জান্নাতে মুমিনের যেসব প্রতিদান চিরস্থায়ী
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল।লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে; সে জান্নাতে স্বাচ্ছন্দে থাকবে; কখনো দুর্দশাগ্রস্ত হবে না। তার পরিধেয় বস্ত্র কখনো পুরোনো হবে না এবং তার যৌবনও কখনো শেষ হবে না।’ (মুসলিম)
জান্নাতের সব নিয়ামতই মহান আল্লাহর তাআলার দান। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে জান্নাতের নেয়ামত প্রাপ্তির ঘোষণা এভাবে দিয়েছেন-
وَنُودُواْ أَن تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
‘আওয়াজ আসবে- এটি জান্নাত। তোমাদের কর্মের প্রতিদানে তোমরা এর উত্তরাধিকারী হয়েছ।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ৪৩)
দুনিয়ায় ভালো কর্মের প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত। জান্নাত পাওয়ার পর মুমিন বান্দা সেখানে যেসব নেয়ামত ভোগ করবে তাও দুনিয়ার কর্মের ভিত্তিতেই হবে। আর তা হবে চিরস্থায়ী। দুনিয়ার ভালো কর্মের ভিত্তিতেই এসব নেয়ামতের ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে চিরস্থায়ী এসব নেয়ামতের বর্ণা ওঠে এসেছে-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘কোন আহ্বানকারী জান্নাতী লোকেদের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে বলবে-
- এখানে সব সময় তোমরা সুস্থ থাকবে, কখনো অসুস্থ হবে না।
- তোমরা স্থায়ী জীবন লাভ করবে, কখনো তোমরা (পুনরায়) মরবে না।
- তোমরা যুবক থাকবে, কখনো তোমরা বৃদ্ধ হবে না।
- তোমরা সব সময় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবে, কখনো তোমরা কষ্ট-ক্লেশে পতিত হবে না।
এটাই মহান আল্লাহর ঘোষণা- ‘আর তাদের সম্বোধন করে আওয়াজ আসবে- তোমরা যে আমাল করতে তারই বিনিময়ে তোমাদেরকে এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে (সুরা আল-আরাফ : আয়াত ৪৩)।’ (মুসলিম)
আল্লাহ তাআলা জান্নাতিদের উদ্দেশ্যে কথাগুলো এভাবে ব্যক্ত করেছেন-
- وَالَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ لاَ نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا أُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
‘আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে আমি কাউকে তার সামর্থ্যের চাইতে বেশি বোঝা চাপিয়ে দেই না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী। তারা তাতেই (জান্নাতে) চিরকাল থাকবে (মৃত্যু হবে না)।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ৪২)
- وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الأَنْهَارُ وَقَالُواْ الْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَـذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلا أَنْ هَدَانَا اللّهُ لَقَدْ جَاءتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ وَنُودُواْ أَن تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
‘আর তাদের (জান্নাতিদের) অন্তরে যা কিছু দুঃখ ছিল, আমি তা (অন্তর থেকে) বের করে দেব। তাদের (জান্নাতের) তলদেশ দিয়ে নির্ঝরণী (নদির স্রোতধারা) প্রবাহিত হবে। তারা বলবে- আল্লাহ শোকর! যিনি আমাদের সবাইকে এ পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। আমরা কখনও পথ পেতাম না; যদি আল্লাহ আমাদের সবাইকে (সঠিক) পথ না দেখাতেন। আমাদের প্রতিপালকের (পক্ষ থেকে) রাসুল আমাদের কাছে সত্য কথা নিয়ে এসেছিলেন। আর (তখন) আওয়াজ আসবে- এটি জান্নাত। তোমরা এর উত্তরাধিকারী হলে তোমাদের কর্মের প্রতিদানে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ৪৩)
মনে রাখা জরুরি
কাপড় দিয়ে শরীরের সাজ-সজ্জা যেমন অনেক সহজ পক্ষান্তরে আমল দিয়ে নিজের আত্মাকে সাজানো ততই কঠিন। ঠিক তাই- জান্নাতের নেয়ামতের বর্ণনা যত সুন্দর ও হৃদয়গ্রাহী; তার তুলনায় পরকালের এসব নেয়ামত পাওয়ার আমল ততই কঠিন। আর এজন্য প্রয়োজন আল্লাহ দেয়া জীবন বিধান কুরআন অনুযায়ী এবং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানা পথে ও মতে জীবন পরিচালনা করা।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দুনিয়াতে রাসুলের দেখানো পথে নিজেদের পরিচালিত করা। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক আমলি জিন্দেগী যাপন করা। আর তাতেই মিলবে জান্নাতের চিরস্থায়ী নেয়ামত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জান্নাতের চিরস্থায়ী নেয়ামত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। কুরআন-হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস