যারা জাকাত গ্রহণ করতে পারবেন

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫২ পিএম, ১৬ মে ২০২০

সম্পদশালী বান্দার অন্যতম আর্থিক ফরজ ইবাদত হলো জাকাত আদায় করা। জাকাত নিজের খেয়াল-খুশি মতো পরিমাণ ও স্থানে দেয়া যাবে না। এর জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট পরিমাণ এবং সুনির্ধারিত খাত।

যে ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকবে, তাকে সে সম্পদের শতকরা আড়াই ভাগ জাকাত আদায় করতে হবে। জাকাতের নিসাব হলো সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা কিংবা এর সমপরিমাণ অর্থের মালিক হওয়া।

এটি মহান আল্লাহর বিধান। আল্লাহর বিধান মোতাবেক জাকাত আদায়কারীর জন্য রয়েছে অনেক উপকারিতা। জাকাতের খাত বর্ণনা করে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
'জাকাত হল কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন (নতুন মুসলিম) তাদের হক এবং তা দাস মুক্তির জন্যে, ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।' (সুরা তাওবা : আয়াত ৬০)

এ আয়াতে জাকাতের আটটি খাত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে এ খাতগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো :

- নিঃস্ব ফকির
ফকির বলা হয় যার কোনো সম্পদ নেই, নেই তার উপযোগী হালাল উপার্জন, যা দ্বারা তার প্রয়োজন পূরণ হতে পারে। যার খাওয়া-পরা ও থাকার স্থান নেই। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই। আবার কেউ বলেছেন, ফকির সে যার সামান্য সম্পদ আছে। তবে জীবন ধারণের জন্য অপরের ওপর নির্ভর করে।

আল্লামা তাবারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ফকিরের সংজ্ঞায় বলেন, ওই অভাবগ্রস্ত যে নিজেকে সর্বপ্রকার লাঞ্ছনা থেকে রক্ষা করে চলেছে, কারোর কাছেই কিছুর প্রার্থনা করে না।

- অভাবগ্রস্ত মিসকিন
মিসকিন বলা হয় যার এমন পরিমাণ সম্পদ আছে যা দ্বারা তার ওপর নির্ভরশীল লোকদের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট নয়। আল-ফাতওয়া আল-হিন্দিয়ায় এসেছে, মিসকিন এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যার কিছুই নেই, যে মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়ায় এবং খাদ্য-বস্ত্রের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়।

- জাকাত উঠানোর কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি
যারা জাকাত আদায়কারী, সংরক্ষণকারী, পাহারাদার, লেখক, হিসাবরক্ষক এবং তার বণ্টনকারী এদের সবাইকে জাকাতের ফান্ড থেকে বেতন দিতে হবে। তবে-
> তাকে মুসলিম হতে হবে,
> পূর্ণ বয়স্ক ও সুস্থ বিবেকসম্পন্ন হতে হবে,
> জাকাতের বিধান সম্পর্কে ইলম থাকতে হবে,
> আমানতদারি ও কাজের যথেষ্ট যোগ্যতা থাকতে হবে,
> স্বাধীন মুসলিম নিয়োগ করতে হবে, ক্রীতদাস নয়।

- যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন
ইসলামের প্রতি যাদের মন আকর্ষণ করা প্রয়োজন কিংবা ইসলামের ওপর তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য লোকদের জাকাতের খাত থেকে প্রদান করা। ইমাম যুহরির মতে, যে ইয়াহুদি বা খ্রিস্টান ইসলাম কবুল করবে, সে-ই এর মধ্যে গণ্য, সে যদি ধনী হয় তবুও।

- দাসমুক্তির জন্য
মালিককে অর্থ প্রদানের বিনিময়ে যে ক্রীতদাস তার মুক্তিলাভের জন্য চুক্তিবন্ধ হয়েছে। কিংবা কোনো মুসলিম যুদ্ধবন্দিও এ খাতের আওতায় পড়বে। ইবনুল আরাবির মতে, মুসলিম দাসকে যখন মুক্ত করতে জাকাতের খাত থেকে দেয়া যাবে, ঠিক তেমনি মুসলিম বন্দিকে কাফিরদের দাসত্ব শৃঙ্খলা ও লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত করার কাজেও জাকাতের অর্থ ব্যয় করা অধিক উত্তম বলে বিবেচিত হবে।

- ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি
এমন ঋণের ভারে জর্জরিত, যার ঋণ পরিশোধের কোনো অবস্থান নেই। এমন ব্যক্তিকে জাকাতের ফান্ড থেকে সাহায্য করা।

- আল্লাহর পথে খরচ করা
আল্লাহর পথ বলতে আকিদা বিশ্বাস ও কাজের দিক দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয় যে পথ।

- মুসাফিরদের জন্য
নিজ আবাসস্থলে সম্পদ আছে, এমন ব্যক্তি যদি সফরে গিয়ে বিপদগ্রস্ত ও নিঃস্ব হয়, তাকে জাকাতের তহবিল থেকে সাহায্য করা।

জাকাত আদায়ের উপকারিতা
আল্লাহ তাআলা যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক করেছেন তাদের জন্য জাকাত আদায়কে ফরজ করেছেন। আবার জাকাতের ফরজিয়ত আদায়ের মধ্যে আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য রেখেছেন অনেক উপকারিতা। আর তাহলো-

- জাকাত দেয়া ও নেয়ার উদ্দেশ্য সম্পদ জমা করা কিংবা গরিব অসহায়দের ওপর খরচ করাই নয়; বরং জাকাতের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হলো মানুষ যেন নিজেকে সম্পদের পাহাড় গড়া থেকে ঊর্ধ্বে রাখতে পারে। যাতে সে সম্পদের গোলামে পরিণত না হয়ে পবিত্র সম্পদের মালিক হয়। গরিব অসহায় ব্যক্তি জাকাত গ্রহণ করে সম্পদশালী ব্যক্তির সম্পদকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে।

- জাকাত যদিও বাহ্যিকভাবে সম্পদের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। প্রকৃত পক্ষে জাকাতের প্রভাবে সম্পদ বৃদ্ধি পায়, ধন-সম্পদে বরকত হাসিল হয়। জাকাত আদায়কারীর অন্তরে ঈমান বৃদ্ধি পায়। জাকাত আদায়কারীর চরিত্রিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।

- সম্পদের জাকাত আদায়ের মাধ্যমে নফসের ভালোবাসার জিনিসের চেয়েও ঊর্ধ্বে থেকে আল্লাহর ভালোবাসাকে প্রাধান্য দেয়া। আর আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ পরকালের সফলতা লাভ করতে পারে।

- জাকাত মানুষের পাপরাজিকে মিটিয়ে দেয়। আর তা জান্নাতে প্রবেশ এবং জাহান্নাম থেকে নিস্কৃতির কারণও বটে।

- আল্লাহ তা‘আলা জাকাতকে বিধি-বিধান করেছেন এবং তা আদায়ের প্রতি উৎসাহ দান করেছেন। কারণ জাকাত নফস বা আত্মাকে অর্থের কার্পণ্য ও স্বার্থ থেকে পবিত্র করে।

- এ জাকাত ধনী ও গরিবের মাঝের শক্তিশালী এক সেঁতুবন্ধন তৈরি করে। এর দ্বারা আত্মা পরিচ্ছন্নতা লাভ করে এবং অন্তরে প্রশান্তি আসে।

- জাকাত তার আদায়কারীর নেকি অধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দেয় এবং সম্পদকে দুনিয়ার যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করে। সম্পদ বৃদ্ধি হয়।

- আবার জাকাত গ্রহণকারী ফকির-মিসকিনদের অভাব পূরণ হয়। অর্থনীতিতে অপরাধ তথা চুরি, লুটপাট ও ডাকাতি-জবরদখল ইত্যাদি থেকে সমাজ রক্ষা পায়।

সম্পদশালী ব্যক্তির উচিত, গরিব অসহায়দের জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত জাকাত আদায় করা। যাতে রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ এবং কার্যকর হয় আল্লাহ তাআলার সুমহান বিধান।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নির্ধারিত বিধান মোতাবেক জাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।