‘মক্তব’ শিক্ষাকে এখনো গুরুত্ব দিচ্ছে তিউনিসিয়া
মক্তব। কুরআনুল কারিমের হাতেখড়ির আতুরঘর। মক্তব থেকেই শুরু হয় কুরআনুল কারিমের বরকতময় শিক্ষা। মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ ব্যক্তির কুরআন শেখার হাতেখড়ির অন্যতম স্থান মক্তব। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে এখনও মক্তব শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশি। এমনই একটি দেশ তিউনিসিয়া।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, শুধু বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানেই মক্তবভিত্তিক কুরআনের শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং বিশ্বের অনেক দেশে এখনও মক্তবভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। যেমনটি রয়েছে তিউনিশিয়ায়। দেশটির শিশুরা মক্তবেই পবিত্র কুরআন পড়ে। মক্তবেই তাদের হাতেকলমে পবিত্র কুরআনুল কারিম শিক্ষা দেয়া হয়।
মক্তবে কুরআনুল কারিম শেখার পর নির্দিষ্ট একটি বয়সে এসে এসব শিশু-কিশোরদের ভর্তি করা হয় স্কুলে। ফলে দেশটির প্রায় সব মানুষই পবিত্র কুরআনুল কারিমের শিক্ষা লাভে ধন্য।
উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার প্রায় সব মসজিদেই রয়েছে মক্তবভিত্তিক কুরআন শিক্ষাকেন্দ্র। মসজিদ ছাড়াও অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিরা নিজ উদ্যোগে কুরআনের শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখার জন্য আলাদা ঘর নির্মাণ করে মক্তবভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখায় যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করে চলছেন।
এ কথা ঠিক যে, মক্তবভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া কুরআনের সঠিক শিক্ষা ও তেলাওয়াত অনেক ক্ষেত্রে একেবারেই অসম্ভব। এ কারণেই ইসলামবিদ্বেষী সব দল ও গোষ্ঠীর পরিকল্পনা হলো- মক্তবের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখা।
উত্তর আফ্রিকার এ দেশটিতে মক্তবেই কুরআনুল কারিমের ছোট সুরাগুলোসহ কুরআনুল কারিমের উল্লেখযোগ্য অংশ শিক্ষার্থীদের মুখস্ত করান। দেশটিতে মক্তবভিত্তিক কুরআন শিক্ষাকে অনেক সম্মানে চোখে দেখেন। এ কারণেই দেশটির অনেক উচ্চশিক্ষিত এবং সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাই মক্তবে কুরআনের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মক্তবভিত্তিক কুরআনের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও উন্নত করতে চিন্তা এবং গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি দেশটিতে কুরআনুল কারিমের ছোট্ট হাফেজ ৯ বছরের মারিয়াম ওসমানিকে বিশেষ সম্মান প্রদান করা হয়। মারিয়াম ওসমানি মক্তবেই কুরআনুল কারিমের ১৫ পারা মুখস্ত করেন। মহামারি করোনার কারণে মক্তব বন্ধ থাকায় বাড়িতে বসেই বাকি ১৫ পারা মুখস্ত করেন মারিয়াম ওসমানি।
তিউনিসিয়ানদের চোখে হাফেজরা অনেক সম্মানের। দেশটির ধর্মমন্ত্রী আহমাদ আজুমের ভাষায়, ‘মারিয়াম ওসমানিকে সম্মান প্রদর্শন করা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। মূলত কুরআন হেফজ করার জন্য উৎসাহ প্রদান এবং তিউনিসিয়ায় জাতীয় নারী দিবস উপলক্ষে তাকে এ সম্মাননা প্রদর্শন করা হয়েছে।'
উল্লেখ্য, উত্তর আফ্রিকার সাগর তীরবর্তী দেশ তিউনিসিয়া। তিউনিস দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। ১৯৫৬ সালে তিউনিসিয়া স্বাধীনতা লাভ করে। দেশটির রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। হজরত আমির মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর আমলে প্রসিদ্ধ সাহাবি হজরত উকবা ইবনে নাফে রাদিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে তিউনিশিয়ায় ইসলামের পতাকা উড্ডীন হয়।
তিউনিসিয়ার মতো কুরআন শিক্ষার ধারা অব্যাহত রাখতে বিশ্বের সব দেশেই মক্তবভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখা জরুরি। ফলে পৃথিবীজুড়ে চলবে শান্তি ও নিরাপত্তার জয়গান।
এমএমএস/এমএস