ইসলামি সংগীতের জনপ্রিয় শিল্পী আব্দুল্লাহ আল-মুয়াজ

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫০ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০২১

মাহমুদুল হক জালীস

আব্দুল্লাহ আল-মুআজ রিফাত। একজন উদিয়মান নাশিদ শিল্পী। সম্প্রতি তার ইউটিউব চ্যানেল 'অফিশিয়াল আর্টিস্ট ব্যাজ' অর্জন করেছে। যা তাকে ইসলামি সংগীতাঙ্গনে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশের নদীমাতৃক জনপদ বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলায় জন্ম নেওয়া এ তরুণ নাশিদ শিল্পী বর্তমানে ইসলামি সাংস্কৃতি নিয়ে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে নিজের লেখা এবং সুরে বেশ কয়েকটি ইসলামি গান গেয়ে দর্শকদের মন জয় করেছেন উদীয়মান এ শিল্পী।

নাশিদ আর্টিস্ট রিফাত ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ইসলামিক অনুষ্ঠানে হামদ, নাত ও ইসলামি সংগীত গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ কর‍তেন। তার গাওয়া ইসলামি সংগীত, হামদ ও নাত তন্ময় হয়ে উপভোগ করতেন দর্শক-শ্রোতারা।

নাশিদ শিল্পী আব্দুল্লাহ আল-মুয়াজ ছোটবেলা থেকেই আন্তর্জাতিক মানের ইসলামি সংগীত শিল্প হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি তার ইউটিউব চ্যানেলে 'অফিশিয়াল আর্টিস্ট ব্যাজ' অর্জন তার লক্ষ্যকে আরো সামনে এগিয়ে নিল।

বাবা-মা ও শিক্ষকরা শৈশবে তার মাঝে ইসলামি সংগীতর প্রতিভা ও আগ্রহ লক্ষ্য করেন। সে সময়টিতে বাবা-মা ও শিক্ষকরা আগে ভালোভাবে হিফজ ও পড়াশোনা শেষ করার তাগিদ দেন। পড়ালেখার পাশাপাশি নাশিদ শিল্পী আব্দুল্লাহ আল-মুয়াজ নিজের শিল্পী হওয়ার লালিত স্বপ্ন সংগীত চর্চা ও কবিতা-গান লেখালেখি চালিয়ে যান।

কুরআনুল কারিমের হিফজ শেষ করেই তিনি পুরো দমে ইসলামি সংগীতের দিকে মন দেন। তারপর ধারাবাহিক ভাবে বের হতে থাকে তার বেশকিছু ইসলামি সংগীত ও অ্যালবাম। স্বপ্ন ও সফলতার দিকে পথচলা শুরু হয় শিল্পী আব্দুল আল-মুয়াজ রিফাতের।

২০১৭ সালে রিলিজ হয় তার প্রথম একক অ্যালবাম- ‘হে রাসুল দেখা দাও আমায়’। এভারে আরও ৬টি অ্যালবাম রিলিজ হওয়ার পর শিল্পী আব্দুল আল-মুয়াজ ভিডিও মিউজিক বের করার পরিকল্পনা নেন।

২০১৯ সালে তার প্রথম ভিডিও ‘প্রভুর প্রেমে’ রিলিজ হয়। এর ধারাবাহিকতায় ‘সাল্লিআলা’, ‘ও নবীজি ’, ‘শুকরিয়া’ ‘ সীমাহীন ভালবাসা’ ‘তাকওয়া হাসিলে রমাদান’, নেতার ভুড়ি, আল্লাহ মেহেরবান, দুর করে দাও করোনা গজব, সুবহানাল্লাহ, প্রেমের গান, জান্নাতী নুর, চিরবিদায়, মুহাম্মাদ রাসুল’ প্রেমের গান’ ‘কাবার প্রেমে’সহ অসংখ্য নাশিদ গেয়ে নিজের সংগীত ক্যারিয়ার উজ্জ্বল করেছেন আব্দুল্লাহ আল মুআজ রিফাত।

শিল্পী আব্দুল্লাহ আল-মুয়াজ রিফাতের জনপ্রিয় সব নাশিদগুলো ইউটিউব চ্যানেলের পাশাপাশি স্পটিফাই, আইটিউন, আমাজন মিউজিক অ্যাপেল মিউজিক, সাউন্ডক্লাউড ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিউজিক প্লাটফর্মেও রিলিজ হয়েছে।

তাঁর নিজের লেখা ও সুর করা জনপ্রিয় ইসলামি সংগীতগুলো হলো- নুরে মোজাচ্ছাম, নুরে মদিনা, প্রভু রহমান, ও মদিনাওয়ালা, নিশি রাতের ঐ তারার মেলায় ইত্যাদি।

শিল্পী আব্দুল্লাহ আল-মুয়াজ রিফাত শুধু শিল্পী, গীতিকারও সুরকারই নয় বরং একজন লেখক-কবি হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে। তার নিজের লেখা বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থও রয়েছে। ইসলামি সংগীত ও কবিতা লেখালেখির তিনি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।

দেশের বিভিন্ন চ্যানেলে তার অডিও-ভিডিও সংগীত প্রচারিত হয়। এসব চ্যানেলের মধ্যে রয়েছে একুশে টিভি, বিটিভি, দীপ্তটিভি, বাংলাভিশন, চ্যানেল নাইন, বৈশাখীটিভি, বাংলাদেশ বেতার, কৃষি রেডিও এফএম ৯৮.৮। এসব চ্যানেলে প্রতিবছরই রমজান মাসের বিশেষ অনুষ্ঠানে ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন তিনি।

ইসলামি সংগীত নিয়ে কাজ করার আগ্রহও উদ্দেশ্য সম্পর্কে উদীয়মান শিল্পী আব্দুল্লাহ আল-মুয়াজ রিফাত জানান, ছোটবেলায় ছারছীনা দরবার পরিচালিত ‘জুলফিকার শিল্পীগোষ্ঠী’র তৎকালীন পরিচালক জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী মুফতি আব্দুল মুনয়িম খানের কিছু জনপ্রিয় সংগীত হুবহু তার মতো করে গাওয়ার চেষ্টা করতাম। সে সময়- ‘ডেকে লও রাসুলাল্লাহ; জীবন দিয়ে ভালবাসি নবী তোমাকে; হে রাসুল তোমায় ভালবাসি; সংগীতগুলো মাদরাসার বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ ওস্তাদদের গেয়ে শুনাতাম। ওস্তাদরাও অনেক সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগীত গাওয়ার জন্য আমাকে সঙ্গে নিয়ে যেতো।

সে সময় পড়াশোনায় আমার তেমন মনোযোগ না দেখে আমার আব্বু বলতেন যে, তুমি আগে হিফজ সম্পন্ন কর। পরে সংগীতের জন্য অনেক সময় পাবে। আব্বুর কথা শুনে পুরোদমে পড়াশোনায় মন দিই এবং মাত্র দুই বছরে হিফজ সম্পন্ন করি।

শিল্পী আব্দুল্লাহ আরও জানান, জীবনের শুরুতে সংগীত চর্চায় কারো সাহায্য পাইনি। বরং উল্টো আমি যেন ইসলামি সংগীত অঙ্গনে কাজ করতে না পারি সে জন্য অন্যরা পরিবারের সদস্যদের প্রতি চাপ প্রয়োগ করতো। যার ফলে নিজের মধ্যে একটা জেদ কাজ করে। তবে কিছু প্রিয়জন আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ দেয়। বিশেষ করে আম্মুর উৎসাগ ও অনুপ্রেরণা ছিল সবচেয়ে বেশি। যে কারণে আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি।

সংগীত গাওয়ার উদ্দেশ্য তুলে ধরে শিল্পী আব্দুল্লাহ আল-মুয়াজ জানান, ‘আমি সংগীত গেয়ে ভাইরাল হওয়ার জন্য গাই না; একমাত্র আল্লাহ ও তার রাসুলের সন্তুষ্টিই ইসলামি সংগীত গাওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য।

আমি মনে করি- ইসলামি সংগীত; ইসলামি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের একটি অংশ। মানুষ বিনোদনের নামে বেহায়াপনায় মত্ত। নোংরা সংস্কৃতির মোহে পড়ে আছে।

আমি আশাবাদী- আগামী দিনে মুসলিম উম্মাহ অশ্লীল গান ছেড়ে আমাদের সুস্থ সুন্দর ও হালাল বিনোদন গ্রহণ করবে। সুন্দর জীবনে ফিরে আসবে।

ইসলামি সংগীত নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন রয়েছে। ইসলামি সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি মানুষের কাছে এটাই আমার প্রত্যাশা।

সম্প্রতি সময়ে ইসলামি সংগীতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে- এক্ষেত্রে কেউ যদি এটিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে চায় তাহলে কি পারা যাবে? না মূল কাজের পাশাপাশি সংগীত চর্চা করতে হবে- আব্দুল্লাহ আল মুআজ রিফাতের কাছে এমন একটি প্রশ্নটি করেছিলাম।

এ প্রশ্নের জবাবে শিল্পী আব্দুল্লাহ আল মুআজ রিফাত জানান, আগে ইসলামি সংগীতের এমন বিশাল ইন্ডাস্ট্রি ছিল না, তাই শিল্পীরা মূল পেশার পাশাপাশি ইসলামি সংগীত করত। তবে শিল্পীর গায়কির পাশাপাশি ইসলামি সংগীতের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য টেকনিক্যাল অভিজ্ঞতাসহ আরো নানা অভিজ্ঞতা থাকা উচিত।

নাশিদ শিল্পী আব্দুল্লাহ আল মুআজ রিফাত বর্তমান সময়ে ইসলামি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জনপ্রিয় ও সুপরিচিত একটি নাম। তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ ও পড়াশোনার পাশাপাশি কয়েকটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করছেন। ইউটিউবে শিল্পীর ব্যক্তিগত চ্যানেল রয়েছে এবং চ্যানেলটিতে নিয়মিত নাশিদ রিলিজ করছেন। বর্তমানে তিনি ইসলামিক সংগীত নিয়ে কাজ করছেন। উদীয়মান এ শিল্পী দশ ও দেশের কল্যাণে সংগীত নিয়ে কাজ করায়ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইসলামি সংগীত অঙ্গনে সমৃদ্ধি ও সাফল্য লাভে সবার কাছে দোয়াপ্রার্থী আব্দুল্লাহ আল-মুয়াজ রিফাত।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।