও অনেকে অন্য ধর্মের পেছনে ছুটে চলে। ইসলাম ছাড়া মানুষের অন্য ধর্মের পেছনে ছুটে চলা সম্পর্কে মহান আল্লাহ সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন কোরআনে। তাহলে কি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে?
اَفَغَیۡرَ دِیۡنِ اللّٰهِ یَبۡغُوۡنَ وَ لَهٗۤ اَسۡلَمَ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ طَوۡعًا وَّ کَرۡهًا وَّ اِلَیۡهِ یُرۡجَعُوۡنَ قُلۡ اٰمَنَّا بِاللّٰهِ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ عَلَیۡنَا وَ مَاۤ اُنۡزِلَ عَلٰۤی اِبۡرٰهِیۡمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ وَ اِسۡحٰقَ وَ یَعۡقُوۡبَ وَ الۡاَسۡبَاطِ وَ مَاۤ اُوۡتِیَ مُوۡسٰی وَ عِیۡسٰی وَ النَّبِیُّوۡنَ مِنۡ رَّبِّهِمۡ ۪ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡهُمۡ ۫ وَ نَحۡنُ لَهٗ مُسۡلِمُوۡنَ وَ مَنۡ یَّبۡتَغِ غَیۡرَ الۡاِسۡلَامِ دِیۡنًا فَلَنۡ یُّقۡبَلَ مِنۡهُ ۚ وَ هُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ
‘তারা কি আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা পরিবর্তে অন্য ধর্ম তথা জীবন ব্যবস্থা চায়? অথচ আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই স্বেচ্ছায়-অনিচ্ছায় তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে! এবং তাঁরই কাছে তারা ফিরে যাবে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৩)
‘(হে রাসুল! আপনি) বলে দিন, ‘আমরা আল্লাহতে এবং আমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাঁর বংশধরের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল এবং যা মুসা, ঈসা ও অন্যান্য নবিগণকে তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে দেওয়া হয়েছে; তাতে বিশ্বাস করি। আমরা তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৪)
‘যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য জীবন ব্যবস্থা অনুসন্ধান করবে, তার পক্ষ থেকে তা (অন্য কোনো জীবন ব্যবস্থা) কখনও গ্রহণ করা হবে না। আর সে হবে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৫)
আয়াতের আলোচ্য বিষয়
প্রথম আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষের অন্য ধর্মের পেছনে ছুটে চলার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। অথচ আল্লাহর কাছে আত্মসমার্পনের বিষয়টি সুস্পষ্ট। যখন আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই আল্লাহর কুদরত ও ইচ্ছার বাইরে নয় চাই তা স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়; তখন তোমরা তাঁর সামনে ইসলাম কবুল করা থেকে বিরত কেন? তাইতো তিনি বলেন-
‘তারা কি আল্লাহর দেওয়া জীবন ব্যবস্থা পরিবর্তে অন্য ধর্ম তথা জীবন ব্যবস্থা চায়? অথচ আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই স্বেচ্ছায়-অনিচ্ছায় তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে! এবং তাঁরই কাছে তারা ফিরে যাবে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৩)
পরের আয়াতে ঈমান আনার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে যে, ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বনকারীদের ভাগ্যে ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই জুটবে না। তাই বলা হয়েছে যে, আগের সব নবি এবং তাদের ওপর নাজিল হওয়া কিতাবের ওপর কোনো প্রকার পার্থক্য না করে বিশ্বাস স্থাপন করাও জরুরি। (আহসানুল বয়ান)
মনে রাখতে হবে
ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আল্লাহর কাছে সব সৃষ্টিকেই আত্মসমৰ্পন করতে হয়। প্রতিটি সৃষ্টি জীবই আল্লাহর নিয়মের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য। কেননা তাকে অবশ্যই মরতে হবে। তাকে অবশ্যই কষ্ট স্বীকার করতে হবে। তাকে অবশ্যই রোগ-বালাই এর সম্মুখীন হতে হবে, ইত্যাদি।
কিন্তু তারা সবাই তা মন বা মুখে স্বীকার করতে চায় না। আবার স্বীকার করলেও আল্লাহর কাছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নতি স্বীকার করে না। সব সৃষ্টজীবই এ প্রকার আত্মসমর্পনের অধীন। এ ধরনের আত্মসমর্পনের মধ্যে কোনো সাওয়াব নেই।
