জুমআর দিনের যেসব আমলে নেয়ামত পাবেন মুমিন

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১০ পিএম, ২৫ জুন ২০২১

ইসলামের জুমআর দিন ও নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বেশি। তাই জুমআর নামাজের আজান হলেই দুনিয়ার বেচাকেনা তথা সব কাজ বন্ধ করে দ্রুত নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে যাওয়ার নির্দেশ এসেছে কুরআনে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
‘হে মুমিনগণ! জুমআর দিনে যখন নামাজের জন্য ডাকা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে শীঘ্র ধাবিত হও, বেচাকেনা পরিত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে!' (সুরা জুমআ : আয়াত ৯)

এ আয়াতের আলোকে জুমআর দিনটি যেমন শ্রেষ্ঠ তেমনি এ দিনের ইবাদত-বন্দেগির মর্যাদাও বেশি। আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী দিনটির হক হলো- দুনিয়াবি কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকা এবং দিনটি আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করা। ফলে মহান আল্লাহ বান্দাকে দান করবেন উত্তম রিজিক তথা অনুগ্রহ। সে কথাও কুরআনুল কারিমে এভাবে এসেছে-
فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
‘অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর ও আল্লাহকে অধিকরূপে স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ১০)

শুধু তা-ই নয়
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় আল্লাহর কাছে কল্যাণ-অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য এভাবে দোয়া করে বের হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বনবি-
اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَسْئَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে উত্তম জীবিকা প্রার্থনা করছি।’

এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিনের বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করে আমলেরও নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসের একধিক বর্ণনায় তা এভাবে ওঠে এসেছে-

জুমআর দিনের বিশেষ ফজিলত ও আমল
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সূর্য উঠা দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়াছে। এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। কেয়ামতও হবে এই জুমার দিনে।’ (মুসলিম, আবু দাউদ)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমরা শেষে এসেছি কিন্তু কেয়ামতের দিন সবার আগে থাকব। যদিও অন্য সব জাতিকে (ইয়াহুদি ও খ্রিস্টান) গ্রন্থ (আসমানি কিতাব) দেওয়া হয়েছে আমাদের আগে, আমাদের কিতাব (কুরআন) দেওয়া হয়েছে তাদের পরে। অতঃপর জেনে রাখ! এ দিনটি আল্লাহ আমাদের দান করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আর অন্য লোকেরা এ ব্যাপারে আমাদের পেছনে আছে। ইয়াহুদিরা জুমআর পরের দিন (শনিবার উপাসনা) উদযাপন করে আর খ্রিস্টানেরা তার পরের দিন (রোববার উপাসনা) উদযাপন করে।’ (মুসলিম)

৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমআর দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম সময়ে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানি করল, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানি করল, তৃতীয় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানি করল। অতঃপর চতুর্থ যে ব্যক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগি সদকা করল। আর পঞ্চম যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম সদকা করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।’ (বুখারি)

৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমআর দিন যে ব্যক্তি গোসল করায়, নিজেও ফরজ গোসল করে এবং প্রথম ভাগে (আগে আগে) মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায়, ইমামের কাছাকাছি বসে, মনোযোগ দিয়ে খুতবাহ শোনে, কোনো কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব।’ (মুসনাদে আহমাদ)

জুমআর দিন এ আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করা-
১. গোসল করা।
২. ফজরের ফরজ নামাজে সুরা সাজদা ও সুরা দাহর/ইনসান তিলাওয়াত করা।
৩. উত্তম পোশাক পরা।
৪. সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৫. সবার আগে মসজিদে যাওয়া।
৬. সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা।
৭. মসজিদে গিয়ে তাহিয়্যাতুল অজু ও দুখুলিল মাসজিদ-এর ২ রাকাআত করে ৪ রাকাআত সুন্নত নামাজ আদায় করা।

৮. ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসা।
৯. মনোযোগ দিয়ে খুতবাহ শোনা। খুতবাহ চলাকালে কোনো কথা না বলা।
১০. দুই খুতবার মাঝের সময়ে বেশি বেশি দোয়া করা। বিশেষ করে ছানি খুতবার সময় ইমাম যখন দোয়া করে তখন আমিন, আমিন বলা।
১১. জুমআর দিন দোয়া কবুলের অন্য সময়েও দোয়া করা। কারণ এদিন দোয়া কবুল হয়।
১৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দিনব্যাপী যথাসম্ভব বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা। জুমআর রাত (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত) থেকে জুমআর দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠের কথা বলেছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

জুমআর দিন দরূদ পাঠের ফজিলত
এমনিতেই যে কোনো সময়ে একবার দরুদ শরিফ পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা পাঠকারীকে ১০টা রহমত দান করেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য ১০বার রহমতের দোয়া করেন। সুতরাং জুমআর মর্যাদাপূর্ণ দিনে বেশি বেশি দরূদ পাঠ করে দোয়া কবুলের সর্বাত্মক চেষ্টা করা ঈমানদারের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমআর দিন আসরের নামাজের পর নিজ স্থান থেকে ওঠার আগে ৮০ বার এই দরুদ শরিফ পাঠ করে-
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَعَلَى آلِهِ وَسَلِّم تَسْلِيْمَا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা।’
তার ৮০ বছরের গোনাহ মাফ হবে এবং ৮০ বছর ইবাদতের সাওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে। সুবহানাল্লাহ! (আফজালুস সালাওয়াত)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর দিনের সঠিক আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ঘোষিত ফজিলত ও আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।