ধোঁকা বা প্রতারণায় যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ১২ আগস্ট ২০২০

ইসলামে নিষিদ্ধ ও আদর্শ বিচ্যুত কাজ হচ্ছে ধোঁকা বা প্রতারণা। ইসলামে এ কাজ হারাম বা নিষিদ্ধ। আর দুনিয়ার প্রচলিত বিধানেও এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহাম্মাদিকে ধোঁকা বা প্রতারণা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ অভ্যাসে জড়িত ব্যক্তিকে তাঁর দলভূক্ত নয় মর্মে হাদিসে ঘোষণা করেছেন-
مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا
'যে আমাদের ধোঁকা দেয় সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (মুসলিম)

ধর্মীয় ও প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গিতে ধোঁকা বা প্রতারণায় ৩ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। যার প্রতিটি মারাত্মক অপরাধ। তাহলো-
- প্রথমত : এটি একটি হারাম ও অনৈতিক কাজ। যে কারণে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দিয়েছেন - 'যে ব্যক্তি ধোঁকা দেয় বা প্রতারণা করে সে আমাদের (মুসলিমদের) অন্তর্ভূক্ত নয়।'

- দ্বিতীয়ত : অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ গ্রাস করার কারণে এটি হক্কুল ইবাদ বা বান্দার অধিকার হরণের শামিল। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি অনেক ভয়ংকর অপরাধ। এর ফলে পরকালে বিচারের দিন মহান আল্লাহ ন্যায় বিচারের মাধ্যমে ধোঁকা বা প্রতারণাকারীর নেকিগুলো প্রতারিত ব্যক্তির আমলনামায় দিয়ে দেবেন। এখানেই শেষ নয়, প্রতারিত ব্যক্তির গোনাহগুলো ধোঁকা দেয়া ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। আমলহীন নিঃস্ব অবস্থায় প্রতারক ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষেপিত হবে।

আর যদি প্রতারক বা ধোঁকা দেয়া ব্যক্তি দুনিয়ায় প্রতারণার সম্পদ ও সংঘটিত বিষয়ের সমাধান করে ক্ষমা প্রার্থনা করে তবে সে এ অপরাধ থেকে মুক্ত হবে। পরকালের এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে।

- তৃতীয়ত : প্রতারণা প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন ও শান্তি বিনষ্টকারী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্র ও সরকারের উপর অর্পিত। তাই রাষ্ট্রের কোনো নাগরিক যদি অন্য কোনো নাগরিকের সঙ্গে বস্তু, সম্পদ বা যে কোনো বিষয় নিয়ে ধোঁকা বা প্রতারণার আশ্রয় নেয় তবে ওই ব্যক্তির শান্তি, নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে প্রতারক বা ধোঁকা দেয়া ব্যক্তিকে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করে থাকে। সে কারণেই দুনিয়ার সব দেশেই ধোঁকা বা প্রতারণা ঠেকাতে জেল-জরিমানাসহ কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

মনে রাখতে হবে
ধোঁকা বা প্রতরণার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ দিয়ে দান-সহযোগিতা, ধর্মীয় কাজ কুরবানি, মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ, জনসাধারণের জন্য রাস্তাঘাট-কালভার্ট নির্মাণ কোনোটিই বৈধ নয়। আর এতে সাওয়াবও মিলবে না।

কেননা দান-সহযোগিতা, সমাজ সংস্কারসহ জনকল্যাণমূলক কাজ কোনো ব্যক্তির জন্য আবশ্যক নয় বরং তা মোস্তাহাব বা নেকির কাজ। আর ইসলামে ধোঁকা ও প্রতারণা হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ।

সে কারণে ধোঁকা ও প্রতারণায় অর্জিত সম্পদ ধর্মীয় যে কোনো কাজে ব্যবহারের যেমন নিয়ম নেই তেমনি দুনিয়ার কল্যাণমূলক কোনো কাজেও তা ব্যবহার যোগ্য নয়। আর তাতে সাওয়াব লাভেরও কোনো সুযোগ নেই।

হারাম কাজের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ দিয়ে মোস্তাহাব বা নেকির কাজের দিকে ধাবিত হওয়া কোনো মুমিন মুসলমানের কাজ হতে পারে না। বরং ধোঁকা ও প্রতারণার সব কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখা সাওয়াব ও নেকির কাজ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ধোঁকা বা প্রতারণার মতো জঘন্য নিষিদ্ধ ও দুনিয়ার শাস্তিযোগ্য কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের নির্দেশনা মোতাবেক ধোঁকা ও প্রতারণামুক্ত থেকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দলভূক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।