ঈমান রক্ষায় কুরআনের যে আয়াত বিশেষ সতর্কতা
ইসলাম ও মুসলমানদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ ও সঠিক পথের বিরোধিতা করাই ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের মিশন। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করে মুমিন-মুসলমানকে ইয়াহুদি-খ্রিস্টানদের ফাঁদ থেকে হেফাজত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলাম ও মুসলমানদের সতর্ক থাকতে কুরআনুল কারিমে তাদের ঘৃন্য মনোভাবের বিষয়টিও জানিয়ে দিয়েছেন।
এসব ইয়াহুদি-খ্রিস্টানরা কুরআন নাজিল হওয়ার পর বিশ্বনবির নবুয়তের সময়ই তা অস্বীকার করে। নিজেদের উপর অবতীর্ণ হওয়া আসমানি কিতাবের বিষয়েও তারা বেমালুম মিথ্যাচার করে। বিশ্বনবির নবুয়তের সত্যতার বিষয়টি থেকেও তারা দূরে সরে যায়। এসব বিষয় সম্পর্কে মহান আল্লাহ মুমিন মুসলমানকে সতর্ক করে ঘোষণা করেন-
وَدَّت طَّآئِفَةٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يُضِلُّونَكُمْ وَمَا يُضِلُّونَ إِلاَّ أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ - يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللّهِ وَأَنتُمْ تَشْهَدُونَ - يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَلْبِسُونَ الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
‘কোনো কোনো আহলে কিতাবের অনুসারীদের আকাঙ্খা; যাতে তোমাদের গোমরাহ করতে পারে কিন্তু তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকেই গোমরাহ করে না। অথচ তারা বুঝতে পারে না। হে আহলে কিতাবগণ! কেন তোমরা আল্লাহর কালামকে অস্বীকার কর অথচ তোমরাই তাঁর প্রবক্তা? হে আহলে কিতাবগণ! কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে সংমিশ্রণ করছ এবং সত্যকে গোপন করছ, অথচ তোমরা তা জান।’ (সুরা আল-ইমরান : ৬৯-৭১)
আয়াতের ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ
ইয়াহুদিরা হজরত মুয়াজ, হুজায়ফা ও আম্মার রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে তাদের ধর্ম গ্রহণ করার আহ্বান জানায়। এ উপলক্ষ্যে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন- আগের আসমানি কিতাবের অনুসারীদের থেকে একদল তোমাদের বিপথগামী করতে চায়; অথচ তারা তাদের নিজেদের বিপথগামী করে। কেননা এ বিপথগামী করার পাপ এদের নিজেদের উপরই বর্তাবে। মুমিনগণ এসব বিষয়ে তাদের অনুসরণ করে না। এ বিষয়টি ইয়াহুদিরা উপলব্দি করতে পারে না।
অতপর আল্লাহ তাআলা তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে আয়াত নাজিল করেন- হে আহলে কিতাবের অনুসারীরা! তোমরা কেন আল্লাহর নির্দেশকে তথা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিবরণসহ কুরআনকে অস্বীকার কর? অথচ সত্য সম্পর্কে তো তোমরাই সাক্ষ্য বহন কর। অর্থাৎ তোমরা জান যে, এটা (ইসলাম) সত্য।
অতপর আল্লাহ তাআলা আরও প্রশ্ন রাখেন- হে আহলে কিতাবের অনুসারীরা! তোমরা কেন সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত কর। সত্যকে বিকৃত করে এবং মিথ্যাকে সাজিয়ে মানুষকে বিব্রত করতে সত্যের সঙ্গে মিশ্রিত কর। আর সত্য তথা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুণাবলীর বিবরণসমূহ গোপন কর; অথচ তোমরা জান যে তা (বিশ্বনবি ও তাঁর গুণাবলীসমূহ) সত্য।’ (তাফসিরে জালালাইন)
যুগে যুগে ইয়াহুদি-খ্রিস্টানদের শত্রুতা
ইসলাম ও মুসলমানদের সঙ্গে ইয়াহুদি-খ্রিস্টানরা যুগে যুগে শত্রুতা করে আসছে। কুরআনুল কারিমে তা বর্ণিত হয়েছে। এ ধারা আজও অব্যাহত। সে সময় ইয়াহুদি খ্রিস্টানরা শুধু ইসলামের বিরোধিতাই করেনি বরং সত্যের সঙ্গে মিথ্যার সংমিশ্রণ ঘটাতে সচেষ্ট ছিল।
এ কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানের ঈমান সংরক্ষণে কুরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করে ইয়াহুদি-খ্রিস্টানদের আকাঙ্খা ও ষড়যন্ত্রের কথাগুলো উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য তুলে ধরেছেন।
শিরকমুক্ত ঈমান লাভে বিশ্বনবির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত ও রেসালাতের সত্যতা ঘোষণায় দ্বিধায় না পড়তেই আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করেছেন। এ আয়াতগুলো কেয়ামত পর্যন্ত মুমিন মুসলমানদের জন্য ঈমান হেফাজতে অনুপ্রেরণা।
মনে রাখতে হবে
ঈমান হেফাজতে কুরআনুল কারিমের এ আয়াতগুলো মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ সতর্কতা। কেননা ইয়াহুদি-খ্রিস্টানরা বিশ্বনবির আমলে যেমন ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করতো। আজও তারা তাদের আগের অবস্থানে অনড়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসলামের প্রথম যুগের নও মুসলিম সাহাবিদের ঈমানি ফায়েজ ও সোহবত লাভের তাওফিক দান করুন। ইয়াহুদি-খ্রিস্টানদের ফেতনা ও ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুণাবলীসমূহের প্রচার ও প্রসার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর