ওয়াজ মাহফিলে ‘বলুন ঠিক কি-না’ বলা যাবে কি?

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২১ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০২১

‘বলুন ঠিক কি-না?’ মানুষের কাছে জানতে চাওয়া প্রশ্নটি বহুল প্রচলিত একটি কথা। কিন্তু কেন এ কথাটি বার বার বলা হয়, তা অনেকের কাছে সুস্পষ্ট নয়। ওয়ায়েজ বা বক্তা বা আলোচকদের বারবার এটি বলা কি ঠিক?

ওয়াজ মাহফিল কিংবা যে কোনো সভা-সমাবেশে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বক্তা বা আলোচক বার বার এ প্রশ্নটি করেন। অনেকেই এটি বলা বা এভাবে প্রশ্ন করাকে সঠিক বলে মনে করেন না। অনেককে আবার বলতে শোনা যায়, ওয়ায়েজ বা বক্তাই যদি শ্রোতাদের কাছে ‘ঠিক কি-না’ জানতে চান; তবে তার বক্তব্য দেয়ারই বা দরকার কী?

‘হ্যাঁ’, এটি বলা যাবে। আর তা বলা যুক্তিযুক্তও বটে। কারণ ওয়ায়েজ বা আলোচকদের এ প্রশ্নটি করার মূল উদ্দেশ্য হলো- শ্রোতাদের গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করা। এ প্রশ্ন করার ফলে শ্রোতাদের মধ্যে অধিকাংশেরই মনোযোগ বেড়ে যায়।

বক্তব্য দেয়ার সময় যারা এ প্রশ্নটি করেন, তারা প্রশ্ন করা বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন; তারপরও তারা শ্রোতাদের কাছে জিজ্ঞাসা বা স্বীকারোক্তি নিয়ে থাকেন।

কুরআন-সুন্নায়ও বহু স্থানে এরকম প্রশ্ন করার বিষয়টি পরীলক্ষিত হয়। আল্লাহ তাআলা তার নিজের সম্পর্কে বান্দাদের এভাবেই প্রশ্ন করেছিলেন-
أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَحْكَمِ الْحَاكِمِينَ
‘আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক নন?’ (সুরা ত্বীন : আয়াত ৮)

আল্লাহ তাআলা অবিশ্বাসী কাফেরদের জিজ্ঞাসা করেন অথচ আল্লাহ তাআলা বিষয়টি জানেন; তাহলো-
حَتَّى إِذَا جَاؤُوا قَالَ أَكَذَّبْتُم بِآيَاتِي وَلَمْ تُحِيطُوا بِهَا عِلْمًا أَمَّاذَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
‘যখন তারা উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছিল? অথচ এগুলো সম্পর্কে তোমাদের পূর্ণ জ্ঞান ছিল না। না তোমরা অন্য কিছু করছিলে?’ (সুরা নামল : আয়াত ৮৪)

সুরা নামলের একাধিক আয়াতে আল্লাহ বান্দাকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করেছেন-
أَإِلَهٌ مَّعَ اللَّهِ
আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি?

এভাবে প্রশ্ন করে মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার ক্ষমতা, তার একচ্ছত্র একমাত্র আধিপত্য ও তার একমাত্র উপাস্য হওয়ার ব্যাপারে সত্যতার স্বীকারোক্তি নেয়ার জন্যই তিনি বার বার এভাবে প্রশ্ন করেছেন।

এভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও বিভিন্ন সময় সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ করে জিজ্ঞাসা করতেন-
‘তোমরা কি এ বিষয়টি জান? কিংবা ওই বিষয়টি জান?’
তখন সাহাবায়ে কেরাম উত্তর দিতেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই অবগত আছেন।
আসলেই তাই, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্ন করা সেসব বিষয়ে ভালো জানতেন। সাহাবায়ে কেরামের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই, তিনি এভাবে প্রশ্ন করতেন।

সুতরাং শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে, ওয়ায়েজ, বক্তা বা আলোচকরা যদি এ রকম কোনো প্রশ্নবোধক কথা, ‘বলুন, ঠিক কিনা?’ বলে থাকেন। তবে তা দোষের নয় বরং তা বলা বৈধ। দ্বীনি আলোচনায় বা ধর্মীয় কাজে যুক্তিযুক্ত স্থানে মনোযোগ আকৃষ্ট করতে এভাবে প্রশ্ন করা যেতে পারে।

সতর্কতা
যদি কোনো বক্তা বা আলোচকের যদি উদ্দেশ্য থাকে যে, বার বার এটি জিজ্ঞাসা করে শ্রোতাদের বিব্রত করা বা কাউকে ধাঁধায় ফেলানো তবে তা বৈধ নয়।

আল্লাহ তাআলা সবাইকে কল্যাণের কাজে উত্তম শব্দ ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।