তবে এদের মধ্যে একদল আছে যারা আল্লাহর এ নিয়মনীতি প্রত্যক্ষ করে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে তাঁর আনুগত্য করেছে। এ ধরনের আত্মসমৰ্পনই আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের কাছে আশা করেন। এর মধ্যেই রয়েছে সওয়াব ও মুক্তি। (তাফসিরে তাবারি)
এ আয়াতের বক্তব্য ওঠে এসেছে অন্য আয়াতে-
১. ‘আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে এ সবই ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এবং তাদের ছায়াগুলোও সকাল ও সন্ধ্যায় আল্লাহর প্রতি সেজদাবনত হয়।’ (সুরা আর-রাদ : আয়াত ১৫]
২. ‘তারা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর প্রতি; যার ছায়া ডানে ও বামে ঢলে পড়ে আল্লাহর প্রতি সেজদাবনত হয়? আল্লাহকেই সেজদা করে; যা কিছু আছে আসমানসমূহে ও জমিনে। যত জীবজন্তু আছে সেসব এবং ফেরেশতাগণও; তারাও অহংকার করে না। আর তারা ভয় করে তাদের উপর তাদের রবকে এবং তাদেরকে যা আদেশ করা হয় তারা তা পালন করে।’ (সুরা আন-নাহল : আয়াত ৪৮)
ঈমান গ্রহণের পদ্ধতি
قُلۡ اٰمَنَّا بِاللّٰهِ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ عَلَیۡنَا وَ مَاۤ اُنۡزِلَ عَلٰۤی اِبۡرٰهِیۡمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ وَ اِسۡحٰقَ وَ یَعۡقُوۡبَ وَ الۡاَسۡبَاطِ وَ مَاۤ اُوۡتِیَ مُوۡسٰی وَ عِیۡسٰی وَ النَّبِیُّوۡنَ مِنۡ رَّبِّهِمۡ ۪ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡهُمۡ ۫ وَ نَحۡنُ لَهٗ مُسۡلِمُوۡنَ
‘(হে রাসুল! আপনি) বলে দিন, ‘আমরা আল্লাহতে এবং আমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাঁর বংশধরের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল এবং যা মুসা, ঈসা ও অন্যান্য নবিগণকে তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে দেওয়া হয়েছে; তাতে বিশ্বাস করি। আমরা তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৪)
প্রত্যেক সত্য নবিদের প্রতি এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, তাঁরা সব সব সময়ে আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত ছিলেন। অনুরূপ তাঁদের উপর যে কিতাব ও সহিফা নাজিল হয়েছিল, তা সবই আসমানি কিতাব এবং বাস্তবিকই তা আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ। আর এ কথাও বিশ্বাস করতে হবে যে, সব আসমানি কিতাবের মধ্যে কোরআনুল কারিম হলো সর্বোত্তম কিতাব। আর এখন শুধু এই কিতাবের উপরই আমল করতে হবে। কারণ কোরআন নাজিল হওয়ার পর আগের সব কিতাবের হুকুম আল্লাহর নির্দেশেই রহিত হয়ে গেছে। (আহসানুল বয়ান)
বিশ্ববাসীর প্রতি ইসলামের আহ্বান, ইসলামকে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা মহান আল্লাহর নির্দেশ। আগের সব নবি-রাসুল ও তাদের প্রতি নাজিল হওয়া আসমানি কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাও মহান আল্লাহর নির্দেশ। শুধু ইসলামের অনুসরণ ও অনকুরণই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এর বাইরে অন্য কোনো জীবন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হবে। বিধায় সবার উচিত, ইসলামের দিকে ফিরে আসা। কেননা ইসলাম ছাড়া কোনো জীবন ব্যবস্থাই আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করবেন না। আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে সুস্পষ্টভাষায় ঘোষণা করেছেন-
وَ مَنۡ یَّبۡتَغِ غَیۡرَ الۡاِسۡلَامِ دِیۡنًا فَلَنۡ یُّقۡبَلَ مِنۡهُ ۚ وَ هُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ
‘যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য জীবন ব্যবস্থা অনুসন্ধান করবে, তার পক্ষ থেকে তা (অন্য কোনো জীবন ব্যবস্থা) কখনও গ্রহণ করা হবে না। আর সে হবে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৫)
আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীকে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে কবুল করার তাওফিক দান করুন। সব নবি-রাসুল ও আসমানি কিতাবের ওপর বিশ্বাস রাখার পাশাপাশি দুনিয়া ও পরকালের সঠিক পথ পেতে, শান্তি ও মুক্তির লক্ষ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি-রাসুল হিসেবে শুধু হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপরই বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। শুধু কোরআনের বিধান মতো নিজেদের জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম