জান্নাতের সুসংবাদ যেসব মুমিনের জন্য সুনিশ্চিত
একজন মুমিনের জীবনে সব চাওয়া-পাওয়া হওয়া চাই শুধু মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য। প্রকৃতপক্ষে মুমিন বান্দা কখনও ব্যক্তিগত কোনো কামনা-বাসনা করে না। কুরআনুল কারিম মহান আল্লাহ সেসব মুমিন বান্দার পরিচয় ও তাদের সুনিশ্চিত পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছেন। মুমিন বান্দাকে আল্লাহ তাআলা তার সন্তুষ্টির কাজে উৎসাহ দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের ভিন্ন ভিন্ন আয়াতে মুমিনের পরিচয় তুলে ধরে তাদের জন্য সুনিশ্চিত জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। মুমিনের পরিচয় তুলে ধরে মহান আল্লাহ বলেন-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ
‘তারাই প্রকৃত মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা জেহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৫)
যেসব মুমিনের সব কাজ ও চাওয়া-পাওয়া শুধু আল্লাহর জন্য; কামনা-বাসনাহীন এসব মুমিনের জন্য সুনিশ্চিত অনুগ্রহের ঘোষণা একাধিক আয়াতে এভাবে দিয়েছেন আল্লাহ-
১. وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ بِأَنَّ لَهُم مِّنَ اللَّهِ فَضْلًا كَبِيرًا
‘আপনি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় অনুগ্রহ রয়েছে।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৪৭)
২. وَعَدَ اللّهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللّهِ أَكْبَرُ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
আল্লাহ ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের জন্য এমনসব কানন-কুঞ্জের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেনে, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় স্রোতধারা। তারা চিরস্থায়ীভাবে সে গুলোরই মাঝে অবস্থান করবে। আর এসব কানন-কুঞ্জে থাকবে পরিচ্ছন্ন থাকার ঘর। বস্তুত এ সমুদয়ের মাঝে সবচেয়ে বড় হল আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটিই হল মহান কৃতকার্যতা। (সুরা আত তাওবাহ: আয়াত ৭২)
ঈমানদার নারী-পুরুষের গুণাবলী
সুনিশ্চিত জান্নাত পাওয়ার জন্য একজন মুমিন পুরুষ ও একজন মুমিন নারীর মাঝে কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন; তাও ওঠে এসেছে কুরআনের বর্ণনায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اِنَّ الۡمُسۡلِمِیۡنَ وَ الۡمُسۡلِمٰتِ وَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ وَ الۡقٰنِتِیۡنَ وَ الۡقٰنِتٰتِ وَ الصّٰدِقِیۡنَ وَ الصّٰدِقٰتِ وَ الصّٰبِرِیۡنَ وَ الصّٰبِرٰتِ وَ الۡخٰشِعِیۡنَ وَ الۡخٰشِعٰتِ وَ الۡمُتَصَدِّقِیۡنَ وَ الۡمُتَصَدِّقٰتِ وَ الصَّآئِمِیۡنَ وَ الصّٰٓئِمٰتِ وَ الۡحٰفِظِیۡنَ فُرُوۡجَهُمۡ وَ الۡحٰفِظٰتِ وَ الذّٰکِرِیۡنَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا وَّ الذّٰکِرٰتِ ۙ اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا
‘নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও রোজা পালনকারী নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী পুরুষ ও সুরক্ষাকারী নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও স্মরণকারী নারী, তাদের সবার জন্য আল্লাহর ক্ষমা ও মহা পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৩৫)
আল্লাহ তাআলা এ আয়াত দ্বারা নারীদের ইবাদত ও প্রাপ্তির বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের জন্য যেমন ইবাদতের হুকুম তেমনি পুরস্কার ও প্রতিদান প্রাপ্তিতেও নারীরা শামিল। গুণ, মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি প্রতিদান প্রাপ্তিতেও নারীদের প্রতি ইসলামের ভূমিকা ও মর্যাদার বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে। ফলে নারীদের অধিকার বিষয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষীদের আর অপবাদ দেওয়ার সুযোগ থাকল না।
সুতরাং মুমিন নারী-পুরুষ ইসলামের সুন্দর আদর্শগুলো মেনে নেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের যেমন মুমিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে; তেমনি চিরস্থায়ী জান্নাতের অধিবাসী হিসেবে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে। এর জন্য প্রয়োজন-
কুরআন-সুন্নাহর পূর্ণ আনুগত্য। কেননা আনুগত্যের অপর নামই হচ্ছে ইসলাম। পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে ঈমানদার নারী-পুরুষ হতে পারবে প্রকৃত মুমিন। আল্লাহর বিধান মেনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুমহান আদর্শের অনুসরণ ও অনুকরণেই মুমিনের হৃদয় থাকবে পাপহীন নিষ্কলুষ।
মুমিন মুসলমানের উচিত- মহান আল্লাহ তাআলা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। সব সময় আল্লাহর কাছে সব বিষয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা। কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার পরিপূর্ণ আনুগত্য করা।
কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণ ও অনুকরণেই মহান আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে যেমন ঈমানদার নারী-পুরুষকে মহামারিক করোনা ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বজ্রপাতসহ সব বিপর্যয় থেকে হেফাজত করবেন তেমনি পরকালের ভয়াবহ অবস্থা থেকে হেফাজত করে দান করবেন সুনিশ্চিত জান্নাত। যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত ঝর্ণাধারা। এমনটিই মহান আল্লাহ তাআলার ঘোষণা।
সুতরাং আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি ক্ষমা চেয়ে নিজেদের পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা। কুরআনে বর্ণিত গুণে নিজেদের তৈরি করা। আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করা।
আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার সব ঈমানদার নারী-পুরুষকে মুমিনের সব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দিন। কুরআন-সুন্নাহর সব বিধি-নিষেধ মেনে চলার তাওফিক দিন। বিশ্ববাসীকে সব মহামারি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম