নামাজে যে কাজগুলো ফরজ

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:২৯ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০২০

নামাজ দ্বীনের খুঁটি। খুঁটি ছাড়া যেমন ঘর হয় না, তেমনি নামাজ ছাড়া দ্বীন পরিপূর্ণ হয় না। নামাজে রয়েছে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত কাজ। নামাজের জন্য কিছু কাজ আগে করা ফরজ আবার কিছু কাজ নামাজের মধ্যে ফরজ। যেগুলোকে আরকান ও আহকাম হিসেবে পরিচিত।

নামাজের আগে যে কাজগুলো ফরজ
নামাজের আগে কিছু কাজ রয়েছে, যেগুলো আদায় করা ফরজ। যা করা ছাড়া নামাজ হবে না। তাহলো-

> ওজু/তায়াম্মুম বা গোসল করা
সব ধরনের অপবিত্রতা থেকে নিজেকে পবিত্র করে নেয়া। নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জনে ওজু বা তায়াম্মুক কিংবা গোসল করা ফরজ। নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জনের এ নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ তাআলঅ বলেন-
‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও আর টাখনুসহ উভয় পা ধোও। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা শরীর পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রোগী হও, অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস কর; অতপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মণ্ডল ও উভয় হাত মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদের পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৬)

> পরিধেয় কাপড় পবিত্র হওয়া
নামাজের সময় পরার জন্য কাপড়ও পবিত্র হতে হবে। জামা, পাজামা/লুঙ্গি/সেলোয়ার/টুপি, ওড়না, হিজাব ইত্যাদি পরিধেয় কাপড় অপবিত্র হলে নামাজ হবে না। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ-
‘আপন পোশাক পবিত্র করুন। আর অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন।’ (সুরা মুদ্দাসসির : আয়াত ৪-৫)

> নামাজের স্থান পবিত্র হওয়া
নামাজের পড়ার স্থান পবিত্র হওয়া আবশ্যক। যে স্থানে দাঁড়িয়ে কোনো ব্যক্তি নামাজ পড়বে বা হাঁটু ও হাত রেখে সেজদা করবে সেসব স্থান অবশ্যই পবিত্র হতে হবে।

> আওরাতে সতর
শরীরের নির্ধারিত স্থান ঢেকে নামাজ পড়া আবশ্যক। পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং নারীর দুই হাতের কবজি, এবং মুখমণ্ডল ব্যতিত পুরো দেহ ঢেকে রাখা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন-
‘হে বনি আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সুন্দর সাজসজ্জা/পোশাক পরিধান করে নাও।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ৩১)

> সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ পড়া
ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্ধারিত ওয়াক্তের নামাজ পড়া ফরজ। অর্থাৎ ফজর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফজর নামাপ পড়া, জোহরের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জোহরের নামাজ পড়া ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিশ্চয়ই নির্ধারিত সময়ে নামাজ পড়া ঈমানদারের জন্য আবশ্যক।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১০৩)

> নামাজের কেবলামুখী হওয়া
অবশ্যই নামাজি ব্যক্তিকে কেবলামুখী তথা বাইতুল্লাহর দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তোমরা (নামাজের সময়) কা`বার দিকে মুখ কর।` (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৪৯)

> নিয়ত করা
প্রত্যেক আমলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। তাই নামাজ পড়ার জন্য নিয়ত আবশ্যক।

নামাজের মধ্যে যে কাজগুলো ফরজ
নামাজের আগে উল্লেখিত কাজগুলো সম্পন্ন হওয়ার পর নামাজে অংশগ্রহণ করা। নামাজের মধ্যেও ৭টি কাজ করা ফরজ। তাহলো-

> তাকবিরে তাহরিমা
আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করা ফরজ। তাকবিরে তাহরিমার মাধ্যমেই নামাজের বাইরের সব কাজ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন।’ (সুরা মুদ্দাসসির : আয়াত ৩)

> দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া
দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া আবশ্যক। শারীরিক অসুস্থতা থাকলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে (নামাজে) বিনীতভাবে দাঁড়াবে। (সুরা বাকারা : আয়াত ২৩৮)

> কেরাত পড়া
সুরা ফাতেহার পর সুরা মেলানো। ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাআতে এবং ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল নামাজের সব রাকাআতে সুরা মেলানো ফরজ। আল্লাহ বলেন-
‘তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ হয়, ততটুকু পড়।’ (সুরা মুযযাম্মিল : আয়াত ২০)

> রুকু করা
প্রত্যেক রাকাআতে একবার রুকু করা ফরজ। রুকু হচ্ছে- দাঁড়ানো থেকে অর্ধনমিত হওয়া, যেন দু`হাত হাঁটু পর্যন্ত পৌছে যায়। মাথা এবং পিঠ এক সমান্তরালে চলে আসে। আর ওজরের কারণে বসে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রেও রুকুর সময় ঝুঁকতে হবে, যেন কপাল হাঁটু বরাবর গিয়ে পৌঁছে। আল্লাহ বলেন-
‘তোমরা রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু কর।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ৪৩)

> সেজদা করা
প্রত্যেক রাকাআতে দুইটি সেজদা করা ফরজ। সেজদার সময় নাক ও কপাল মাটিতে রাখা। আল্লাহ বলেন-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা রুকু কর এবং সেজদা কর।’ (সুরা হজ : আয়াত ৭৭)

> শেষ বৈঠকে বসা
নামাজের শেষ রাকাআতে সেজদার পর তাশাহহুদ পড়তে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু পরিমাণ সময় বৈঠকে বসা (অবস্থান করা) ফরজ। তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব, দরূদ ও দোয়া পড়া সুন্নাত।

> সালাম ফেরানো
সালামের মাধ্যমে নামাজ সমাপ্ত করা ফরজ।

সুতরাং প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত, নামাজের বাইরে এবং ভেতরের ফরজগুলো যথাযথভাবে আদায়ের মাধ্যমে নামাজ আদায় করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত নিয়মে নামাজের ফরজ কাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।