আমল কবুল হওয়ার বিশেষ ৪ নির্দেশনা
ভালো কিংবা মন্দ; যে কোনো কাজ বা কর্মকেই আরবিতে আমল বলে। আর এ আমলের গ্রহণযোগ্যতাকে কবুল বা মাকবুল বলা হয়। মানুষের সব আমল বা কর্মগুলো কবুল হবে না। ইসলামি পরিভাষায় এ আমলগুলো ভালো-মন্দ দুইভাগে বিভক্ত। ভালো আমলগুলো কবুল হবে আর মন্দ আমলগুলো কবুল হবে না।
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান-সাদকা, উত্তম চরিত্র গঠন ইত্যাদি ভালো আমল আবার সুদ, ঘুষ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি, জেনা-ব্যভিচার, বেপর্দা, মদ-জুয়া ও অসৎ চারিত্রিক কাজগুলো মন্দ বা খারাপ কাজ। মানুষের এসব ভালো ও মন্দ আমল সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ - وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ
‘অতপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ (সুরা যিলযাল : আয়াত ৭-৮)
তাই মানুষের সব ভালো কাজ গ্রহণযোগ্য আর সব মন্দ কাজ পরিহার যোগ্য। তবে নেক আমল কবুলে দুটি সহজ শর্ত রয়েছে। তাহলো-
- শিরকমুক্ত আমল। যে আমলে আল্লাহর সঙ্গে কোনো শিরক বা অংশীদারিত্ব স্থাপন করা হয় না।
- সুন্নাহভিত্তিক আমল। যা ইসলামি শরিয়া অনুমোদিত বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনুমোদিত আমল।
মানুষের এসব শিরকমুক্ত ও সুন্নাহভিত্তিক আমলগুলো কবুল হওয়ার জন্য কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। তাহলো-
> বিশুদ্ধ নিয়ত
নিয়তের বিশুদ্ধতাদ ছাড়া কোনো আমলই কবুল হবে না। কেননা নিয়তের উপরও সব আমল কবুল হওয়া নির্ভর করে। হাদিসে এসেছে-
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى
‘নিয়তের ওপরই কাজের ফলাফল নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে যা সে নিয়ত করবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
> হালাল রুজি
আমল কবুল হওয়ার জন্য হালাল জীবিকার বিকল্প নেই। হারাম জীবিকা খেয়ে আমল করলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ-
يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
হে রাসুলগণ! (আপনারা) পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি সব জানেন।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৫১)
> দরূদ পড়া
যে কোনো নেক আমল কবুল হওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরূদ পড়া অন্যতম একটি শর্ত। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন-
إِنَّ الدُّعَاءَ مَوْقُوفٌ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ ، لا يَصْعَدُ مِنْهُ شَيْءٌ حَتَّى تُصَلِّيَ عَلَى نَبِيِّكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
‘নিশ্চয় বান্দার দোয়া বা আমল ততক্ষণ পর্যন্ত আসমান ও জমিনের মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। যতক্ষণ না বান্দা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠ করে।’ (তিরমিজি)
> একনিষ্ঠতা
ইখলাস তথা একনিষ্ঠতার সঙ্গে নেক আমল করা। গুরুত্বহীন কোনো আমল আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। তাই বান্দার প্রতিটি নেক আমল কবুল হওয়ার জন্য অন্তরে ইখলাস বা একনিষ্ঠতার সঙ্গে ইবাদত করা। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ
‘তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে।’ (সুরা বাইয়্যেনাহ : আয়াত ৫)
যেসব কারণে আমল কবুল হয় না
সাধারণত খারাপ কাজের প্রবণতার কারণেই মানুষের আমল কবুল হয় না। যখনই মানুষ অসৎ কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে তখনই অশান্তির স্থান জাহান্নামের উপযুক্ত হয়ে পড়ে। এ জন্য যে কারণগুলো দায়ী তাহলো-
- পরকালীন জীবনের প্রতি উদাসিনতা।
- আল্লাহর কাছে একদিন তার জবাব দিতে হবে এ কথা ভুলে যাওয়া।
- দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে যাওয়া।
- মৃত্যুর কথা ভুলে যাওয়া।
- অতিরিক্ত চাহিদা পূরণে বেশি লোভ করা।
বিশেষ করে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই বিখ্যাত হাদিস সম্পর্কে বেখবর হয়ে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। কেননা আল্লাহ তাআলা কোনো আদম সন্তানকেই ৫টি প্রশ্নের উত্তর না দেয়া পর্যন্ত এক কদমও এগুতে দেবেন না বলে ঘোষণা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দিয়েছেন- ‘মহান আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত বনি আদমকে এক কদমও এগুতে দেবেন না। তাহলো-
- তোমার হায়াত বা তোমার জীবন কোন পথে ব্যয় করেছো?
- তোমার যৌবন শক্তি কীভাবে ব্যয় করেছো?
- তুমি কোন পথে সম্পদ উপার্জন করেছো?
- উপার্জিত সম্পদ কোন পথে কীভাবে খরচ করেছো?
- তোমাকে যে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল বা তুমি যা জানতে তার ওপর তুমি কতটুকু আমল করেছো?
পরকালের চিরস্থায়ী শান্তির জন্য নেক আমলের বিকল্প নেই। তাই মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি নেক আমলের প্রতি গুরুত্বারোপ করা। ভালো কাজ কবুল হতে উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রতি মনোনিবেশ করা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় ভালো ও কল্যাণের কাজে অংশগ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম