জাকাতের যে বিষয়টি অনেকেই জানতে চান

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫১ পিএম, ১২ মে ২০২০

অনেকেই জাকাত সম্পর্কে একটি বিষয় জানতে চায়। আর তাহলো- কারো কাছে যদি জাকাত ফরজ হওয়ার মতো নিসাব পরিমাণ সম্পদ সাড়ে সাত তোলা বা ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ না থাকে কিংবা সাড়ে ৫২ তোলা রূপা না থাকে। অর্থাৎ স্বর্ণ ও রূপার পরিমাণ কম থাকে এবং নগদ অর্থও কম থাকে তবে তার ওপর জাকাত দেয়া আবশ্যক কিনা?

ধরা যাক- কারো কাছে ২/৩/৫ ভরি স্বর্ণ আছে আর ৫/৭/১০ ভরি রূপা আছে এবং নগদ ১০/২০/৫০ হাজার টাকা আছে। এ অবস্থায় ওই ব্যক্তির জন্য জাকাত দেয়া আবশ্যক কিনা? এ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাই বা কী? আসু-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সম্মানিত দাঈ শায়খ আহমাদুল্লাহ; তার এক বক্তব্যে এ সম্পর্কে সুন্দর বর্ণনা তুলে ধরেছেন। যা সবার জানা জরুরি। আর তাহলো-

সমাধান
স্বর্ণ- রূপা নেসাব পরিমাণ নয়, আলাদাভাবে টাকাও নেসাব পরিমাণ নয়, এ ক্ষেত্রে জাকাত দেয়া প্রসঙ্গে মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ প্রসিদ্ধ মুফতি ও ইমামগণ শর্তসাপেক্ষে জাকাত দেয়ার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। শর্ত হলো-

> স্বর্ণের সঙ্গে নগদ অর্থ যোগে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণের দাম হলে-
যদি উভয় সম্পদ (স্বর্ণ ও টাকা) একত্র করার পর নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ কিংবা রূপার যে কোনো একটার পরিমাণে গিয়ে দাঁড়ায় তবে ওই সম্পদের জাকাত দিতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যায়-

- 'যদি কারো কাছে ৫ ভরি স্বর্ণ থাকে আর নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা থাকে। তবে স্বর্ণের দামের সঙ্গে টাকা যোগ করে দেখা যে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের সমপরিমাণ টাকা হয় কিনা।

ধরা যাক, যদি ভরি প্রতি ৬০ হাজার করে ৫ ভরি স্বর্ণের দাম হয়- ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর নগদ দেড় লাখসহ মোট টাকা দাঁড়ায়- ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে ওই ব্যক্তিকে শতকরা আড়াই শতাংশ হারে জাকাত দিতে হবে। কারণ সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের দাম হয় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।'

> স্বর্ণের সঙ্গে নগদ অর্থ যোগে সাড়ে ৫২ তোলা রূপার দাম হলে-
- আর যদি কারো স্বর্ণ ও নগদ টাকা মিলে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের দাম না হয় তবে তাকে দেখতে হবে অন্তত সাড়ে ৫২ তোলা রূপার দাম হয় কিনা? হলে জাকাত দিতে হবে। আবার কারো যদি নিসাব পরিমাণ রূপার কম থাকে, সে রূপা ও নগদ টাকা মিলে অন্তত সাড়ে ৫২ তোলা রূপার দামও হয়, তবে তাকে জাকাত দিতে হবে।

ধরা যাক, কারো কাছে ২ ভরি স্বর্ণ আছে আর নগদ ১০ হাজার টাকা আছে। স্বর্ণের দাম ভরি প্রতি ৬০ হাজারে ১ লাখ ২০ হাজার আর নগদ মিলে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা হয়। আর তা দিয়ে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ কিনতে না পারলে দেখতে হবে সাড়ে ৫২ তোলা রূপা কেনা যায় কিনা? যদি তা দিয়ে সাড়ে ৫২ তোলা রূপা কেনা যায়, তবে তাকে এ টাকার আড়াই ভাগ জাকাত দিতে হবে। তোলা প্রতি ৬০০ টাকা করে সাড়ে ৫২ তোলা রূপার দাম দাঁড়ায় ৩১ হাজার ৫০০ টাকা।

আবার কারো কাছে যদি ৪০ তোলা রূপা থাকে আর নগদ ১০ হাজার টাকা থাকে তবে উভয়টি মিলে সাড়ে ৫২ তোলা রূপার সমমূল্য (৩১ হাজার ৫০০ টাকা) হয় তবে তাকেও জাকাত দিতে হবে।

> নগদ টাকার ক্ষেত্রে হলে
- কারো কাছে যদি শুধু টাকা থাকে। তবে তাকে দেখতে হবে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের সমপরিমাণ হয় কিনা? যদি (ভরি প্রতি ৬০ হাজার করে সাড়ে ৪ লাখ টাকার বেশি) হয় তবে তাকে শতকরা আড়াই টাকা হারে জাকাত দিতে হবে।

- কারো কাছে যদি শুধু ৫০ হাজার টাকাও থাকে। তবে দেখতে হবে তা দিয়ে সাড়ে ৫২ তোলা রূপা কেনা যায় কিনা? যদি কেনা যায় তবে তাকেও শতকরা আড়াই টাকা হারে জাকাত দিতে হবে।

> আবার কারো কাছে যদি নগদ অর্থ ছাড়া আলাদা আলাদা নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ বা রূপা না থাকে তবে তাকেও জাকাত দিতে হবে না।

উল্লেখ্য, দেশের এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের কাছে স্বর্ণ বা রূপা নিসাব পরিমাণ নাই, কিন্তু স্বর্ণ কিংবা রূপার নিসাব পরিমাণ অর্থ রয়েছে তাদের জন্য জাকাত আবশ্যক।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে জাকাত আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।