সাদকায়ে জারিয়ার উৎস

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৩৮ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২১

সাদকায়ে জারিয়া। মুমিন মুসলমানের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। মৃত্যুর পরও মানুষ কবরে থেকে এ আমলের বিনিময় পাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদকায়ে জারিয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। আবার সাদকায়ে জারিয়া পাওয়ার উৎস সম্পর্কে দিয়েছেন দিকনির্দেশনা।

মৃত্যুর পর মানুষ যেসব মাধ্যমে কবরে থেকে নেক পাবে; তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো সাদকায়ে জারিয়া। সাদকায়ে জারিয়া সম্পর্কে হাদিসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সব আমলের পথ বন্ধ হয়ে যায়; শুধু ৩টি পথ খোলা থাকে। (যেগুলোর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির আমলনামায় নেক পৌঁছে থাকে)। তাহলো-
> সাদকায়ে জারিয়া।
> উপকারি ইলম বা জ্ঞান।
> নেককার সন্তান-সন্ততি; যে তার মৃত্যুর পর দোয়া করে।’ (মুসলিম)

‘সাদকায়ে জারিয়া’ হচ্ছে এমন একটি আমল; যার প্রাপ্তি ততদিন থাকে; যতদিন ওই আমলের অস্তিত্ব থাকে এবং মানুষ সে আমল বা কাজ দ্বারা উপকার পেয়ে থাকে। যেমন- মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা, ইয়াতিমখানা, হাসপাতাল, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, গভীর নলকুপসহ সাধারণ মানুষের উপকারী ইত্যাদি জনকল্যাণকর স্থাপনা নির্মাণ করা।

সাদকায়ে জারিয়া সম্পর্কে রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন- ‘এমন ৭টি কাজ রয়েছে; যা বান্দার মৃত্যুর পরও কবরে থাকা অবস্থাতেও তার জন্য সওয়াব জমা করতে থাকবে। তাহলো-
> এমন ব্যক্তি
যাকে সে ভালো ইলম বা জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছে। আর ওই ব্যক্তি এ জ্ঞান মানুষের কাছে পৌছে দেয়। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘তোমাদের কাছে যদি (জ্ঞানের) একটি নিদর্মণ বা চিহ্নও থাকে তবে তা অন্যের কাছে পৌছে দাও।’
সুতরাং জাতির কল্যাণে নিরলস জ্ঞান বিতরণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। যাতে মানুষের উপকারের ধারা চলতে থাকবে।

> খাল খনন করা : যেই খাল খননের ফলে মানুষ উপকৃত হয়। যতদিন এ খাল থেকে মানুষ উপকার পাবে ততদিন মানুষ কবরে থেকেও সাদকায়ে জারিয়ার সাওয়াব পেতে থাকবে। খাল বা পুকুর খনন করে তাতে পানি সরবরাহের মাধ্যমেও মানুষের উপকার করা যেতে পারে।

> কূপ খনন বা গভীর নলকুপ স্থাপন করা : মানুষের পাণীয় ও কৃষ্টি জমিতে সেচের জন্য কুপ কিংবা গভীর-অগভীর নলকুপ স্থাপন করাও সাদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভূক্ত। যদি তা থেকে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়ে থাকে। যতদিন এর অস্তিত্ব বা কার্যকারীতা থাকবে ততদিন মানুষ সাদকায়ে জারিয়ার হিসেবে সাওয়াব পেতে থাকবে। কূপ খননের সুযোগ না থাকলে, গভীর নলকুপ, পানির ফিল্টার ইত্যাদিও স্থাপন করা যেতে পারে।

> খেজুর গাছ রোপন করা : এমন খেজুর গাছ রোপন করা; যে গাছ মানুষের জন্য খেজুর ও রস দিয়ে যাবে। মানুষ যতদিন এ গাছের খেজুর কিংবা রস পাবে; ততদিন তা রোপনকারীর জন্য সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে সাওয়াব দিয়ে যাবে। এখানে শুধু খেজুর গাছই নয়; বরং ফলদার ও ছায়াদার এবং সুঘ্রাণযুক্ত গাছও হতে পারে।

> মসজিদ নির্মাণ বা দান : কেউ মসজিদ নির্মাণ করলে বাম মসজিদের কাজে দান করলে, সে মসজিদে দানকারীর সাদকায়ে জারিয়ার উপলক্ষ্যহয়ে যাবে। মানুষ যতদিন এ মসজিদে নামাজ পড়বে; ইবাদত-বন্দেগি করবে, ততদিন মসজিদ নির্মাণকারী ব্যক্তিআর আমলনামায় এর সাওয়াব পৌঁছতে থাকবে। এটিও সাদকায়ে জারিয়া। শুধু মসজিদই নয়, মক্তব, মাদরাসা, বিশ্রামাঘার, মুসাফিরখানা ইত্যাদিও হতে পারে।

> কুরআন বিতরণ করা : মানুষের পড়া বা অধ্যয়ন করার জন্য কুরআনের কপি, কুরআনের তাফসির কিংবা কুরআনের দারস সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে কাজ করবে। যতদিন এর উপকার দুনিয়াতে চলমান থাকবে। কুরআনের সুরার আমল ও ফজিলত সম্পর্কিত বই বিতরণ, হাদিসের আমল বিতরণ, হালাল-হারামসহ জনকল্যাণমূলক বইও হতে পারে।

> নেক সন্তান বা বংশধর : যেসব সন্তান নিজ বাবা-মা, বংশধর ও আত্মীয় স্বজনের জন্য যতক্ষণ বা যতদিন দোয়া করবে, ততক্ষণ বা ততদিন ওই ব্যক্তির আমলনামায় আল্লাহ সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে নেক দান করতে থাকবেন।’ (মুসনাদে আল-বাজ্জার)

মুমিন মুসলমানের উচিত, যেসব কাজে মানুষ কিংবা জীব-জন্তুর উপকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট; সেব কাজ সাদকায়ে জারিয়ার নিয়তে বিনা স্বার্থে করে যাওয়া। কেননা নিঃস্বার্থ যে কোনো কল্যাণকর কাজই হতে পারে সাদকায়ে জারিয়া। যাতে দুনিয়ার কোনো ব্যক্তি স্বার্থ উদ্দেশ্য না থাকে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শুধু মানুষই নয়, আল্লাহর সৃষ্টি জগতের সব সৃষ্টির কল্যাণে যে কোনো জনহিতকর কাজই সাদকায়ে জারিয়া হতে পারে। যদি তা চলমান থাকে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিঃস্বার্থভাবে জনকল্যাণে কাজ করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য চলমান সাওয়াব তথা সাদকায়ে জারিয়ার কাজ করে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।