পাশের কত বাড়ির লোক আপনার প্রতিবেশী?

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:২৫ পিএম, ২৯ জুন ২০২০

প্রতিবেশীর দায়িত্ববোধ সম্পর্কে রয়েছে হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনা। পাশের কত বাড়ির লোক প্রতিবেশি? পরস্পরের প্রতি তাদের অধিকার ও দায়িত্ববোধ কী? মুসলিম কিংবা অমুসলিম প্রতিবেশি অধিকারের ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনাই বা কী?

মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে রয়েছে সুস্পষ্ট বর্ণনা। বিশেষ করে প্রতিবেশি কাছের কিংবা দূরে হোক তাদের প্রতি দায়িত্ববোধ সম্পর্কেও রয়েছে কুরআনুল কারিমের ঘোষণা। প্রতিবেশির প্রতি দায়িত্ববোধ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
'আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর ও কোনো কিছুকে তার শরিক কর না এবং বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশি, দূর প্রতিবেশি সঙ্গী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।' (সুরা নিসা : আয়াত ৩৬)

প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা ঈমানের অন্যতম মৌলিক দিক। কেননা প্রতিবেশীর সঙ্গে খারাপ আচরণকারী ব্যক্তি মুমিন নয় মর্মে হাদিসের সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মুমিন নয়।
জিজ্ঞাসা করা হল, ‘কোন ব্যক্তি? হে আল্লাহর রাসুল!
তিনি বললেন, 'ওই ব্যক্তি যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট (ক্ষতি/শত্রুতা) থেকে নিরাপদ নয়।' (বুখারি)

প্রতিবেশির প্রতি থাকবে মমতা ও ভালোবাসার বন্ধন। এক প্রতিবেশি অন্য প্রতিবেশির সুখ-দুঃখের অংশীদার হবে। প্রতিবেশির সঙ্গে উত্তম ও সুন্দর আচরণকারী ব্যক্তি আল্লাহর একান্ত প্রিয় বান্দায় পরিগণিত হয়। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহর কাছে সবচেয়ে উত্তম সঙ্গী সে যে তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আর আল্লাহর কাছে ওই প্রতিবেশি সবচেয়ে উত্তম, যে তার প্রতিবেশির দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি উওম।' (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, দারেমি)

প্রতিবেশি মানুষের সবচেয়ে বেশি উপকারে আসে। সুখ-দুঃখে আত্মীয়-স্বজন এগিয়ে আসার আগে প্রতিবেশিরাই এগিয়ে আসে। এ কারণে প্রতিবেশি যদি খাদ্যকষ্টে থাকে তাকে খাদ্য সহায়তা দেয়া। অভাবগ্রস্ত হলে তাকে আর্থিক সাহায্য করা। হতাশাগ্রস্ত হলে তাকে উত্তম উপদেশ ও পরমার্শ দেয়া। অসুস্থ হলে সেবাযত্ন করা। এমনকি প্রতিবেশি যদি অমুসলিমও হয় তবুও তার বিপদে এগিয়ে যাওয়া উত্তম। হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ইয়াহুদি গোলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমত করত। যখন সে অসুস্থ হলো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন, তার মাথার দিকে বসলেন আর তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো! তখন সে তার পিতার দিকে দেখল। পিতা বললেন, তুমি আবুল কাসেমের অনুসরণ করো। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বলে বের হলেন, আল্লাহর শুকরিয়া, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ (বুখারি)

হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো মুসলিম প্রতিবেশির ক্ষতি কিংবা অনিষ্ট করার তো দূরের কথা। অমুসলিম প্রতিবেশিরও ক্ষতি করা যাবে না। বরং তাদের প্রতিও যথাযথ দায়িত্ব পালন করা আবশ্যক।

প্রতিবেশির প্রতি কষ্টদানকারী ব্যক্তির প্রতি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কসম করে মুমিন নয় বলে তিন বার ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয়া ব্যক্তি জাহান্নামি বলেও ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারির বর্ণনায় এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে বললেন, 'এক নারীর ব্যাপারে (তিনি) প্রসিদ্ধ। সে বেশি বেশি (নফল) নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন আর দুই হাতে দান করেন। কিন্তু (ওই নারী) জবানের দ্বারা নিজের প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয় (তার অবস্থা কি হবে?)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, 'সে জাহান্নামে যাবে।' (নাউজুবিল্লাহ!)
আর আরেক নারী, যে বেশি (নফল) নামাজও পড়ে না, খুব বেশি রোজাও রাখে না আবার তেমন দান-সদকাও করে না; সামান্য দু-এক টুকরা পনির দান করে। তবে সে জবানের দ্বারা তার প্রতিবেশিকে কষ্ট দেয় না (এই নারীর ব্যাপারে কি বলেন?)। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'সে জান্নাতি'। (সুবহানাল্লাহ!)

সুতরাং কারা প্রতিবেশি?
প্রত্যেক মানুষের বাড়ির আশ-পাশের লোকজনই প্রতিবেশি। কিন্তু পার্শ্ববর্তী কত বাড়ির লোকজন মানুষের প্রতিবেশি। এ সম্পর্কে ইমাম জুহরি রহমাতু্ল্লাহি আলাইহি বলেন-
'প্রতিবেশির পরিচয় দিতে গিয়ে ইমাম জুহরি রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন, নিজের ঘরের সামনে, পেছনে, ডান ও বাম দিকের ৪০ ঘর বা বাড়ি পর্যন্ত সবাই একে অপরের প্রতিবেশি হিসেবে বিবেচিত হবেন।‘

পরিশেষে প্রতিবেশির প্রতি বিশ্বনবির একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস তুলে ধরা জরুরি। যাতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ একট তথ্য তুলে ধরেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে ওমর ও হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জিবরিল আলাইহিস সালাম আমাকে সব সময় প্রতিবেশি সম্পর্কে অসিয়ত করতেন। এমনকি আমার মনে হল যে, তিনি প্রতিবেশিকে ওয়ারিশ বানিয়ে দেবেন।' (বুখারি, মুসলিম)

সুতরাং কোনো প্রতিবেশির প্রতি খারাপ আচরণ কিংবা ক্ষতি সাধন না করা ঈমানের অন্যতম মৌলিক বিষয়। মানুষের জন্য কল্যাণ ও মুক্তির সুমহান জীবন ব্যবস্থা ইসলামে এ প্রতিবেশির অধিকার ও মর্যাদা অনেক বেশি। প্রতিবেশির সন্তুষ্টিতে রয়েছে জান্নাতের ঘোষণা। আবার প্রতিবেশির অসন্তুষ্টিতে রয়েছে জাহান্নামের ঘোষণা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যার যার প্রতিবেশির প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব মানুষের সামনে তুলে ধরার তাওফিক দান করুন। প্রতিবেশির যথাযথ হক আদায় করে জান্নাতের সুনিশ্চিত ব্যবস্থা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।