করোনায় পবিত্র হজ ২০২০

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৬ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২০

দীর্ঘ গত ৯০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সৌদি আরবের বাইরের কোনো দেশ থেকে হজে অংশগ্রহণ করতে পারছে না কেউ। মহামারি করোনার কারণে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে দেশটির মধ্যে বসবাসকারী স্থানীয় ও বিদেশি মিলে প্রায় ১০ হাজার লোক এবারের হজে অংশগ্রহণ করছেন। সৌদি প্রেস এজেন্সি ও রয়টার্সের তথ্য মতে করোনায় এ বছরের হজ সম্পক্যে কিছু তথ্য তুলে ধরেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা।

পবিত্র হজ মুসলিম উম্মাহর বাৎসরিক ইবাদত। হিজরি বছরের ৯ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত এ ইবাদত পালন করতে হয়। এ উপলক্ষ্যে সারাবিশ্ব থেকে মুমিন মুসলমান পবিত্র নগরী মক্কায় আগমন করে। মহামারি করোনার কারণে সারাবিশ্ব থেকে এবার মুসলিম উম্মাহ হজে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। স্বল্প পরিসরে ১০ হাজার লোকের অংশগ্রহণ হজের ব্যবস্থা করেছে সৌদি।

চলতি মাসের শুরু দিকে সৌদি আরব এবার হজের আয়োজন ব্যাপকভাবে না করার চিন্তা করেছিল। মাত্র ১০০০ লোককে হজে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হবে। সৌদির বাইরে থেকে কোনো ব্যক্তিকে হজে আসতে দেয়া হবে না।

যেখানে অন্যান্য বছর সারাবিশ্ব থেকে মুসলিম উম্মাহর মধ্য থেকে প্রায় ২৫ লাখ লোক হজ উপলক্ষ্যে পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় আগমন করতো।

অবশেষে গত ৬ জুলাই সৌদি আরব সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কঠোর শর্তে হজে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি ঘোষণা দেয়। কারণ বিশ্বব্যাপী মানুষ প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের আক্রান্ত।

দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানায়, হজ উপলক্ষ্যে ব্যাপক জনসমাগম মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা বেশি। ফলে মানুষের সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা এবং মহামারিমুক্ত থাকার জন্য হজে অংশগ্রহণকারীদের ঝুঁকি হ্রাস করতেই সীমিত আকারে হজের চিন্তা করে মন্ত্রণালয়।

সীমিত পরিসরে ২৯ জুলাই বুধবার থেকে মিনায় যাওয়ার মাধ্যমে শুরু হবে হজের কার্যক্রম। যদিও গত ১৯ জুলাই থেকে এবারের হজে অংশগ্রহণকারীদের সবাইকে বাধ্যতামূলক ৭ দিনের আইসোলেশন শুরু হয়েছে।

কে হজ করবে?
হজ ইলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম একটি। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম ব্যক্তির জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা (ফরজ) আবশ্যক।

দেশটির হজ মন্ত্রণালয় জানায়, এবার সৌদি আরবের বসবাসকারীরা স্থানীয় ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যক্তিরাই হজে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।

হজমন্ত্রী মোহাম্মদ বেনতেন এক কনফারেন্সে জানায়, সরকার সামগ্রিকভাবে হজে অংশগ্রহণকারীদের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। এ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা এক হাজার, এর মধ্যে বেশি কম হতে পারে। তবে এ সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হবে না বলেও জানান মন্ত্রী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়াহ জানান, ৬৫ বছরের বেশি কিংবা অসুস্থ কোনো ব্যক্তিকে এবারের হজে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হবে না।

গৃহীত স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় পদক্ষেপ
- পবিত্র নগরী মক্কায় প্রবেশে মিকাত অতিক্রম করার আগেই প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা করা হবে এবং কোয়ারেন্টাই করেই তবে প্রবেশ করতে হবে। ইতিমধ্যে ১৯ জুলাই থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
- হজে অংশগ্রহণকারী ও আয়োজকদের বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
- রোগ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুসারে এ বছর হজের সময় কাবা শরিফ স্পর্শ বা চুম্বন নিষিদ্ধ থাকবে। হজের প্রতিটি কাজে একজন থেকে অন্যজনের শারীরিক দূরত্ব থাকবে ১.৫ মিটার (পাঁচ ফুট)। তাওয়াফ, নামাজ, সাঈ প্রতিটি কাজেই এ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
- বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা ও দূরত্ব বজায় রাখার শর্তে হজে অংশগ্রহণকারীদের জামাআতে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে।
- এছাড়াও মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফায় ২ আগস্ট পর্যন্ত হজে অংশগ্রহণকারীদের জন্য নির্ধারিত থাকবে। এ সময়ে কেউ এ অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারবে। যারা বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করবে তাদের ১০ রিয়াল জরিমানা গুনতে হবে।

এর আগে কি এমন হয়েছে?
সৌদি আরবের গত প্রায় ৯০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম বর্হিঃবিশ্বের লোকদের জন্য হজে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে ১৯৩২ সালের সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার আগে বিভিন্ন সময় ৪০ বারের মতো হজ বন্ধ ছিল। যুদ্ধ-বিগ্রহ, বন্যা ও অন্যান্য কারণে হজ বন্ধ ছিল।

এবারের হজে নিষেধাজ্ঞা
মহামারি করোনার কারণে বর্হিঃবিশ্বের লোকদের জন্য হজ স্থগিত হওয়ার আগে মহামারি করোনার কারণে বিশ্বের অনেক দেশের সরকার তাদের লোক হজে পাঠাবে না বলে আগেই জানিয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে- ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সেনেগাল, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ব্রুনাই।

ইন্দোনেশিয়ার ৬৮ বছর বয়সী কামারিয়া ইয়াহইয়া এএফপি নিউজ এজেন্সিকে জানান, ’এবার আমার হজের অংশগ্রহণের প্রবল ইচ্ছা ছিল। আমি বছরের পর বছর ধরে হজের প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু আমি কি করতে পারি? এটিই মহান আল্লাহর ইচ্ছা, এটিই নিয়তি।

বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই বয়স্ক। যাদের করোনা ঝুঁকি অনেক বেশি। কোভিড-১৯ এর কারণে এবার দেশটি থেকে কেউ হজে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এদিকে ২০২০ সালে ভারত থেকেও ২ লাখের বেশি লোক হজে যাওয়ার কথা ছিল। পাকিস্তান থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার লোকের অংশগ্রহণের প্রস্তুতি ছিল। মহামারি করোনার কারণে কেউ এবার হজে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।