উত্তম চরিত্র ও গুণ লাভে যেসব দোয়া পড়বেন মুমিন

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:০৩ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চারিত্রিক গুণাবলির ব্যাপারে ঘোষণা দিয়ে বলেন-

وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ

‘আর অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কালাম : আয়াত ৪)

পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ সুন্দরিএবং মনোরম করে গড়ে তুলতে মানুষের উত্তম গুণের বিকল্প নেই। একজন উত্তম চরিত্রবান লোক চাইলে পুরো সমাজকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। কেননা উত্তম আচরণ মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। যেভাবে উত্তম চারিত্রিক গুণ ও মাধুর্য দিয়েই বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্ধকার ও মূর্খ সমাজকে বিশ্ববাসীর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে সক্ষম হয়েছিলেন। আর তা ছিল তাঁর চারিত্রিক সৌন্দর্য ও মাধুর্যতার বহিঃপ্রকাশ।

যুগের অন্যতম ইসলামিক স্কলার হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উত্তম চারিত্রিক গুণের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন-

‘আপনি অপরের সঙ্গে এমন আচরণ করবেন, যাতে মনে হবে আপনি তার বন্ধু এবং নিজের শত্রু। সুতরাং নিজের কাছ থেকে জোরপূর্বক অন্যের অধিকার আদায় করে দিন এবং নিজের জন্য অধিকার আদায়ের দাবি থেকে বিরত থাকুন। নিজের দাবি বা অধিকার যতই ন্য়ায়সঙ্গত হোক না কেন।

তাই প্রতিটি মানুষের জন্য উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার জন্য মৌলিক কিছু গুণ নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন ও আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয় লাভে তাঁরই কাছে প্রার্থনা করার বিকল্প নেই। উত্তম চরিত্র গঠনের ৪টি মৌলিক গুণ রয়েছে। তাহলো-

- প্রজ্ঞা ও জ্ঞান।

- সাহসিকতা ও বীরত্ব।

- ন্যায় ও ইনসাফ।

- পবিত্রতা ও নিষ্কলুষতা।

এগুলোর মাঝে রয়েছে একে-অপরের প্রতি ক্ষমা, মার্জনা, উদারতা ও দানশীলতা, ধৈর্য ও সহ্য, দয়া ও মমতা, ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য, বিনয় ও নম্রতা এবং অন্যের প্রয়োজন মেটানোর মনোবৃত্তি ইত্যাদি বিদ্যমান। এগুলোর বাস্তবায়নেই তৈরি হয় উত্তম চরিত্র।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তম চরিত্র লাভের জন্য মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও সাহায্য প্রার্থনা করতেন। উম্মতে মুহাম্মাদিকেও উত্তম চরিত্র লাভের তাওফিক কামনায় মহান আল্লাহর কাছে ধরনা ধরার দোয়া হাদিসে পাকে তুলে ধরেছেন-

- اللَّهُمَّ اهْدِنِي لأَحْسَنِ الأَعْمَالِ وَأَحْسَنِ الأَخْلاقِ ، فَإِنَّهُ لا يَهْدِي لأَحْسَنِهَا إِلا أَنْتَ ، وَقِنِي سَيِّءَ الأَعْمَالِ وَسَيِّءَ الأَخْلاقِ ، فَإِنَّهُ لا يَقِي سَيِّئَهَا إِلا أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাহদিনি লিআহসানিল আমালি ওয়া আহসানিল আখলাকি; ফাইন্নাহু লা ইয়াহুদি লিআহসানিহা ইল্লা আংতা; ওয়া ক্বিনিল আমালি ওয়াইয়্যিয়িল আখলাকি; ফাইন্নাহু লা ইয়াক্বি সাইয়্যিআহা ইল্লা আংতা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে সর্বোত্তম কাজ ও উন্নত চরিত্রের পথ দেখাও। কেননা, তুমি ছাড়া এ পথের সন্ধান অন্য কেউ দিতে পারে না। আর অন্যায় কাজ ও খারাপ চরিত্র থেকে আমাকে রক্ষা কর। কেননা, তুমি ছাড়া অন্য কেউ এ থেকে রক্ষা করতে পারে না।’ (নাসাঈ)

- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الْأَخْلَاقِ، وَالْأَعْمَالِ، وَالْأَهْوَاءِ والْأَدْوَاءِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাকি ওয়াল আমালি ওয়াল আহওয়ায়ি ওয়াল আদওয়ায়ি।’

অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার কাছে খারাপ চরিত্র, অন্যায় কাজ, কু-প্রবৃত্তি এবং দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)

- اللَّهُمَّ أَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِنَا، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِنَا

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আল্লিফ বায়না কুলুবিনা ওয়া আসলিহ জাতা বাইনানা।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের সব হৃদয়ের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক তৈরি করে দাও আর আমাদের (বিবদমান বিষয়গুলো) সমাধান করে দাও।’ (বুখারি)

- اللَّهُمَّ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ فَأَيُّ الْمُسْلِمِينَ لَعَنْتُهُ أَوْ سَبَبْتُهُ فَاجْعَلْهُ لَهُ زَكَاةً وَأَجْرًا

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নামা আনা বাশারুন ফাআইয়্যুল মুসলিমিনা লাআনতুহু আও সাবাবতুহু ফাঝআলহু লাহু জাকাতান ওয়া আঝরান।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তো একজন মানুষ মাত্র। সুতরাং আমি কোনো মুসলিমকে গালি বা অভিশাপ দিয়ে থাকলে সেটাকে তুমি তার জন্য (গোনাহ থেকে) পবিত্র করার মাধ্যম বানিয়ে দাও এবং তাকে তার (উত্তম) বিনিময় দান কর।’ (মুসলিম)

اللَّهُمَّ مَنْ وَلِىَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِى شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِىَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِى شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ فَارْفُقْ بِهِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা মান ওয়ালিয়া মিন আমরি উম্মাতি শাইআন ফাশাক্কা আলাইহিম ফাশকুক আলাইহি ওয়া মান ওয়ালিয়া মিন আমরি উম্মাতি শায়আন ফারিফাকাবিহিম ফারফুকবিহি।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! কেউ আমার উম্মতের কোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল হয়ে যদি তাদের সঙ্গে কঠিন আচরণ করে তবে তুমিও তার সঙ্গে কঠিন আচরণ কর । আর কেউ কোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল হয়ে যদি তাদের সঙ্গে নম্রতা সুলভ আচরণ করে তবে তার প্রতি তুমিও দয়াশীল হও।’ (মুসলিম)

- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ، وَعَمَلٍ لاَ يُرْفَعُ، وَقَلَبٍ لاَ يَخْشَعُ، وَقَولٍ لاَ يُسْمَعُ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ইলমিন লা ইয়ানফাউ; ওয়া আমালিন লা ইয়ুরফাউ; ওয়া কালবিন লা ইয়াখশাউ; ওয়া ক্বাওলিন লা ইয়ুসমাউ।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার কাছে আশ্রয় চাই, এমন জ্ঞান থেকে যা কোনো উপকারে আসবে না; এমন আমল থেকে যা উপরে উঠানো হয় না; এমন অন্তর থেকে যা ভীত হয় না আর এমন কথা থেকে যা শোনা হয় না।’ (মুসলিম)

- اللَّهُمَّ كَمَا حَسَّنْتَ خَلْقِي فَأَحْسِنْ خُلُقِي

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা কামা হাসসানতা খালকি ফা-আহসিন খুলুকি।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার দেহের অবয়ব যেমন সুন্দর করেছ তেমনি আমার চরিত্রকেও সুন্দর করে দাও।’ (মুসনাদে আহমাদ)

মুমিন মুসলমানের উচিত, নিজেদে উত্তম চরিত্রের অধিকারী করতে- প্রজ্ঞাপূর্ণ জ্ঞান, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজ, ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক আচরণ এবং পবিত্রতা ও নিষ্কলুষতার দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া। হাদিসে উল্লেখিত দোয়াগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।

সর্বোপরি ব্যক্তি পরিবার সমাজ কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একে-অপরের প্রতি ক্ষমা ও মার্জনা, উদারতা ও দানশীলতা, ধৈর্য ও সহ্য, দয়া ও মমতা, ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য, বিনয় ও নম্রতা যথাযথভাবে অবলম্বন করা। আল্লাহর কাছে সুন্দর ও উত্তম চরিত্র লাভে বেশি বেশি ধরনা দেয়া এবং রোনাজারি করা। আর তাতেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে দান করবেন সুন্দর ও উত্তম চরিত্র। ভালো মানুষ হিসেবে কবুল করবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত গুণগুলো নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি হাদিসে নির্দেশিত দোয়ার মাধ্যমে উত্তম চরিত্র লাভের চেষ্টা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।