রহমতের দশক শেষ হওয়ার আগে রোজাদারের করণীয়
রমজানের রহমতের দশক শেষপ্রান্তে।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের প্রথম দশক রহমতের, মধ্য দশক মাগফেরাতের আর শেষ দশক নাজাতের।’ প্রথম দশকে মহান আল্লাহ বান্দার প্রতি অবিরত রহমত নাজিল করেন। রহমতের দশক প্রায় শেষের পথে। আল্লাহর রহমত পেয়ে কি ধন্য হতে পেরেছে রোজাদার?
রমজানের প্রথম দশকে আল্লাহ বান্দার উপর স্পেশাল রহমত বর্ষণ করেন। রমজানের প্রথম দশদিন ফুরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু রহমত পাওয়ার পাথেয় কতটুকু অর্জিত হয়েছে! অথচ রমজান মাস হল মুমিনের জীবনে রহমতের বসন্তকাল।
মুমিনের উপর অনবরত রহমত নাজিল হতে থাকে রমজানে। তাই এ মাস রহমতের পাথেয় সঞ্চয়ের মৌসুম ৷ রমজান মুমিনদের জন্য যেমন কল্যাণময় মাস, ঠিক বেদ্বীন-মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতির মাসও এই রমজান। রমজানজুড়ে মুমিনগণ সারা বছরের পাথেয় সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। অপরদিকে মুনাফিকরা থাকে উদাসীন আর দোষত্রুটি অন্বেষণে মগ্ন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমাদ)
সুতরাং রমজান মাসের রহমতের দশকের শেষ দিকে এসে সবাইকে এ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে, ‘মুনাফিকের মতো সারা জীবন মানুষের দোষত্রুটি অন্বেষণে মগ্ন না থেকে রহমত বরকত মাগফেরাতের মাস রমজানে বেশি বেশি নেক আমল করে অন্য মাসগুলোর জন্য পাথেয় অর্জন করা।
রহমতের মাস রমজান সর্ম্পকে মহান আল্লাহর ঘোষণাও ছিল বেশি বেশি নেক কাজে নিয়োজিত থাকার সুযোগ নিশ্চিতের আহ্বান। হাদিসে এসেছে-
‘রমজানে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং অভিশপ্ত শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়।’ (বুখারি)
জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়ার অর্থই হলো- নেক আমল করা সহজ হয়ে যাওয়া আর জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়ার অর্থই হলো- বদ আমলের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া। আর শয়তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলার অর্থই হলো- রমজানের আগে তারা স্বাধীনভাবে যথেচ্ছা বিচরণ করেছে এবং বান্দাকে কুমন্ত্রণা ও প্ররোচনা দিয়ে যে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে; রমজানের প্রথম রাতেই তাদের বন্দী করা হয়, যেন রোজাদারকে ধোঁকা ও প্রতারণা দিয়ে বিভ্রান্ত করতে না পারে।
রহমতের মাস রমজানজুড়ে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নেক কাজে নিয়োজিত থাকা অনেক সহজ। তাই রমজানের রহমতের দশকে আল্লাহর অনুগ্রহ পেতে রোজাদারের করণীয় হলো-
- দিনের বেলা একনিষ্ঠতার সঙ্গে রোজা পালন করা।
- যথা সময়ে জামআতে নামাজ আদায় করা।
- রাতের তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ আদায় করা।
- বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা।
- দান–সদকা করা।
- ফেতরা ও জাকাত দেয়া।
- আল্লাহর জিকিরে মশগুল হয়ে তাকওয়া অর্জনে অধিক সচেষ্ট হওয়া।
রমজনের বিশেষ রহমত বা অনুগ্রহ পাওয়ার ঘোষণা-
- ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াব বা প্রতিদান পাওয়ার নিয়তে রমজান মাসে রোজা রাখবে, তার বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’
- ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াব বা প্রতিদান পাওয়ার নিয়তে রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়বে, তার বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’
- ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াব বা প্রতিদান পাওয়ার নিয়তে রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে (রাত জেগে) ইবাদত করবে, তার বিগত জীবনের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় দানশীল। রমজানে জিবরিল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন, তখন তিনি আরও অধিক দান করতেন। রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরিল আলাইহিস সালাম তাঁর সঙ্গে একবার সাক্ষাত করতেন। তিনি (বিশ্বনবি) তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরিল যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন তখন তিনি প্রবাহিত বায়ু অপেক্ষা অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।’ (বুখারি)
রমজানের রহমতের দশকে মহান আল্লাহর রহমত বা অনুগ্রহ পেলেই রোজাদারের রোজা ও ইবাদত সফল এবং স্বার্থক। তবেই সে বিপদ-আপদ ও বালা–মুসিবত থেকে রক্ষা পাবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি পাবে।
নতুবা সে হবে মহান আল্লাহর রহমত তথা অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত।
সুতরাং প্রত্যেক রোজাদারের উচিত, আল্লাহর রহমত পাওয়ার জন্য পুণ্যের কাজে এগিয়ে যাওয়া। আল্লাহ তাআলার দয়া-মায়া সংক্রান্ত গুণবচক নামগুলো বেশি বেশি স্মরণ করা এবং উক্ত গুণাবলী নিজেদের মধ্যে অর্জন করার চেষ্ট করা। আচরণে সর্বোচ্চ দয়া প্রদর্শন করা। ঠিক হাদিসের এ ঘোষণার মতো-
‘তুমি দুনিয়াবাসীর ওপর দয়া করো; তবে আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করবেন।’ অর্থাৎ যে মানুষর প্রতি দয়া করে না মহান আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না।’ (তিরমিজি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রহমতের দশকে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি ও মানুষর সহনুভূতিশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। রোজার হকগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। রহমতের দশকে মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম