যে আমলে ৪০ বছরের গোনাহ মাফ ও বৃষ্টি লাভ
হজরত মুসা আলাইহিস সালামের বৃষ্টির দুআ এবং ৪০ বছরের সেজদা না করা এ অপরাধীর তওবাহ কবুল সম্পর্কিত একটি ঘটনা বনি ইসরাইলের এক রেওয়াতে উঠে এসেছে। এ ঘটনাটি মানুষকে তাওবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। বনি ইসরাইলের বর্ণনার ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো-
‘যদি তা মুসলিমদের আকিদা-বিশ্বাস ও ইসলামি শরিয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় তবে তা বর্ণনায় কোনো দোষ নেই। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারিতে এসেছে- ‘বনি ইসরাইল থেকে বর্ণনা করাতে কোনো সমস্যা নেই।’ আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে বলেন-
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাওবাহকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২২২)
বনি ইসরাইলের এ ঘটনাটি তাওবাহর প্রতি উৎসাহমূলক হওয়া তা মুমিন মুসলমানের জন্য পালনীয় উপমা হিসেবে তুলে ধরা হলো-
হজরত মুসা আলাইহিস সালামের জামানায় মিসরে অনাবৃষ্টি ও তীব্র খরার কারণে মানুষের জীবন-যাপন অতি কষ্টকর হয়ে ওঠে। অনাবৃষ্টি ও তীব্র খরার কারণে গবাদি পশুগুলোও মারা যাবার উপক্রম। আবার জমিগুলো আবাদ করা যাচ্ছিল না। কোনো উপায় না দেখে সে সময় মিসরের জনগণ হজরত মুসা আলাইহিস সালামের স্মরণাপন্ন হন। আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনার আহ্বান জানান।
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে রোনাজারি করে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে বলেন- হে আল্লাহ! মিসরের জমিনে অনেক দিন বৃষ্টি নেই, তুমি বৃষ্টি দাও হে প্রভু! তুমি দয়া করো হে প্রভু!
হজরত মুসা আলাইহিস সালামের প্রতি ওহি নাজিল-
হে মুসা! বৃষ্টি হবে, কিন্তু তোমার এ মজলিশে একজন পাপিষ্ঠ ব্যক্তি রয়েছে। তাকে মজলিশ থেকে বের করে দাও। যতক্ষণ এ পাপিষ্ঠ ব্যক্তি এ মজলিশে অবস্থান করবে ততক্ষণ তোমার দোয়া কবুল হবে না আর বৃষ্টিও হবে না।
কোনো কোনো বর্ণনায় পাপিষ্ঠ ব্যক্তিকে জেনাকারি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবার কোনো বর্ণনায় ৪০ বছর ধরে আল্লাহকে সেজদা না করার বিষয়টি উঠে এসেছে। আর সেজনা না করার বিষয়টিকে সঠিক মত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম মজলিশের লোকদের উদ্দেশ্য করে বললেন- এ মজলিশে কে আছ জেনাকারী/সেজদা না করা পাপিষ্ঠ? সে মজলিশ থেকে বের হয়ে যাও। অন্যথায় আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হবে না আর বৃষ্টিও হবে না। এ ঘোষণার পর একে অপরের দিকে সজাগ দৃষ্টিতে তাকাতে থাকলো।
এ দিকে অপরাধী পাপিষ্ঠ ব্যক্তি বুঝতে পারল এবং এ মর্মে চিন্তা করল যে, আমি যদি এখন থেকে উঠে যাই তবে সবাই আমাকে চিনে ফেলবে এবং ছিঃ ছিঃ করবে। যা আমার জন্য লজ্জার কারণ। আবার আমার জন্য এতগুলো মানুষ ও পশু-পাখি অনাবৃষ্টিতে কষ্ট পাবে। না, তা হয় না।
পাপিষ্ঠ ব্যক্তির ফরিয়াদ
হে আল্লাহ! দয়ার মালিক, আমি পাপ করেছি এটি আমার মা জানে না, বাবা জানে না। তুমি এত দিন (দীর্ঘ ৪০ বছর) গোপন রেখেছ।
হে দয়ার মালিক! আমি তোমার কাছে খাঁটি দিলে তাওবাহ করছি। আমি আর তোমার নাফরমানি করব না। আজকেও তুমি আমার অপরাধ গোপন করে দাও।
হে দয়ার মালিক! তুমি আমার ইজ্জত রক্ষা কর। আমাকে ও আমার অপরাধ সবার সামনে প্রকাশ না করে আমাকে ক্ষমা কর। আমার তাওবাহ কবুল কর।
তাওবাহ কবুল ও বৃষ্টি শুরু
পাপিষ্ঠ ব্যক্তি এ তাওবাহ ও ক্ষমা মহান আল্লাহ কবুল করেন। হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেলো এবং মুহুর্তের মধ্য বৃষ্টির ধারা শুরু হয়ে গেল। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম অবাক, বিস্মিত হয়ে গেলেন।
হজরত মুসা আলাইহিস সালামের প্রশ্ন?
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, হে আল্লাহ! তুমি বললে, মজলিশ থেকে সেই পাপিষ্ঠ ব্যক্তি বের না হলে দোয়া কবুল করবে না আবার বৃষ্টিও দেবে না। তাহলে এমন কী হলো যে, সেই পাপিষ্ঠ ব্যাক্তি অবস্থানরত থাকাকালীন সময়েই তুমি বৃষ্টি দিয়ে দিলে?
আল্লাহ জানান-
আল্লাহ তাআলা বললেন, হে মুসা! নিশ্চয়ই আমি যা জানি, তুমি তা জান না। যার কারণে বৃষ্টি দেব না বলেছিলাম। তার কারণেই বৃষ্টি দিলাম।
এ বৃষ্টির জন্য সে তার স্বীয় পাপের বিষয়ে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে, খাঁটি দিলে তওবাহ করেছে। আর আমিও তার তওবাহ কবুল করেছি, তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছি। আর মিসরবাসীর জন্য বৃষ্টি দান করেছি।
সুতরাং এ ইসরাইলি বর্ণনাও প্রমাণ করে যে, তাওবাহ করলে মহান আল্লাহ তাআলা অত্যাধিক খুশি হন। এ খুশির পরিমাণ ও অবস্থা বর্ণনা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
যে আল্লাহ তাওবাহ করার কারণে অপরাধীর অপরাধ ক্ষমা করে বৃষ্টি দান করতে পারেন। সে আল্লাহ তাওবার ফলে মানুষের যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করতে পারেন।
উল্লেখ্য, বনি ইসরাইলি এ রেওয়ায়েতটি অনেক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলো- শায়েখ হানিউল হাজ্জ সংকলিত ‘আলফু কিসসাতুন কিসসাতুম মিন কাসাসিস সালিহিনা ওয়াস সালিহাত’ গ্রন্থে। শায়েখ ইবনে কুদামা আল-মাকদিসি রচিত ‘আততাওয়াবিন’ গ্রন্থে। মুজাদ্দেদি হেলালির ‘কাইফা নুহিব্বুল্লাহ ওয়া নাশতাতু ইলাইহি গ্রন্থে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ ঘটনা থেকে তাওবাহর দিকে ফিরে আসার শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর অবাধ্যতা ও নাফরমানি থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর