একনজরে নূর হুসাইন কাসেমীর বর্ণাঢ্য জীবন
নূর হুসাইন কাসেমী। আদর্শ শিক্ষক, শাইখুল হাদিস, রাজনীতিবিদ, আধ্যাত্মিক রাহবার। ইসলাম, ধর্ম ও জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে ছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠ। তিনি জীবদ্দশায় এক বর্ণাঢ্য ইতিহাস রচনা করে গেছেন। তাকে নিয়ে আজকের এ আয়োজন-
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
১৯৪৬ সালের ১০ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার চড্ডা নামক গ্রামে জন্ম নেন মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী। বাড়ির পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। এখানেই চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন তিনি।
শিক্ষা জীবন
নিজ গ্রামের স্কুল থেকে চড্ডার কাশিপুর কাসেমুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি হন তিনি। এরপর বরুড়ার আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসায় জামাতে হেদায়া পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৬৮ সালে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে ভারতের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দে চলে যান। সে বছর ভর্তির নির্ধারিত সময়ে দেওবন্দ পৌঁছতে না পারায় ভর্তি হতে পারেননি।
পরে ভারতের সাহারানপুর জেলার বেড়ীতাজপুর মাদ্রাসায় জালালাইন পড়েন। পরের বছর দারুল উলুম দেওবন্দে চলে আসেন। দেওবন্দ মাদ্রাসায় ৩ বছর পড়াশোনা করেন। সেখানে দাওরায়ে হাদিস ও আরবি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন নূর হোসাইন কাসেমী।
কর্ম-জীবন
দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশোনা শেষে ভারতের মুজাফ্ফরনগর জেলায় অবস্থিত মাওলানা কাসেম নানুতুবি রহ. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মুরাদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৭৩ সালের শেষদিকে মুজাফফরনগরে ১ বছর শিক্ষকতার পর দেশে ফিরে আসেন। দেশে এসে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার নন্দনসার মুহিউস সুন্নাহ মাদ্রাসায় শায়খুল হাদিস ও মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৮ সালে ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় যোগদান করে ৪ বছর শিক্ষকতা ও মাদরাসার দারুল ইকামাহ’র দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে তিনি মাওলানা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ প্রতিষ্ঠিত জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে চলে আসেন।
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা
১৯৮৮ সালে ঢাকার গুলশান-বারিধারায় প্রতিষ্ঠা করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘জামিয়া মাদানিয়া, বারিধারা। ১৯৯৮ সালে টঙ্গীর ধউর এলাকায় জামিয়া সোবহানিয়া মাহমুদনগর প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ দুই প্রতিষ্ঠানে শায়খুল হাসিদ ও মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী একই সাথে ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক, রাজনীতিবিদ ও আধ্যাত্মিক রাহবার। এ ছাড়াও তিনি প্রায় ৪৫টি মাদরাসা পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন। ঢাকার বিভিন্ন মাদ্রাসায় তিনি ইলমে হাদিসের দরস দিতেন।
রাজনীতি
১৯৭৫ সালে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে চলে আসেন। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি অনেক আন্দোলন সংগ্রামের সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০১৫ সালের ৭ নভেম্বর তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিবের দায়িত্ব লাভ করেন।
২০২০ সালের ৩ অক্টোবর তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। একই সাথে তিনি আল হাইআতুল উলয়ার সহ-সভাপতি ছিলেন। হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর তিনি ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি হেফাজতের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি ছিলেন।
পরিবার
ব্যক্তিগত জীবনে মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী ২ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক ছিলেন।
এমএমএস/এসইউ/জেআইএম