হজের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ও হাজিদের প্রস্তুতি
হজে যাওয়ার সময় বয়ে যাচ্ছে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০২০ সাল তথা ১৪৪১ হিজরিতে হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সৌদি। স্বল্প পরিসরে সীমিত আয়োজনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার লোক নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র হজ।
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সৌদি আরবের নাগরিক এবং দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশিদের নিয়ে সীমিত পরিসরে পবিত্র হজ পালনের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির হজবিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ বেনতেন।
মঙ্গলবার সৌদির এই মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ বছর বিদেশ থেকে হজযাত্রীদের আগমন নিষিদ্ধ করা হবে। এছাড়া হজে কারা অংশ নিতে পারবেন সে ব্যাপারে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগ করা হবে।
আধুনিক যুগের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হজে বিদেশিরা অংশ নিতে পারছেন না। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সৌদির ক্ষমতাসীন রাজপরিবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। মোহাম্মদ বেনতেন বলেন, এ বছর ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বের কেউ হজে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
এবারের হজ
প্রতি বছরের এ সময়টিতে অর্থাৎ শাওয়াল মাসের ১৫ তারিখের পর সারাবিশ্ব হজ উপলক্ষে পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় জমায়েত হয় মুমিন মুসলমান। আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার আগে লোকে-লোকারণ্য হয়ে ওঠে এ পবত্রি দুই নগরী।
প্রতি বছরের পরিচিত রূপ এবার দেখা যাবে না। মদিনা জেয়ারতকারীদের মুখে এবার 'আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ'র সুর ও আওয়াজ শোনা না যাবে না।
পবিত্র নগরী মক্কার বাইতুল্লাহ চত্বরের এক অংশও পূর্ণ হবে না এবার। মুখরিত হয়ে উঠবে না 'লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ নামক স্বর্গীয় সুধার অপূর্ব ছন্দের আওয়াজ। তারপর কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে যারা হজের সৌভাগ্য লাভ করবেন।
সৌদি আরবে অবস্থানকারী অন্যান্য দেশের যারা হজ করবেন তাদের জন্য অন্যান্য বছরের হাজিদের ন্যায় আগাম প্রস্তুতি ও মহামারি করোনা প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা রাখা খুবই জরুরি। তাহলো-
- বৈধ অর্থের উৎস থেকেই হজের খরচের আঞ্জাম দেয়া।
- স্বাস্থ্যসম্মত ইহরামের কাপড় সংগ্রহ করা।
- টাকা-পয়সা ও জরুরি কাগজপত্র হজের নির্ধারিত সময়ে আগে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা।
- নিজ নিজ নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে দায়-দাবি মুক্ত হওয়া।
- নিজের কোনো ভবিষ্যৎ চিন্তা বা অসিয়ত থাকলে তা তৈরি করে রাখা।
- ঋণগ্রস্ত হলে হজের সফরের আগেই ঋণ পরিশোধ করা।
- দুনিয়াবি সব ধরনের লেনদেন ও সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া।
- হজের সময় পর্যন্ত সুস্থ থাকতে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইবাদত-বন্দেগির অনুশীলন বা চর্চা করা।
- নামাজ, ইহরাম, বাইতুল্লাহ তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া সাঈকালীন দোয়া ও তাসবিহগুলো শিখে নেয়া।
- গুরুত্বপূর্ণ আমল ও দোয়া এখন থেকেই শিখে নেয়া।
- হজের তলবিয়াহ সহিহ ও বিশুদ্ধভাবে মুখস্ত করে নেয়া।
মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় এবার হজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সে কারণে হজের আগেই সতর্কতা অবলম্বন এবং অনেক বিষয়গুলো ত্যাগ করা জরুরি। আর তাহলো-
- সব ধরনের মোহ, লোভ-লালসা ত্যাগ করা।
- সব ধরনের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা।
- হজের এ যাত্রাকে জীবনের শেষ যাত্রা মনে করে প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
- আভিজাত্য, পদমর্যাদা, গর্ব ও অহংকার ত্যাগ করা।
- তাড়াহুড়া ও উদাসিনতার ভাব ত্যাগ করা।
- দুনিয়াবি সব ধরনের অন্যায় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা।
মহামারি করোনায় যেসব সতর্কতা ও প্রস্তুতি জরুরি
- উন্নত মানের পর্যাপ্ত পরিমাণ মাস্ক সংগ্রহ রাখা।
- উন্নত মানের হ্যান্ডগ্লাভস।
- জায়নামাজ ও বিছানা চাদর।
- হ্যান্ড স্যানিটাইজার, স্প্রে, জীবাণুনাশকসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সামগ্রী।
- সৌদি আরব কর্তৃক ঘোষিত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সমাগ্রী সঙ্গে রাখার প্রস্তুতি থাকা।
উল্লেখ্য, সৌদির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সির প্রতিবেদন অনুযায়ী যথাযথ নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেহেতু স্বল্প পরিসরে সীমিতসংখ্যক দেশি ও দেশটিতে অবস্থানকারী বিদেশিরা হজ করার সুযোগ পাবেন। সেহেতু উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনেই সবার হজে অংশগ্রহণ করা ও সতর্ক থাকা জরুরি।
কারণ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, 'এখনও বিশ্বের কোথাও কার্যকরীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমিত মানুষের নিরাপত্তা ও প্রতিরোধের জন্য কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। সে কারণে যারা হজে অংশগ্রহণ করবেন তারা হজের এ সমাবেশে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হজ পালন করার সুযোগ পাবেন। এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
আল্লাহ তাআলা এবারের হজে অংশগ্রহণকারীদের নিরাপদে ও সুস্থভাবে হজ সম্পন্ন করার তাওফিক দান করুন। সবাইকে হজে মাবরুর দান করুন। তাদের হজের ওসিলায় সারাবিশ্বকে মহামারি করোনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস